আরফাতুন নাবিলা
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৪ ১৮:৫৪ পিএম
ঈদে নতুন পোশাক কিনতে ভিড় জমেছে সব ব্র্যান্ডের দোকানে। ফ্যাশন হাউসগুলোও বর্ণিল নানা পোশাকের পসরা নিয়ে প্রস্তুত। ব্র্যান্ডের পোশাকগুলো নকশা, রঙ আর মোটিফের বাহারে এত সুন্দর ও আকর্ষণীয় যে চোখ ফেরানো যায় না। ইতোমধ্যে অনেকে ঈদের কেনাকাটা সেরে ফেলেছেন। আর যারা কিনবেন ভাবছেন তাদের জন্য আজকের বিশেষ প্রচ্ছদ। এবার ঈদের চলতি ট্রেন্ডের সঙ্গে ফ্যাশন হাউসের পোশাকগুলোয় কেমন নকশা, রঙ ও মোটিফ মিলছে দেখে নিন
নীলিমা আর নিশা দুজনই এবার ভেবে রেখেছেন একই ধরনের জামা কিনবেন। সদ্য কলেজে ভর্তি হওয়া দুই বান্ধবীর মাঝে বেশ মিল। দুজনই চিন্তা করেছেন একই জায়গা থেকে একই ধরনের পোশাক কিনবেন। কিন্তু মার্কেটে এবার কী পাওয়া যাচ্ছে বা ট্রেন্ডিং পোশাক কী, সে বিষয়ে তাদের তেমন জানা নেই। এ দুই বান্ধবীর মতো অনেকেই এখনও দ্বিধায় আছেন কাপড় কেনাকাটা নিয়ে। দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোর ঈদ আয়োজন নিয়ে বিস্তারিত থাকছে আজকের লেখায়।
এবারের ঈদবাজারের সবচেয়ে প্রধান বিষয় ক্রেতার আরাম। যেহেতু এবারের ঈদ বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুতে, তাই এ গরমে সব ব্র্যান্ডই আরাম ও স্বস্তিতে প্রাধান্য দিয়ে পোশাকের নকশা করেছে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা গেল সুতি থ্রি পিস, গাউন, কো অর্ড ড্রেস, কুর্তির সংখ্যাই বেশি। সিল্ক, অরগাঞ্জা, ভিসকস, মলমল কটনের পোশাক এবার স্থান পেয়েছে বেশি। শাড়ির দোকানগুলোয়ও এবার দেশি পণ্য অনেক বেশি। প্রতিবার যেখানে ইন্ডিয়ান বিভিন্ন নামের শাড়ি সবার ওপরে স্থান পেত, এখন সেখানে জায়গা করে নিয়েছে আমাদের দেশি তাঁত, সিল্ক, তন্তুজ। এসব শাড়িতে এমব্রয়ডারি, হাতে সুতার কাজ, ব্লক, স্ক্রিন প্রিন্টের পরিমাণই বেশি।
ফ্যাশন ব্র্যান্ড বিশ্বরঙ ঘুরে দেখা গেল তাদের পোশাকের ফেব্রিক হিসেবে রয়েছে সুতি, ধুপিয়ান সিল্ক, তসর সিল্ক, লিনেন, কাতান, জ্যাকার্ড কাপড়। রঙের ব্যবহারেও কনট্রাস্ট কালারের পাশাপাশি ম্যাচিউরড টোনের পরিমিত ব্যবহার বেশ চোখে পড়ার মতো। কাজের মাধ্যম হিসেবে রয়েছে স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক, ডিজিটাল প্রিন্ট, মেশিন এমব্রয়ডারি, কম্পিউটার এমব্রয়ডারি, হ্যান্ড এমব্রয়ডারি, কারচুপি, নকশিকাঁথা জারদৌসিসহ মিশ্র মাধ্যমের নিজস্ব বিভিন্ন কৌশল। বিশ্বরঙের স্বত্বাধিকারী বিপ্লব সাহা বলেন, ‘এবারের ঈদ পোশাকগুলো তৈরি করেছি আরামের ব্যাপারটা মাথায় রেখে। পোশাকের ফেব্রিক, নকশা করেছি এমনভাবে যাতে পরেও আরাম লাগে আবার দেখাবে আকর্ষণীয়।’
ফ্যাশন ব্র্যান্ড অঞ্জনস এবারও হাজির হয়েছে বর্ণিল ঈদ পোশাক নিয়ে। ঈদ উপলক্ষে এক্সক্লুসিভ শাড়িগুলোয় অলওভার এমব্রয়ডারি ও কারচুপি করা হয়েছে। রাজশাহী বলাকা সিল্ক, মসলিন, হাফসিল্ক, কটন সিল্ক, লিনেন কটন, টাঙ্গাইল কটন ও ভয়েল কাপড়ে শাড়িগুলোয় স্থান পেয়েছে ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট ও এমব্রয়ডারির কাজ। অঞ্জন’সের স্বত্বাধিকারী শাহিন আহমেদ বলেন, ‘ঈদের দিন থেকে শুরু করে ঈদের পরও নানা ধরনের অনুষ্ঠান থাকে। এমন দিনে পরার জন্য সবাই একটু নজরকাড়া পোশাক পছন্দ করে। সেই চিন্তা থেকেই এবার পোশাকে নানা ধরনের ভ্যালু অ্যাড করা হয়েছে; দেখতে যেমন সুন্দর পরতেও আরামদায়ক।’
কে ক্র্যাফট এবার বিশেষ নজর দিয়েছে বিভিন্ন মোটিফে। ফ্লোরাল, জিওমেট্রিক, মুঘল, কাশ্মিরি, ইউক্রেনিয়ান, বেলারুশ, ইজিপ্সিয়ানের বিভিন্ন মোটিফ অনুপ্রেরণায় এবারের সিরিজ পোশাক। এ ছাড়া ট্র্যাডিশনাল, ট্রাইবাল, ফোক, জামদানি, ওরিয়েন্টাল, আলাম, মিক্সডসহ নানা মোটিফ ফুটিয়ে তুলতে হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি, কারচুপি, স্ক্রিন ও ব্লক প্রিন্ট, সিকুইন ওয়ার্ক, ডিজিটাল প্রিন্ট ও টাই-ডাই মিডিয়ার ব্যবহার হয়েছে। মেয়েদের জন্য রয়েছে ট্র্যাডিশনাল, ক্লাসিক, এথনিক, রেট্রো, ফিউশন, ইয়ক বেইজড, লং প্যাটার্নসহ বিভিন্ন প্যাটার্নের পোশাক। মিলছে সালোয়ার-কামিজ, ডাবল লেয়ার্ড সালোয়ার-কামিজ, লং-কুর্তি, রেগুলার কুর্তি, টপস্, ডাবল লেয়ার্ড কুর্তি, টিউনিক, কাফতান, প্যান্টসহ টপস-স্কার্ট, টপস-পালাজো সেট ও বিভিন্ন প্যাটার্নের প্যান্ট। এ ছাড়া ঈদ সামনে রেখে কটন, সিল্ক, হাফ সিল্ক, মসলিন, খাদি মসলিন শাড়ির বৈচিত্র্যপূর্ণ ডিজাইনের একটি বড় আয়োজন থাকছে। নিজস্ব ডিজাইনের শাড়িতে বিশেষভাবে ট্র্যাডিশনাল, মানডালা, মুঘল, ফ্লোরাল, জামদানি, ওরিয়েন্টাল মিক্সড মোটিফের ব্যবহার, কালার কম্বিনেশন ও ভ্যালু অ্যাডিশনে নানা মিডিয়ার ব্যবহার সবার দৃষ্টি কাড়বে।
লা রিভ এবার বেশি কাজ করেছে ফিউশনে। ঈদের ক্যাজুয়াল ও সেমি এথনিক অনুষ্ঠানে পরার জন্য রয়েছে টিউনিক উইথ শ্রাগ, কামিজ, লং-স্লিভ শার্ট, লং-টিউনিক, বিজনেস ক্যাজুয়াল শার্ট। নতুন কালেকশন নিয়ে মন্নুজান নার্গিস বলেন, ‘সিল্ক ও মসলিনের যুগলবন্দি ঘটেছে এবারের কালেকশনে। ঈদের এ সময়টাতে থাকবে গ্রীষ্মের দাবদাহ। উৎসবের আমেজ ধরে রাখতে সিল্কের লাক্সারি ও গ্রীষ্মের প্রখর তেজ কমাতে ভিসকোসের কমফোর্ট ব্লেন্ড করা হয়েছে।’
ফ্যাশন ব্র্যান্ড রঙ বাংলাদেশ ঈদে এনেছে নানা থিমনির্ভর কালেকশন। এ বছরের মূল থিম ক্লাসিক্যাল ফোর এলিমেন্টস। আগুন, পানি, মাটি ও বাতাস; গ্রিক মিথোলজিমতে এ চার উপাদানে গঠিত হয়েছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। প্রতিটি উপাদানের রয়েছে আলাদা প্রতীক ও সত্তা। প্রকৃতিতে এসবের রঙও আলাদা। মাটি, আগুন, পানি ও বাতাসের নানান রূপ-বৈচিত্র্যের চমৎকার বিন্যাস ঘটানো হয়েছে এ আয়োজনের রঙ ও নকশায়। তাই প্রতিটি পোশাক হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয়, নান্দনিক, উৎসবমুখী। এ ছাড়া পাখির রঙ, আলপনা ও জিওমেট্রিক থিমে সামগ্রী তৈরি করা হয়েছে এবারের ঈদে। পোশাক নকশায় বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আবহ, সময়, প্রকৃতি, আবহাওয়া আর আন্তর্জাতিক ট্রেন্ডকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
পোশাকের নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নানা ভ্যালু অ্যাডেড মিডিয়ার ব্যবহারে। নানা আধুনিক ও ঐতিহ্যগত প্যাটার্নের কাট অ্যান্ড সুইং ছাড়াও রয়েছে স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি ও কারচুপি কাজের ব্যবহার। মিলছে মেয়েদের জন্য শাড়ি, থ্রি পিস, সিঙ্গেল কামিজ, কুর্তি, টিউনিক, টপস, ওড়না, রেডি ব্লাউজ, ব্লাউজপিস, আনস্টিচড থ্রি পিস, গাউন ইত্যাদি।