অরোরার মামা জাপান থেকে ফিরছেন। মামা অনেক দিন পর দেশে এলেন তাই ওর মনে খুশির অন্ত নেই। এ ছাড়া মা আজ বাসায় দারুণ সব খাবার রান্না করেছেন। তার ওপর অরোরার জন্য নিয়ে এসেছেন একগাদা উপহার। এনেছেন মিষ্টি একটি জাপানি পুতুল। অরোরার এ পুতুলটা ভারি পছন্দ হয়েছে। জাপানের ঐতিহ্যবাহী পোশাক লাল টুকটুকে কিমোনো পরা। চুলগুলো কী সুন্দর! এক হাতে আবার লাল রঙের একটা পাখাও আছে। অরোরা জাপানি পুতুলটা সঙ্গে নিয়ে ঘুমাতে গেল।
যেই না অরোরা পুতুলটা কাঁথার নিচে টেনে নিল, অমনি কে যেন বলে উঠল, ওঃ কী অসহ্য গরম রে বাবা। এ কোথায় নিয়ে এলো আমাকে? চমকে উঠল অরোরা। ঘরে তো সে ছাড়া কেউ নেই।
এবার আরও চমকাবার পালা। নিজের হাতের পাখাটা দিয়ে বাতাস করতে করতে পুতুলটা বলল, এই যে আমি, আমি বলছি। ফ্যানটা ছেড়ে দাও তো।
অরোরা যেন ভয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ফ্যানটা ছেড়ে এসে খাটের ওপর বসল সে। জাপানি পুতুলটা এখনও ওর হাতের পাখাটা দিয়ে বাতাস করে যাচ্ছে। অরোরা জিজ্ঞেস করল, তুমি কথা বলছ কীভাবে?
পুতুলটা এবার অরোরার দিকে ঘুরে বসল। তারপর বলল, আমার নাম মিকাকি। জাপানের ওসাকায় আমার বাড়ি। চিচি বলে এক কৃষকের মেয়ে আছে আমি তার খেলার সাথি। খপ করে তোমার মামা আমাকে নিয়ে এলো এখানে। কী বিপদ বলো তো! চিচি হয়তো আমাকে ছাড়া খুব কান্না করছে।
এতক্ষণে একটু একটু ভয় কাটতে শুরু করেছে অরোরার। মিকাকিকে এখন ওর ভালো লাগছে। ও চিচির কথা জানতে চাইল আরও।
মিকাকি জানাল চিচির শরীর ভালো নেই। ডাক্তার দেখাতেই টোকিও এসেছিল তারা। চিচি মিকাকিকে একটা ব্যাগে রেখে দিয়েছিল। সেই ব্যাগটা অরোরার মামার ব্যাগের সঙ্গে বদলে যায়। তারপর মিকাকি চলে আসে বাংলাদেশে।
চিচির কথা বলে কাঁদতে শুরু করে মিকাকি। কেঁদে কেঁদে বলে, আমি চিচির কাছে যাব।
অরোরার মন খারাপ হয়ে যায় মিকাকিকে কাঁদতে দেখে। মিকাকিকে খুব পছন্দ হয়েছিল তার। লাল টুকটুকে কিমোনো। কী সুন্দর চুল! তবু চিচির জন্য খারাপ লাগে অরোরার। আচ্ছা, চিচির তো শরীর ভালো নেই। মিকাকির সঙ্গে খেলতে না পেরে তারও কি মন খারাপ হচ্ছে?
অরোরা জিজ্ঞেস করে মিকাকিকে, তুমি কি যেতে চাও চিচির কাছে? কিন্তু কীভাবে যাবে?
মিকাকি বলে, তুমি যদি সত্যিই আমাকে ছেড়ে দাও, আর মন থেকে চিচির জন্য প্রার্থনা করো তাহলেই আমি ফিরে যেতে পারব চিচির কাছে।
অরোরা চিচির জন্য প্রার্থনা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম ভেঙে দেখে মিকাকি কোথাও নেই। সারা ঘর তন্ন তন্ন করে জাপানি পুতুলটা খোঁজে অরোরার মা। কিন্তু অরোরা তো জানে মিকাকি চলে গেছে তার নিজের দেশে। সে চলে গেছে তার বন্ধু চিচির কাছে।