দিলরুবা নীলা
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১১:৫৪ এএম
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১২:২১ পিএম
অলংকরণ : জয়ন্ত সরকার
রাজুরা স্কুল থেকে পিকনিকে এসেছে, রায়েরকাঠি জমিদারবাড়িতে। ওরা বেশ আনন্দে আছে। সবাই মিলে রান্না করছে। জমিদারবাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখছে। কিন্তু রাজুর এসবে একটুও মন নেই। ও চুপচাপ বসে আছে পুরোনো আধাভাঙা একটা দেয়ালঘেঁষে। কীরে রাজু তুই এখানে বসে আছিস? আর আমরা তোকে খুঁজে হয়রান। অপু, দীপু, মন্টু সব এসে হাজির। তোরা যা আমি যাব না, ওসব রান্নাবান্না আমার ভালো লাগে না, রাজু জানায়। ওহ বুঝতে পেরেছি। তুই তো এখন গোয়েন্দা হয়ে গেছিস। তো গোয়েন্দাগিরি ছাড়া অন্য কিছু ভালো লাগার কথা নয় তোর। মন্টুর কথায় সবাই হো হো করে হেসে ওঠে। ওরা সবাই ক্লাস সিক্সে পড়ে। ইদানীং রাজু ডিটেকটিভ খুব গল্প পড়ছে। ইতোমধ্যে সে দুয়েকটা কেসের রহস্য উন্মোচনও করেছে ওর বন্ধুদের নিয়ে। কেস না থাকলে ওর ভালো লাগে না। বুঝতেই তো পারছিস। তাহলে বলিস কেন? রাজুর কণ্ঠে কপট রাগ। তো এখন তো হাতে কোনো কেস নেই, চল আমরা সবাই মিলে একটা ছবি তুলি। অপু রাজুকে টেনে দাঁড় করায়। দীপু ঝটপট করে কয়েকটা ছবি তুলে ফেলে।কই দেখি ছবিগুলো কেমন হয়েছে? রাজু দীপুর হাত থেকে ফোনটা নেয়। বাহ্ খুব সুন্দর তো! ছবি দেখে রাজুর মন ভালো হয়ে যায়। চল আজ আমি তোদের জুস খাওয়াব। সত্যি খাওয়াবি? কিন্তু এখানে জুস কোথায় পাব? রাজুর কথার পিঠে অপু বলে, আরে একটু সামনেই বড় দোকান আছে। ওখান গেলেই পাব। সবাই মিলে হাঁটতে থাকে। রাস্তায় বের হতেই একজন লোক। সে লিফলেট বিলি করতে করতে বলছে— পুরস্কার, পুরস্কার— সন্ধান দিলেই পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কার। লোকটি ওদের হাতেও কয়েকটা লিফলেট দেয়। ওরা পড়তে থাকে। লিফলেটের লেখাটা রাজু মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকে— পিরোজপুরে বেড়াতে আসা সুইডেনের পর্যটক টমাস সাহেবের পোষা কুকুর হারানো গিয়েছে। কেউ খুঁজে দিলেই পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কার মিলবে। লিফলেটের নিচের দিকে কুকুরের ছবিটাও দেওয়া আছে। দীপু তোর ফোনটা দে তো। রাজুর বাড়ানো হাতে দীপু ফোনটা দেয়। পেয়েছি। পেয়েছি। পেয়েছি। রাজুর চিৎকারে বন্ধুরা সব মোবাইল ফোনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। দেখে ওদের ছবির ভেতরে একটি কুকুরও আছে। লিফলেটের ভেতরের কুকুরের ছবিটার মতোই। সবাই দৌড়ে চলে যায় জমিদারবাড়িতে। সেখানে তন্ন তন্ন করে খুঁজে অবশেষে পেয়ে যায় কুকুরটি। লিফলেটে দেওয়া ফোন নম্বরে দীপুর ফোন থেকে টমাস সাহেবকে ফোন দেওয়া হয়। তিনি এসে তার কুকুরটা পেয়ে খুশিতে হিপহিপ হুররে বলে হাসতে থাকেন। আর কুকুর সন্ধান দলের নেতা রাজুর হাতে পঞ্চাশ হাজার টাকার বান্ডিল পারিশ্রমিক হিসেবে দিলেন। ওরা টাকাটা ওদের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের হাতে দেয়। রাজু বলল, স্যার, পরের বছরের পিকনিকের খরচ বাবদ এটা আমাদের পক্ষ থেকে জমা থাকল। পরদিন ভোরে দৈনিক পত্রিকায় রাজুর ছবিসহ খবর ছাপা হলো কিশোর গোয়েন্দা রাজুর কৃতিত্ব। অবশ্য, রাজুর সব বন্ধুর নামও ছেপেছে খবরে। এমন বড় খবর কী চাপা থাকে। ছড়িয়ে পড়ে সব ক্লাসে। পরে ডিটেকটিভ রাজুও তার বন্ধুদের নিয়ে প্রধান শিক্ষকও একটা ছবি তুললেন। সবাই খুব খুশি! এত খুশির মধ্যেই ডিডেকটিভ রাজু ভাবতে থাকে তার পরবর্তী গোয়েন্দা অভিযান কী হবে সেটা নিয়ে।