× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রূপের রাজ্য রাঙামাটি ঘুরে

রাসেল হোসেন সাকিব

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪ ১২:২৫ পিএম

হ্রদের অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য

হ্রদের অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য

দিগন্তছোঁয়া বিস্তীর্ণ অপরূপ নীল আকাশ, সবুজেঘেরা চারপাশে উঁচু-নিচু পাহাড় ও এঁকেবেঁকে চলা নীল জলরাশির লেক। বিন্যস্ত পাহাড়ের তীরঘেঁষে বর্ণিল রঙের টিনের ছাউনির অপূর্ব রেস্টুরেন্টের দৃশ্য দেখতে দেখতে বোট ছুটে চলছে কাপ্তাই লেকের বুকের ওপর দিয়ে সাংপাং দ্বীপের দিকে। এমন অপরূপ রূপের রাজ্যে কল্পনা করলে রাঙামাটির কাপ্তাই লেকের কথাই আমাদের প্রথম স্মরণে আসে।

লেকের দর্শনার্থীদের কাছে মনে হতে পারে এ যেন কোনো শিল্পীর রঙতুলির পরম যত্নে আঁকা ক্যানভাস। এই সৌন্দর্যের লীলাভূমিকে স্বচক্ষে দেখার নিমিত্তে রওনা দিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা একঝাঁক ভ্রমণপিপাসু। 

দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার, এই বছরের ফেব্রুয়ারির ২৯ তারিখ। লিপ ইয়ারের মতো একটি স্মরণীয় তারিখকে অবিস্মরণীয় করে রাখতে আমরা একঝাঁক ভ্রমণপিপাসু বেশ উচ্ছ্বসিত। লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রকল্যাণ সংগঠন, চবি থেকে এক দিনের রাঙামাটির ট্যুরের আয়োজন করা হয়। সূর্য পূর্বদিকে ভেসে ওঠার শুভ মুহূর্তে দুটি বাস হাজির হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটসংলগ্ন জিরো পয়েন্ট চত্বরে। 

হালকা শীতের সকালে রাঙামাটির ঘাঘরার আঁকাবাঁকা ও উঁচু-নিচু রাস্তা দিয়ে বাস ছুটে চলল সগৌরবে। প্রথমে আমাদের গন্তব্যস্থল হলো কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনীতে আবদ্ধ আরণ্যক। এখানে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য। জনপ্রতি ৪০ টাকার বিনিময়ে আরণ্যকে প্রবেশ করলাম। আমরা অনেকক্ষণ লেকের পাশে বসে লেকের স্বচ্ছ জলের মৃদু তরঙ্গ অনুধাবণ করলাম। যে যার মতো ঘাসের ওপর, বেলকনিতে কিংবা ব্রিজের ওপর বসে পরিবেশ উপভোগ করলাম। ভেতরে নিরাপত্তার দায়িত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এই আরণ্যক সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলাম। সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা আরণ্যের ইতিহাস তুলে ধরলেন। রাঙামাটির অন্যতম সৌন্দর্য বেষ্টন করে রেখেছে দেশের সর্ববৃহৎ হ্রদ কাপ্তাই।

আমরা কাপ্তাই লেকে যাব রিজার্ভ বাজার হয়ে। রিজার্ভ বাজার থেকে এসে আমরা বোটে উঠি। বোটটি সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের কাপ্তাই হ্রদের আশপাশ ঘুরে দেখানোর কথা ছিল। বোটে উঠে সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে নিই। সবাই এক যোগে রওনা হলাম হ্রদের দিকে। বিকালে সূর্যমামা যখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ে তখনই কাপ্তাই হ্রদের চিরযৌবন দেখা যায়, অনুধাবন করা যায় এই হ্রদের পরম গুরুত্ব। এর সঙ্গে যোগ হলো তরঙ্গের অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য। একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষকে নিঃসন্দেহে বিকালের কাপ্তাইয়ের দৃশ্য মনকে পরিতোষ দেবে আর চোখকে দেবে গভীর তৃষ্ণা। দিগন্তবিস্তৃত পথ পাড়ি দিয়ে বোট চলছে তার গতিতে। মাঝে দিয়ে সাংপাং নামক পাহাড়ের ওপরে রেস্টুরেন্টে গিয়ে কিছু খেয়ে নিই এবং ছোট্ট জায়গাটির ওপরে চাকমা উপজাতির তৈরি করা জামাকাপড় দেখি।

