কুবি ফার্মেসি বিভাগ
আল মাসুম হোসেন
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪ ১৩:৫১ পিএম
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৪ ১৪:১৫ পিএম
প্রাণবন্ত আমেজ সৃষ্টি হয় শিক্ষার্থীদের মাঝে ছবি: লেখক
মায়া জুড়ানো, স্নিগ্ধতার পরশ ছোঁয়ানো ছোটবড় লালমাটির পাহাড় ও গাছপালার ছায়ায় ঘেরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)-এর ক্যাম্পাস। দক্ষ ফার্মাসিস্টের চাহিদা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়নে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান অনুষদের সর্বকনিষ্ঠ বিভাগ হিসেবে ২০১৩ সালে ফার্মেসি বিভাগের যাত্রা হয়। ফার্মেসি বিভাগে সব সময়ই পাঠদানের পাশাপাশি পাঠক্রমবহির্ভূত নানা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে বার্ষিক শিক্ষাসফর অন্যতম। একাধিক ভোটের ভিত্তিতে শিক্ষাসফরের স্থান নির্ধারিত হয় সুন্দরবন।
চাঁদা নির্ধারণ, ট্যুর এজেন্সি, গাড়ি ঠিক করাসহ সব কাজের মাধ্যমে বিভাগে ছোটবড় সবার মাঝে শিক্ষাসফরের আমেজ সৃষ্টি হয়। আমাদের ট্যুরের প্রতিনিধিত্ব করেছেন কাপসের বর্তমান সহসভাপতি ফাহমিদা জামান আপু। অনেক জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে হাজির হলো কাঙ্ক্ষিত সেই দিন। যেহেতু আমাদের খুলনা গিয়ে সকালবেলা জাহাজে উঠতে হবে তাই কুমিল্লা থেকে রাতে রওনার জন্য একে একে সব ভ্রমণপিপাসু কুবি প্রাঙ্গণে উপস্থিত হই। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন ফাস্ট এইড বক্স, বাদ্যযন্ত্র, ব্যানার ইত্যাদি নিয়ে উঠে বসি বাসে।
সুন্দরবন ভ্রমণের রুট পরিকল্পনা ছিল প্রথমে বাসে কুমিল্লা থেকে খুলনা পৌঁছানো, তারপর জাহাজে সুন্দরবনের উদ্দেশে রওনা। পরিকল্পনামাফিক ৭৫ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী দুটি বাসে ৪ মার্চ সোমবার রাত ১১টার দিকে খুলনার উদ্দেশে রওনা করি। খুলনা নদীবন্দরে পর দিন সকাল ৭টায় পৌঁছি। এর পরই শুরু হয় জাহাজে নিজ নিজ কেবিনে মালপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র তোলা। জাহাজে সবার লাগেজ ঠিকঠাকভাবে তুলতে তুলতে এক ঘণ্টা লেগে যায়। সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ সুন্দরবনের প্রথম স্পট বাগেরহাটের আন্ধারমানিকের উদ্দেশে যাত্রা করেন মোহাম্মদী-২ জাহাজের ক্যাপ্টেন। রূপসা নদীর বুক বেয়ে ভেসে চললাম আমরা পথে খানজাহান আলী সেতু, মোংলা সমুদ্রবন্দর অদূরের গ্রাম, সবুজ মাঠ, ক্ষেত দেখতে দেখতে। দুপুর ২টা নাগাদ জাহাজ পৌঁছে যাই আন্ধারমানিক। দুপুরের খাওয়া সেরে আমরা ছোট ইঞ্জিনচালিত বোটে আন্ধারমানিক গিয়ে পৌঁছাই।
শেলা নদী ও গুশনবাড়িয়া খালের ত্রিমোহনা, চারদিকে গভীর অরণ্য ও বন্য প্রাণীর সমাহার ৮০০ মিটার ব্রেইল মিলিয়ে সুন্দর পরিবেশ। মোটামুটি নয় ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রা শেষে রাত ১২টার দিকে জাহাজ নোঙর করে কটকা খালে। যাত্রাপথে গোধূলির সময় বনজঙ্গলের গা ছমছম করা নিস্তব্ধতা আমার কাছে বেশি উপভোগ্য ছিল। আর সন্ধ্যার পরই মানসুরা তালুকদার আপুর নেতৃত্বে শুরু হয়ে যায় প্রথম দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দ্বিতীয় দিন খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে ইঞ্জিনচালিত বোটের সাহায্যে কটকা খালের দক্ষিণ দিকে জামতলা খাল দিয়ে পৌঁছে যাই জামতলা বোট টার্মিনালে। এরপর জামতলা ফুট ট্রেইল ধরে হাঁটা শুরু হয় জামতলা সি বিচের দিকে।
এ ট্রেইল ধরে সামনে এগোলে চোখে পড়ে নতুন-পুরান দুটি ওয়াচ টাওয়ার, পশুপাখির জন্য সুপেয় পানির পুকুর, ছনবনে হরিণের চারণ, বানর ইত্যাদি জীবজন্তু। এখানে ঘোরা শেষে আবারও ফিরে আসি মোহাম্মদী-২-তে, পাক্কা পাঁচ ঘণ্টা পর জাহাজ কটকার থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে গিয়ে পৌঁছায় রাসমেলা ও শুঁটকিপল্লীর জন্য সুপরিচিত সুন্দরবনের দুবলার চর। আসলে কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝের দ্বীপ এ দুবলার চর।
শেষ দিনে ঘুম থেকে উঠে ছোট বোটে চলে যাই সর্বশেষ গন্তব্যস্থান করমজল পর্যটনকেন্দ্রে। পর্যটনকেন্দ্রের প্রথমেই রয়েছে সুন্দরবনের মানচিত্র, যা সুন্দরবন সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেয়। সামনে সিমেন্টে তৈরি আঁকাবাঁকা মাঙ্কি ট্রেইল নামে হাঁটাপথ ধরে এগিয়ে গেলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের সমৃদ্ধতা সম্পর্কে অনুমান করা যায়।