× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক

বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্যে

জাহিদ হাসান রবিন

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪ ১২:৪১ পিএম

বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্যে

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক বন্যপ্রেমীদের জন্য এক রোমাঞ্চকর ভ্রমণ গন্তব্য, যেখানে তারা সহজেই দেখতে পারবেন গন্ডার, সিংহ, হাতি, মহিষ ও লোপার্ডকে (বিগ ফাইভ) একেবারে তাদের নিজস্ব পরিবেশে। চাইলে হাতির পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন সেখানে। ঘুরে এসে লিখেছেন জাহিদ হাসান রবিন

দক্ষিণ আফ্রিকায় জোহানেসবার্গে এক রাত থাকার পরই এক ঘণ্টার ফ্লাইটে HOEDSPRUIT এয়ারপোর্ট। এখানেই আফ্রিকার বিখ্যাত ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক। থাকা ও সাফারি উপভোগ করার জন্য অনেক ধরনের উপায় থাকলেও আমরা ঠিক করলাম সবচেয়ে ভালো অভিজ্ঞতা নিতে।

ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম প্রাকৃতিক সুরক্ষিত এলাকা। জাতীয় উদ্যানটি ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণে, দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত। পার্কটি দেশটির রাষ্ট্রপতি পল ক্রুগারের নাম বহন করে, যিনি বোয়ার্সের অধিকার এবং ট্রান্সভালের সার্বভৌমত্বের জন্য লড়াই করেছিলেন। পার্কের মোট এলাকা ১৮ হাজার ৯৮৯ বর্গমিটার।

ক্রুগার পার্ক লিম্পোপো এবং কুমির নদীর মধ্যে অবস্থিত। পার্ক এলাকার পূর্ব সীমানা মোজাম্বিকের সীমান্ত বরাবর চলে। পার্কের ভেতরে ৩ ভাগে বিভক্ত- উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ। ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক হলো গ্রেটার লিম্পোপো ট্রান্সবাউন্ডারি ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভের অংশ, এতে মোজাম্বিক ও জিম্বাবুয়ের সংরক্ষিত এলাকাও রয়েছে।

উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ

প্রাকৃতিক পার্থক্য অনুসারে, পার্কটিকে পাঁচটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। পার্কের কেন্দ্রীয় অংশটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বন্য প্রাণীর ঘনত্বের অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত। জলহস্তী এবং নীল কুমির নদীতে বাস করে।সাভানাতে ১৭ প্রজাতির হরিণ, জিরাফ, জেব্রা, চিতা, শিয়াল, বড় কানের শিয়াল রয়েছে। প্রাইমেটদের মধ্যে রয়েছে সবুজ বানর ও বেবুন।

পার্কের তথ্যানুসারে এখানে ১২ হাজার হাতি, ৫ হাজার গন্ডার, ১৫ হাজার সিংহ, ১ হাজার চিতাবাঘ, ২ হাজার ৫০০ মহিষ। এই অঞ্চলটি ৫১ প্রজাতির সাপের আবাসস্থল, যার মধ্যে রয়েছে গাছের অজগর, যা মানুষের জন্য খুবই বিপজ্জনক, থুতু ফেলা কোবরা, ব্ল্যাক মাম্বা। ক্রুগার পার্কে ৪০০টিরও বেশি প্রজাতির পাখি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ঈগল, শকুন, গিনি ফাউল এবং টোকোর মতো বিদেশি পাখি।

আফ্রিকা মহাদেশের বন্য বাসিন্দাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি পার্কে আপনি এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন। যেমন রয়েছেÑবুশমেন উপজাতির রক পেইন্টিং, লৌহ যুগের সাইট, হাতি জাদুঘর, স্টিভেনশন-হ্যামিলটন মেমোরিয়াল লাইব্রেরি।