কাপ্তাই হ্রদের দৃশ্য অবলোকন করতে করতে জানতে পারি পাশে অবস্থিত পলওয়েল পার্কের লোমহর্ষক কাহিনী। দুই বিদেশি দম্পতি এই হ্রদে ডুবে মারা যায় এবং তাদের ভালোবাসার স্মৃতিচারণায় পলওয়েল পার্কে লাভ পয়েন্ট বানানো হয়েছে, লোকমুখে এ কথা শুনি। আরও জানতে পারলাম এখানে অবস্থিত রাজপ্রাসাদটি সম্পর্কে। আমরা যখন পলওয়েল পার্কে এলাম দিগন্তে সূর্যমামার মৃদু রক্তিম আভা দেখা দিল। কিছুক্ষণ এই পার্কে যে যার মতো করে ঘুরাফেরা করার পর পরবর্তী গন্তব্যের দিকে রওনা দিলাম।

পলওয়েল পার্ক থেকে ঝুলন্ত ব্রিজে যেতে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় লাগে। এই ১০ মিনিটে আমরা গানের তালে হইহুল্লোড়ে মেতে ওঠার সুযোগ পেলাম। সুযোগের সদ্ব্যবহারও করলাম বটে। ঝুলন্ত ব্রিজে টাকা দিয়ে ওঠার পর ছবি তুললাম। একে একে ফ্রেমবন্দি করে রাখলাম স্মৃতির পাতায়। পাহাড়ের ওপরে অবস্থিত পাশে বাজারে গিয়ে দেখি চাকমা মেয়েরা আনারস ও তেঁতুল বিক্রি করছে। এখানে আনারস কম দামে পাওয়া যায়। বন্ধুরাসহ আনারস খেয়ে অনুধাবন করলাম এই জেলার মাটি কতটা উর্বর। 

পশ্চিম আকাশে ইতোমধ্যে সূর্যমামা ডুব দিয়েছে। অন্ধকার নেমে এসেছে এই পুরীতে। জানান দিল আমাদের ফেরার সময় হয়েছে। তার আগে যে দিনের অন্যতম চমকপ্রদ কিছু এখনও বাকি। সর্বশেষ চমকপ্রদ হিসেবে থাকল লটারি। যেখানে লটারি বিজয়ীদের দেওয়া হবে বিভিন্ন কালজয়ী বই। বইয়ের মলাটে থাকবে ইতিহাসের সেরা লেখকদের সেরা লেখনী। একে একে কালজয়ী উপন্যাসের বইগুলো লটারি বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হলো।

সন্ধ্যার নাশতা শেষে সারা দিনের এক রাশ ক্লান্তি ও অভিজ্ঞতা মিশ্রণ আনন্দ নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। সবাই গাড়িতে আসা নিশ্চিত করে গাড়ি যাত্রা শুরু করল। এভাবে এক ভ্রমণপিপাসু অভিযাত্রী হয়ে, নানাবিধ অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এলাম রূপের রাজ্য রাঙামাটি ঘুরে।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সরাসরি বাস ধরে যেতে পারেন কাপ্তাই লেকে। সায়েদাবাদ কিংবা কমলাপুর থেকে বাস ধরতে হবে। তাছাড়া চাইলে চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট থেকেও যেতে পারেন কাপ্তাই। এই বাসগুলোতে যেতে চাইলে ভাড়া হবে ৭০-১২০ টাকা। ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেন ধরতে হবে। তারপর  চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট বাসস্ট্যান্ডে নেমে বাস ধরে সরাসরি কাপ্তাই লেকে পৌঁছে যাবেন।  


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা