সায়েকা আহমদ মাহি
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৪ ১১:৫২ এএম
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৪ ১২:১০ পিএম
গল্পের সঙ্গে সুন্দর ছবিটি এঁকেছে প্রযত রায়। সে মানিকগঞ্জ ৮৮ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী
আমার বাবা খুব ভোরে হাঁটতে বের হন। মাঝে মাঝে আমাকেও নিয়ে যান। কিছুদিন আগে আম্ফান ঝড় বয়ে গেছে। সেদিন রাতে খুব ঝড়বৃষ্টি হয়েছিল। ভোরে হাঁটতে বেরিয়ে দেখি রাস্তাঘাট দিয়ে তখনও বৃষ্টির পানি গড়িয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ আমার চোখে পড়ল রাস্তায় খুব ছোট্ট একটি পাখির ছানা পড়ে আছে। বাবাকে ওই ছানাটি দেখালাম। তিনি ছানাটির কাছে গিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে বললেন, ‘আহা, পাখির বাচ্চাটির এখনও চোখই ফোটেনি। রাতের ঝড়ে মারা গেছে।’ শুনে খুব কষ্ট পেলাম। পাখির ছানাটির মতো কত পশুপাখি যে এ ঝড়ে মারা গেছে! একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি আরেকটি পাখির ছানা। ভেবেছিলাম এটাও বোধহয় আগেরটির মতো। বাবা এ ছানাটিও নেড়েচেড়ে দেখে বললেন, ‘মাহি, ভাগ্য ভালো। এটি এখনও মরেনি।’ শুনে আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম। ছানাটি কচুপাতার ওপরে যত্ন করে তুলে বাসায় নিয়ে এলাম। বাবা মোবাইল ফোনে ছানা দুটির ছবি তুলে ফেললেন। জিজ্ঞেস করলাম, ‘এটা কোন পাখির ছানা বাবা?’ বাবা বললেন, ‘এটা শালিক পাখির। মনে হয় বাঁচবে না।’ বাবার কথার পরও ছানাটিকে কিছু খাওয়ানোর চেষ্টা করলাম। এখনও চোখ ফোটেনি। শুধু মুখ দিয়ে হাঁ করতে পারে। আমি দু-তিন দানা ভাত খাওয়ালাম। তারপর পাখিটি ঘুমিয়ে পড়ল। ঘণ্টাখানেক পর আমি আবারও পাখির কাছে গেলাম। ভেবেছিলাম মরে গেছে। কিন্তু না, তখনও বেঁচে আছে। আমি এবারও খাওয়ালাম। আম্মু বললেন, ‘পাখির এত ছোট ছানাকে বাঁচাতে পারবে না মা।’ আমাদের বাসায় কাজ করেন ধ্রুব চাচা। তিনিও বললেন, ‘আম্মু, এ বাচ্চাটি মরে যাবে।’ সবাই মরে যাওয়ার কথা বললেও আমি ভেবেছিলাম পাখির বাচ্চাটিকে বাঁচাতে পারব। কিন্তু আমার বাবা আমার এ প্রচেষ্টা দেখে বললেন, ‘মা, ঝড়ে ছানাটি আহত হয়েছে। অনেক দূর থেকে ছিটকে এসে রাস্তায় পড়েছে। বৃষ্টিতে ভিজেছে। বাঁচার কোনো আশাই নেই।’ বাবার কথায় মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল। তার পরও আমি পাখির ছানাটিকে বাঁচাবার জন্য সেবাযত্ন করতে থাকলাম। কিন্তু আমাকে হতাশ করে বিকালের দিকে পাখির ছানাটি মারাই গেল। এ অল্প সময়ের জন্য ছানাটি আমার হৃদয়ে জায়গা করে নিল। যদিও জানতাম পাখির ছানাটিকে বাঁচাতে পারব না। তার পরও আশা ছিল। পাখির ছানাটির মৃত্যুতে আমার খুব কান্না পেল। অবশেষে বাবা আর ধ্রুব চাচার সহযোগিতায় শালিক পাখির ছানাটিকে ছোট্ট একটি কবরে কবর দিলাম। পাখির ছানাটির জন্য আমার কয়েক দিন মনটা খুবই খারাপ ছিল।
অষ্টম শ্রেণি, বিএএফ শাহীন কলেজ,শমসেরনগর, মৌলভীবাজার