× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঈদস্মৃতি

৭১-এর ঈদ

আমীরুল ইসলাম

প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ১২:১২ পিএম

আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ১২:৩৯ পিএম

প্রচ্ছদটি এঁকেছে অর্ণিলা ভৌমিক। সে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী

প্রচ্ছদটি এঁকেছে অর্ণিলা ভৌমিক। সে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী

আমার ছোটবেলার ঈদ ছিল খুবই আনন্দময় আর একই সঙ্গে বেদনামাখা। ১৯৭১ সালে আমি পড়ি ক্লাস থ্রিতে। তখন আমরা বাস করি লালবাগে। যুদ্ধ চলছে। খবর শুনছি-বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। যুদ্ধে পাকিস্তান পরাজিত হবে। নানা রকম খবর বাতাসে উড়ছে। ভারতের সঙ্গে এখন যুদ্ধ হবে। ভারত বিমান হামলা করবে। আমরা যুদ্ধে জিতে যাব। আমরা ছোটরা সব বুঝতে পারি না। কিছু বুঝি। কিছু বুঝি না। এরই মধ্যে এলো ঈদুল ফিতর। তখন হালকা শীত পড়েছে। মাসটা নভেম্বর। ঈদের ঝলমলে সকাল। গোসল করে ধোওয়া কাপড় পরলাম। নতুন কাপড় নয়। তখন ঈদে আমরা খুব কম সময় নতুন কাপড় পেতাম। বড় ভাইয়ের ছোট হয়ে যাওয়া শার্ট-প্যান্ট ছিল আমার সম্বল। সেটা পরেই আমি আনন্দে ঈদ আনন্দে মিশে যেতাম। আমলিগোলা বড় মসজিদের ঈদ জামাত তখন মসজিদ ছাড়িয়ে রাস্তায় নেমে আসত। আমার মনে আছে, সারি বেঁধে মানুষ নামাজ পড়ছে। সবাই একসঙ্গে সেজদায় যাচ্ছে। একসঙ্গে মোনাজাত ধরছে। একসঙ্গে আল্লাহু আকবার ধ্বনিতে আকাশ কেঁপে উঠছে। দূরে দাঁড়িয়ে আমি সেই দৃশ্য দেখছি। এটা আমার খুব মনে আছে, বাসায় মা ঈদের দিন বিশেষ রান্না করছেন। গরিব সংসার। বাবা সামান্য চাকরি করেন। টানাটানি করে আমাদের দিন চলে যায়। তবু ঈদের দিন বলে কথা। মা, সাদা পোলাও আর আলু দিয়ে গরুর মাংস রেঁধেছেন। দুধসেমাই আর গুড়ের ক্ষীর রেঁধেছেন। এই ক্ষীরে কুচি কুচি করে নারকেল দেওয়া হয়। ছোটবেলার সেই ক্ষীরের স্বাদ আজও ভুলিনি। আর খেতাম রাতে-সকালে বাসি পোলাও। খুব স্বাদ লাগত। ঘন ঝোল, মাংসের টুকরো আর আলুর ঝোল। পেট ভরে খেতাম।

ঈদের দিন বড়দের সালাম করার রেওয়াজ ছিল। সালাম করলে ‘ঈদি’ পাওয়া যেত। দুই-চার আনা দিতেন বড়রা। তাতে আমাদের মহা আনন্দ। ঈদের দিন কোনো ক্লান্তি ছিল না। সারা দিন এই গলি সেই গলি ঘুরে বেড়াতাম। কী আনন্দ যে লাগত। সবাই নতুন জামা-কাপড় পরা। সবাই দলবেঁধে ছুটছে। ৭১-এর ঈদে মনে আছেÑ দুপুরে চার আনা দিয়ে একটা কদবেল কিনেছিলাম। সেটা কাঠি দিয়ে দিনভর চুষে চুষে খেয়েছিলাম। যুদ্ধের সময় ঈদ। হয়তো সবাই ঈদের আনন্দে যোগ দিতে পারেনি। আমরা ছোটরা যুদ্ধের ভয়াবহতা বুঝতে পারিনি। তবে আমাদের আনন্দের কোনো ঘাটতি হয়নি। কোথাও বোমা পড়ছে। কোথাও মর্টার শেল। কোথাও গোলাগুলি। কোথাও স্টেনগানের ব্রাশফায়ার। কিন্তু আমাদের মতো ছোটদের আনন্দ কমেনি। আমরা বাসায় বাসায় ছোটরা ঈদ উদযাপন করেছি। 

দুই

ঈদের পরদিন। বাসার পাশে কামরাঙ্গীরচরের একটা মাঠে বসত ঈদের মেলা। নাগরদোলা ঘুরত ক্যাঁ ক্যাঁ করে। অনেক ধরনের খেলনা মাটির তৈরি জিনিসপত্র, বাসার কাজে লাগবে এমনসব জিনিস পাওয়া যেত। প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্র এসে তখনও প্রবেশ করেনি। 

কাগজ কেটে বানানো কুমির, মাটির তৈরি টমটম, ছোট ঢোল, ট্যাপা পুতুল, মাটির বাঘ- এসব কিনেছিলাম মনে আছে। কী যে আনন্দ ছিল! ব্যাগ ভরে মেলার জিনিস কিনে বাড়ি ফিরেছিলাম। সেই আনন্দ আজও ভুলিনি। চোখ বন্ধ করলে সব মনে পড়ে যায়। আহারে ছেলেবেলা!

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা