ইয়ালিনা তাসিফা
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৪ ১৩:২৫ পিএম
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৪ ১৩:৩২ পিএম
প্রচ্ছদটি এঁকেছে ইমরুল কায়েস রাফসান। সে ঢাকার এস ও এস হারম্যান মেইনার কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীই
রঞ্জু ও মামুনের বাড়ি শিমুলডাঙ্গা গ্রামে। তারা দুজনে খুব ভালো বন্ধু। একসঙ্গে ওরা স্কুলে যায়। ছোট থেকে তাদের খেলাধুলার সুনাম। সবকিছুই চলছিল ঠিকঠাক। তারা যখন সপ্তম শ্রেণিতে ওঠে, তখনই যুদ্ধশুরু হয়ে গেল। চারদিকে যুদ্ধের ধামামা বাজতে শুরু করল। বড়রা সবসময় দেশ নিয়ে মাথা ঘামাতে লাগলেন। তাদের আলোচনায় রঞ্জু চুপিচুপি অংশ নিত। একদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে কানাই দাদার চায়ের দোকানে থামল তারা! সেখানে অনেক মানুষের ভিড়। সবাই রেডিওতে খবর শুনছেন। লোকজন কী নিয়ে যেন বলাবলি করছে। একটু দূরে মামুন ও রঞ্জু দাঁড়াল। অপেক্ষায় আছে কখন ভিড়টা কমে। একটু ফাঁকা হওয়ার পর দুজনে সেখানে গেল। কানাই দাদা ওদের দেখেই বললেন, কী পোলাপান পড়ালেখা কেমন চলে? ভালো মতো পড়ছ তো? কানাই দাদা আগে লেখাপড়ার খবর নেন। তারপর বলেন, বুঝলে পড়ালেখা করে যে গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে! আজকেও বললেন! রঞ্জু তারপর তাকে জিজ্ঞেস করল, কী নিয়ে কথা হচ্ছে কানাই দাদা? কানাই দাদা তখন বললেন, দেশের অবস্থা তো ভালো না। দেশের পরিস্থিতি ভালো না। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষাণা শোনো নাই। রঞ্জু মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ শুনেছি। কানাই দাদা এবার বলা শুরু করলেন, বঙ্গবন্ধু যা বলার বলে দিয়েছেন। এখন সহজে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। আর অত্যাচার মেনে নেওয়া যাবে না। আমরাও প্রস্তুত আছি। কানাই দাদার কথা শুনে দুজনের শরীরে রক্ত টগবগিয়ে উঠতে থাকে। রঞ্জু বলল, দাদা শুনতেছি ট্রেনিং দেওয়ার জন্য নাকি নাম লেখানো হচ্ছে। এবার কানাই দাদা মুচকি হেসে বলেন, ঠিকই শুনেছ। তা তোমরা জানলে কার কাছে? রঞ্জু উত্তর দেয়, লোকমুখে। দাদা বলেন, ওহ। তা তোমাদের চা দেব? মামুন বলে, হ্যাঁ। ওদের দুজনকে হাফ গ্লাস ফ্রি চা দিলেন। দুজন খেয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল।
এর ঠিক তিন দিন পর জানা গেল ঢাকায় গোলাগুলি শুরু হয়ে গেছে। পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে আক্রমণ শুরু করেছে। অনেককেই মেরে ফেলেছে! এসব শুনে রাগে রঞ্জুর গা জ্বলে উঠল! অনেকেই আবার বলতে লাগল যা হবে তা সব ঢাকায়, আমাদের এইদিকে কিছু আসবে না! কিন্তু পরিস্থিতি ঠিক উল্টো, একে একে মিলিটারিরা ছড়িয়ে পড়তে লাগল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তারপর ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে সবাই কানাই দাদার দোকানে জড়ো হলো! কারণ তারা রেডিওতে সবাই শেখ সাহেবের বক্তব্য শোনার জন্য ব্যস্ত, কিন্তু যেই না শেখ সাহেব বলতে যাবেন অমনি রেডিওতে প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হলো! পরে জানা গেল তিনি এমন একটি ভাষণ দিয়েছেন যেটা এর আগে কেউ কখনোই দেয়নি এবং দেবেও না! চারদিকে উত্তপ্ত পরিবেশ। এমনি এক রাতে রঞ্জুর শোয়ার ঘরের জানালাতে কে যেন টোকা দিল! জানালা খুলে রঞ্জু অবাক, দাঁড়িয়ে আছে কানাই দাদা! রঞ্জু কিছু বলার আগেই কানাই দাদা বললেন, কীরে রঞ্জু দেশে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে! ঘরে ঘুমোচ্ছিস? রঞ্জু বলল, সত্যি আমাকে যুদ্ধে নেবে কানাই দাদা? কিন্তু মা বাবা? কানাই দাদা এবার বললেন, তোর মা বাবা রাজি হয়েছেন! একটা ব্যাগে প্রয়োজনীয় সব নিয়ে চল! যাওয়ার আগে রঞ্জু বাবা মায়ের আশীর্বাদ নিল! বাবা তাকে বললেন, দেশকে মুক্ত করে ফিরবে বাবা! তারপর কানাই ও রঞ্জু দুজনই বের হয়ে গেল। কিছুদূর এগোনোর পর তাদের সামনে এসে মামুন দাঁড়াল। মামুন রঞ্জুকে বলল, বাঁচি কি মরি একসঙ্গে। আমাকে না জানিয়ে দাদার সঙ্গে একাই যাচ্ছিস। প্রিয় বন্ধুকে দেখে রঞ্জুর মনে সাহস আরও বেড়ে গেল।
দশম শ্রেণি,সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দিনাজপুর