আরফাতুন নাবিলা
প্রকাশ : ০৯ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:১৪ পিএম
‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’Ñসন্ধ্যায় এ গান কানে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ঈদের আমেজ শুরু হয়ে যায়। ঘর গোছানো, খাবার তৈরি এমন বিভিন্ন কাজে ঘরের মেয়েরা বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এত কিছুর মাঝেও যে বিষয়টাতে সবার আলাদা নজর থাকে, সেটা হচ্ছে মেহেদি দেওয়া। সারা বছর বিভিন্ন উৎসবে যতই মেহেদি দেওয়া হোক না কেন, চাঁদরাতে মেহেদি দেওয়া মানে আলাদা এক উৎসবের আমেজ।
ঘরের সব মেয়ে একসঙ্গে বসে একে অন্যের হাতে মেহেদি লাগিয়ে দিচ্ছে, ছোট ভাইবোনেরা দৌড়াদৌড়ি করছে, কার মেহেদির রঙ কতটা ভালো হলো এ দৃশ্য সম্ভবত আপনজনদের জন্য সব আনন্দের দৃশ্যের একটি।
চাঁদরাতে মেহেদি লাগানোর প্রচলন প্রায় শত বছরের। এর অন্যতম কারণ ঈদের আগের রাতে মেহেদি লাগালে ঈদের দিন এর রঙ থাকে একদম গাঢ়। আগে গাছ থেকে পাতা ছিঁড়ে, বেটে হাতে লাগানো হতো। বর্তমানে এ ব্যস্ত জীবনে সে প্রথা কমে প্রচলিত হয়েছে টিউব মেহেদি। এ টিউবগুলো বাজারে কিনতে পাওয়া যায় প্রায় সব মার্কেটেই। এখন টিউব মেহেদিতে বেশ বৈচিত্র্য এসেছে। যেমন লাল, কালো ছাড়াও নানা রঙের গ্লিটার মেহেদিও পাওয়া যায়। বাজারে যেহেতু নানা ধরনের মেহেদি আছে, তাই কোনটি আসল ও কোনটি নকল তা বুঝে কিনতে হবে। নইলে ভালো রঙ আসবে না।
মেহেদি কেনার আগে
কেনার আগে অবশ্যই মেহেদির মোড়কে লেখা উপাদান ও ব্যবহারবিধি ভালো করে পড়ে নেবেন। যদি মনে কোনো ধরনের দ্বিধা থাকে, তাহলে সেটা কিনবেন না। খেয়াল করবেন মেয়াদ কত দিন আছে। যদি কোনো মোড়কে উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ দেওয়া না থাকে, সেগুলো কিনবেন না।
এখন অনেকেই অল্প সময়ে রঙ হওয়ার জন্য ইনস্ট্যান্ট কালার বা পাঁচ মিনিটেই রঙ হবে এমন মেহেদি কেনেন। এ ধরনের মেহেদি কেনা থেকেও বিরত থাকতে হবে। কারণ এগুলোয় প্রচুর কেমিক্যাল থাকে, যেগুলো থেকে ত্বকে র্যাশ, অ্যালার্জি হতে পারে, ত্বক বেশি সেনসিটিভ হলে চামড়া পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
কেমিক্যালযুক্ত মেহেদি ব্যবহারের বদলে অর্গানিক মেহেদি ব্যবহার করুন। এগুলোয় কোনো প্রিজারভেটিভ থাকে না। এতে ত্বকের ক্ষতিও হয় না। রঙও স্থায়ী হয়।
মেহেদির রঙ গাঢ় করতে
মেহেদি লাগানোর আগে অবশ্যই হাত আগে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নেবেন। মেহেদি দেওয়ার সময় কাপড় বা টিস্যু কাছে রাখুন, যেন অতিরিক্ত মেহেদি লেগে গেলে দ্রুত মুছে ফেলতে পারেন।
মেহেদি যখন কিছুটা শুকিয়ে আসবে তখন একটি পাত্রে সামান্য লেবুর রস ও চিনি মিশিয়ে তুলা দিয়ে রসটুকু হাতে লাগান। এটি রঙ গাঢ় করতে সাহায্য করে।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মেহেদি লাগানো ভালো। শুকিয়ে মেহেদি ঝরে গেলেও হাত ধোয়ার দরকার নেই। যত দেরিতে পানি লাগাবেন, রঙ তত গাঢ় হবে।
মেহেদি লাগানোর সঙ্গে সঙ্গেই রঙ চলে আসবে এ ধারণা একদম ভুল। বেশ খানিকটা সময় নিয়ে মেহেদি লাগাতে বসুন। মনে রাখবেন, গাঢ় রঙ পেতে অন্তত ৮-১০ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।
মেহেদি দেওয়ার আগে ওয়্যাক্সিং না করাই ভালো। এতে ত্বক বেশি মসৃণ হয়ে যায় বলে রঙ ভালোভাবে বসে না।
শিশুদের হাতে কখনও বাজারের কেনা মেহেদি লাগাবেন না। গাছের পাতা বেটে শিশুদের মেহেদি লাগিয়ে দিন।
মেহেদি লাগানোর আগে তেল হাতে লাগিয়ে নিতে পারেন।
বাজারে প্রচলিত টিউব মেহেদির চেয়ে মেয়েরা এখন অর্গানিক মেহেদি কিনতেই বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছে। অনেক অনলাইন পেজে নিজ হাতে তৈরি অর্গানিক মেহেদি বিক্রিও শুরু করেছে অনেকে। এগুলোর দাম তুলনামূলক কিছুটা বেশি হয়, যেহেতু প্রোডাকশন কম থাকে। অনলাইন বা অফলাইন যেটাই হোক, ত্বক ভালো রাখবে এবং রঙ গাঢ় হবে এমন মেহেদিই দেখে বুঝে কেনা উচিত।