জানা যায় বছর ৬ আগে ক্রুগার জাতীয় উদ্যানে সিংহ শিকার করতে গিয়েছিলেন এক শিকারি। কিন্তু শিকার করতে গিয়ে সিংহের পেটে চলে গেলেন ওই শিকারি। দেশটির ক্রুগার জাতীয় উদ্যানের সম্মুখে একটি পার্কের মধ্যে ওই শিকারির লাশের সন্ধান মিলে। এই অঞ্চলে ক্রমশ শিকারির সমস্যা বাড়ছিল। সিংহদের শরীরে কোনোভাবে বিষ প্রয়োগ করে তাদের মেরে ফেলা হচ্ছিল। সিংহের পাশাপাশি শিকার করা হচ্ছিল গন্ডারদেরও। 

দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত ক্রুগার জাতীয় উদ্যানের প্রায় ১৯ হাজার ৬৩৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই অভয়ারণ্য অত্যন্ত গভীর। সিংহ, লেপার্ড, গন্ডার, হাতি, বুনো মহিষ ছাড়াও গভীর অরণ্যে বিভিন্ন প্রাণী এখানে বসবাস করে। জঙ্গলের ভেতরে পর্যটকদের জন্য রয়েছে ২১টি রেস্ট ক্যাম্প, দুটি প্রাইভেট লজ এবং ১৫টি প্রাইভেট সাফারি লজ। কম থেকে শুরু করে বিলাসবহুল সব ধরনের বাজেটের ক্যাম্পই পেয়ে যাবেন এখানে।

আফ্রিকা মহাদেশের বন্য প্রাণীর সাফারি পরিচালিত হয় মূলত সরকার ঘোষিত প্রাকৃতিক বন বা বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্যে। সেখানে বন্য প্রাণীরা তাদের আরণ্য জীবনযাত্রা রুটিন অব্যাহত রাখে। তাদের আরণ্যক পরিবেশে দেখার জন্য বনের ভেতরে প্রকৃতিকে বিঘ্নিত না করে পরিবেশের সঙ্গে মিল রেখে ভ্রমণেচ্ছুদের জন্য বিশেষ ধরনের তাঁবুঘর বা ইকো কটেজ তৈরি করা হয়।

ভ্রমণেচ্ছুদের বিশেষভাবে তৈরি যানে করে অভয়ারণ্যের বিশেষ এলাকা দিয়ে পরিচালিত ট্রেইল ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে পাকা রাস্তা বা দালান তৈরি করা হয় না। গাড়িতে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত পরিচালক বা গাইড থাকে। তারা ধারা বর্ণনা যেমন দেন, তেমনই লক্ষ রাখেন, যাতে বন্য প্রাণীদের জীবনযাত্রায় কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। আফ্রিকার প্রাকৃতিক সাফারি পার্কে দর্শকের কাছাকাছি আনার জন্য কোনো প্রাণীকে খাবার দেওয়া যায় না। সরকারি জমিতে গড়ে ওঠা এসব সাফারি পার্কে কোনো ভিনদেশি প্রাণীও রাখা হয় না। সাফারির মূল কথা হলো বন্য প্রাণীরা নিজের ভুবনে আপন মনে ঘুরে বেড়াবে। তারা হবে স্বাধীন। দর্শক থাকবে খাঁচাসদৃশ গাড়িতে বন্দি! এটি চিড়িয়াখানা ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত।

সেতুর ওপরে দাঁড়িয়ে আছে একটি ট্রেন। তবে এই ট্রেন ছন্দময় শব্দ তুলে ছুটে চলে না। তাই বলে এর আকর্ষণ কম নয়। একে রূপান্তর করা হয়েছে বিলাসবহুল এক হোটেলে, যেখানে আরামদায়ক পরিবেশে সময় কাটানোর পাশাপাশি দেখার সুযোগ মিলবে সবুজ বনানী আর নানা ধরনের বন্য প্রাণী। এমন আশ্চর্য অভিজ্ঞতা পেতে আপনাকে যেতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কে। আজব এই ট্রেন হোটেলের নাম ক্রুগার শালাতি। সেতুর ওপরে ট্রেনের ২৪টি বগিকে পর্যটকদের জন্য রূপান্তর করা হয়েছে চমৎকার ২৪টি স্যুইটে। একটা সময় ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক ভ্রমণে চমৎকার একটি ট্রেনযাত্রার সুযোগ ছিল। অবশ্য সেটা কয়েক দশক আগের গল্প। দক্ষিণ আফ্রিকা-মোজাম্বিক সীমান্তের কোমাটিপুর থেকে চলা শুরু করে ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কের মরুভূমি ও অরণ্যের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেত ট্রেন। যাত্রা শেষ হতো জাতীয় উদ্যানের বাইরে অবস্থিত বেশ বড় শহর জানিনে গিয়ে। পথে ট্রেনটি সাবি নদীর ওপর রেলওয়ে সেতুতে থামত, যেখানে অতিথিরা নেমে পড়তেন। তারপর সশস্ত্র পার্ক রেঞ্জাররা বন্য প্রাণী দেখাতে নিয়ে যেতেন জঙ্গলে। ওই রেল ট্র্যাকের জায়গায় এখন শোভা পাচ্ছে সড়কপথ।

ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জনপ্রিয় ‘রাউন্ড ইন নাইন’ ট্যুর নামে পরিচিত ভ্রমণটিও তার শেষ দেখে। তবে ওই ব্যবস্থা না থাকলেও থেবে ট্যুরিজম গ্রুপের এক উদ্যোগে একটু অন্য ধরনের রোমাঞ্চ উপভোগের সুযোগ হয় পর্যটকদের। একটি ট্রেনকে রূপান্তর করা হয়েছে বিলাসবহুল হোটেলে, যার উদ্বোধন হয় ২০২০ সালে। সাবি নদীর ওই রেল সেতুর ওপরই বসানো হয়েছে ট্রেন হোটেলটি। এখনকার সুসজ্জিত ও বিলাসবহুল কামরাগুলো থেকেই আপনি উপভোগ করতে পারবেন চারপাশের দৃশ্য।

শুধু তাই নয়, ওই রেল সেতুর ওপর নদীর দিকে মুখ করে থাকা একটি চমৎকার সুইমিংপুলও আছে। ক্রুগার শালাতি ‘ট্রেন অন দ্য ব্রিজ’ নামেও পরিচিত। এটি ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক এবং সম্ভবত সমগ্র দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বিচিত্র হোটেল। এর মাধ্যমে এই রেলপথে পর্যটকদের যে আকর্ষণীয় ভ্রমণ ছিল, ঠিক সেটা হয়তো ফিরিয়ে আনা যায়নি, তবে কোনো কোনো দিক থেকে এই ট্রেন হোটেল সেটাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এখানে সময় কাটানো মানেই অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা। সরাসরি হাতি, জলহস্তী এবং ক্রুগার জাতীয় উদ্যানের বিস্তৃত ঝোপ-জঙ্গল দেখতে পাবেন। বন্য প্রাণীতে ভরপুর অরণ্যের ঠিক ওপরে ঘুমানো কিংবা সাঁতার কাটার রোমাঞ্চেরও কোনো তুলনা নেই। 

ক্রুগার শালাতি অতিথিদের জন্য গাইড ও প্রহরীসহ চমৎকার একটি অরণ্য ভ্রমণের ব্যবস্থাও করে। এই ভ্রমণে হয়তো শাবকসহ হায়েনাদের দেখা পেয়ে যাবেন কিংবা বিশ্রাম নিতে দেখবেন সিংহের কোনো দলকে। বুনো হাতি এত বেশি সংখ্যায় আছে যে, একাকী মদ্দা হাতি থেকে শুরু করে বাচ্চাসহ হাতির পাল— সবকিছুরই দেখা পাবেন। বলা যায় না, বুনো কুকুরের দল কিংবা অসাধারণ সুন্দর প্রাণী চিতাবাঘের সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়ে যেতে পারে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা