বাহের দেশের আদ্যোপান্ত
ইসতিয়াক আহমেদ
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৪ ১২:০০ পিএম
ছবি: লেখক
ঘোরাঘুরির এই মৌসুমে ঘুরে ঘুরে ঘোরাঘুরি করতে করতে যদি রংপুর চলে আসতে চান তবে আপনার জন্যই বলে রাখি রংপুরের নিক নেম-ই গ্রিনসিটি। সুতরাং প্রায় সব জায়গাতেই কিছু না কিছু ন্যাচারাল বিউটি খুঁজে পাবেন, সেই সঙ্গে পাবেন সমৃদ্ধ অতীতের খোঁজ।
শুরু করতে পারেন সিটি থেকেই, পাবেন শত বছরের পুরোনো টাউন হল ও জিলা পরিষদ, যেটি-ও একটি পুরোনো প্রাসাদ, যা বর্তমানে পাখির অভয়ারণ্য। শেষ বিকালে পাখি দেখতে আর তাদের কিচিরমিচির শুনতে ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকে। তারপর দেওয়ানবাড়ি নামের আরেকটা রাজবাড়ী পাবেন একদম সিটির মাঝেই। শহরের দুই কিলোমিটারের মাঝেই আছে চিকলির বিল। আছে কুকরুল বিল। আছে শত বছরের পুরোনো কারমাইকেল কলেজের ক্যাম্পাস।
প্রাসাদময় বিশাল ক্যাম্পাস ঘুরতে ঘুরতে যেখানে দেখতে পাবেন কাইজেলিয়াগাছ। যে গাছ পুরো এশিয়ায় আছে মাত্র পাঁচটি তার মাঝে কারমাইকেলে আছে দুটি। শহর থেকে কিছু দূরে বেগম রোকেয়ার বাড়ি। সেই সঙ্গে তার স্মৃতি কমপ্লেক্স ঘুরে দেখে শহরের সঙ্গেই গড়ে ওঠা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কাটাতে পারেন শেষ বিকাল। সেখানেও ন্যাচারাল বিউটি খুঁজে পাবেন। যেতে পারেন শহর থেকে ৩.৫ কিলোমিটার দূরে ঘাঘট নদীর তীরে। যেখানে রংপুর ক্যান্টনমেন্টের শেষ সীমানায় গড়ে ওঠা নতুন বিনোদন স্থান। পাশেই ঘাঘট নদীর ন্যাচারাল বিউটি। একটু কাছেই খুঁজে পাবেন বিখ্যাত শতরঞ্জি পল্লী। শহরের জিরো পয়েন্টের কাছেই আছে হযরত কেরামতিয়ার মাজার ও মসজিদ। যিনি ছিলেন হযরত শাহজালালের সমকক্ষের একজন ধর্মপ্রচারক। শহরের মাঝেই আছে রংপুর চিড়িয়াখানা। ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকেও। সময় থাকলে ট্রেনে করে ১৫ মিনিটেই চলে যেতে পারেন শ্যামপুর।
বিখ্যাত শ্যামপুর সুগার মিল দেখার সঙ্গে সঙ্গে নারিন্দের দিঘি। জমিদার খিতিশ বাবুর বাড়িসহ শ্যামপুর থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে গোপালপুর ফরেস্ট দেখে আসতে পারেন। শালগাছের বনে হারিয়ে যাওয়া, বনের মাঝের মেঠোপথ ধরে হেঁটে যাওয়ার অনুভূতি কী, তা না গেলে বুঝবেন না। আমের সিজেনে রংপুর এলে খেতে পারবেন। বর্তমান বাংলাদেশের সব থেকে বিখ্যাত, দামি ও কদরওয়ালা হাঁড়িভাঙা আম। যার সুনামের ধারের কাছেও রাজশাহীর আম নেই। কিংবা শেষ বিকালে শহর ছেড়ে ২৪ কিলোমিটার দূরে তিস্তা নদীতে চলে যেতে পারেন সূর্যাস্ত দেখতে।
শত শত বছরের পুরোনো রেলব্রিজে বসে নদীতে সূর্যাস্ত দেখতে পারেন। তারপর সন্ধ্যার আলোতে পাশের তিস্তা সড়ক সেতুর আলোতে ছবি তুলে ফিরতে পারেন শহরে কিংবা যেতে পারেন তাজহাট জমিদারবাড়ি। যা এখন রংপুর জাদুঘর। বিখ্যাত এই রাজবাড়ীর সঙ্গে মিল পাওয়া যায় ঢাকার আহসান মঞ্জিলের। থিম পার্কের মজা নিতে চলে যেতে পারেন শহর ছেড়ে ১৫ কিলোমিটার দূরের ভিন্ন জগতে যার সৌন্দর্য, ন্যাচারাল বিউটি এবং বিনোদনের ব্যবস্থা আপনাকে মুগ্ধ করবে। যেতে পারেন শহর ছেড়ে কিছু দূরে সদ্যপুস্কনি ইউনিয়নে। যেখানে আছে ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজির ভারতবর্ষ জয়ের সময় তাঁবু ফেলার স্থান। রংপুর সার্কিট হাউস বাংলাদেশের কিছু ব্যতিক্রম ঘটনার সাক্ষী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া একই সঙ্গে একই দিন দুজন এই সার্কিট হাউসে ছিল। তা ছাড়াও বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠক ঢাকার বাইরে প্রথম এই রংপুর সার্কিট হাউসেই হয়। ঘুরে আসতে পারেন শহরের ভেতরের জমিদারবাড়ি বাকালি হাউস থেকে, যে বাড়ির পুত্রবধূ প্রয়াত নজরুলসংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগম। শহরের ভেতরের ধাপে আছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। যদি চান নদীর চরে রাত কাটাতে তবে চলে যেতে পারেন শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে মহিপুরে। শিল্পনগরী দেখতে যেতে পারেন হারাগাছ। শুধু তাই নয়, আছে মিঠাপুকুরের তারকা মসজিদসহ অনেক মুঘল আমলের মসজিদ-মন্দির, পীরগঞ্জের আনন্দনগর, বদরগঞ্জের মায়ার ভুবন, পীরগঞ্জের রাবার বাগানসহ আর হাজারো দেখার জিনিস।
এবার বলি রংপুর আসবেন কীভাবে, থাকবেন কোথায়। রংপুরে বাস, ট্রেন প্লেন যেকোনোভাবেই আসতে পারেন। আগমনী, এসআর, টিআর, হানিফ, নাবিল পরিবহনের এসি, নন-এসি বাস দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই ছাড়ে ঢাকা, সিলেট, চিটাগং, খুলনা থেকে। আসতে পারেন ট্রেনেও, রংপুর এক্সপ্রেস ছাড়ে কমলাপুর থেকে। রংপুরে থাকার জন্য আছে ফাইভস্টার হোটেল গ্রান্ড প্যালেস, ফোরস্টার হোটেল নর্থ ভিউ, পর্যটন মোটেল, আরডিআরএসের মোটেল, বিজয় হোটেল, হোটেল গোল্ডেন টাওয়ারসহ আর অনেক। শহরের চারপাশে ঘোরার জন্য পাবেন রিকশা, অটোরিকশা, বাস, রেন্টে কার। তবে আর দেরি কেন? ঘুরে আসুন বাহের দেশ থেকে।
কারণ রংপুর হামার রঙে ভরারে, আরে ওকি বন্ধু আইসেন হামার বাড়ি। আয়ুস ধানের ভাত খেনামো, থাইকেন জনম ভরি, বিদেশি বন্ধুরে…
ছবি: লেখক