লেখা ও আঁকা : লাবিবা মাহমুদ
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৪ ১৩:১৪ পিএম
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৪ ১৩:২৪ পিএম
‘ভাইয়া, দেখ কত্ত সুন্দর লাল আর সবুজ। কী চমৎকার তাই না ভাই। আমাদের যদি এমন একটি পতাকা থাকত!’ ছোট বোনের এমন আনন্দমাখা আবদার শুনে ভাই বলল, ‘তোর ভালো লাগছে? তাইলে আমি তোকে কিনে দেব বোইন।’ ‘সত্যি কিনে দিবা?’ বলে লাফিয়ে উঠল বোন। তারপর বলল, ‘চলো তাইলে আমরা এখনই দোকানে যাই।’ ‘নারে, এখন বাড়ি চল।’ বলে ছোট বোনের হাত ধরে বাড়ি চলে গেল দুজন। পরের দিন ওরা আবার এলো। বোন বলল, ‘ভাইয়া, তুমি কালকে বলেছিলে পতাকা কিনে দিবা। চলো যাই।’ বোনের কথা শুনে ভাই বলল, ‘আজকে না, তোকে অন্যদিন কিনে দিব।’ ভাইয়ের কথা শুনে লক্ষ্মী মেয়ের মতো বোন আর একটি কথাও বলল না। ভাইয়ের সঙ্গে বাড়ি চলে গেল। এভাবে কয়েকটা দিন চলতে থাকল। ভাই ছোট বোনকে পতাকা কিনে দেয় না। এর মধ্যে অনেকেই পতাকা কিনে টানিয়েছে। সেগুলো বাতাসে পতপত করে উড়ছে। তা দেখে ছোট বোনের মনটা খারাপ হয়ে থাকে। তবু ভাবে সে, ভাই তাকে একটি পতাকা কিনে দেবেই। এমন বিশ্বাস ছিল তার মনে।
সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে পতাকার দোকানে একাই গেছে সে। দেখল পতাকার দোকান বন্ধ। দৌড়ে বাড়িতে এসে দেখে ভাই নেই। ভাইকে খুঁজতে বের হলো। কোথাও পাচ্ছে না। কই গেল? আজকে স্বাধীনতা দিবস। পতাকা না হোক, ভাইয়ের সঙ্গে তো স্কুলে যাবে। কোথাও না পেয়ে সে বাড়িতে এসে দেখে ভাইয়ের হাতে লাল রঙ। ভাইকে দেখে তার মনে শান্তি এলো। কাছে গিয়ে বলল, ‘আজ দোকান তো বন্ধ।’ ছোট বোনের মায়াভরা চোখের দিকে তাকিয়ে ভাই বলল, ‘বোইন, তুই আরেকটু সবুর কর।’ বলে ওর হাত ধরে যেতে থাকল। কিন্তু ভাই তো তাকে পতাকার দোকানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে না; অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছে দেখে সে ভাইকে জিজ্ঞেস করল, ‘ভাই আমরা কোথায় যাচ্ছি?’ ভাই কোনো উত্তর দিল না। হাঁটতে হাঁটতে একটি জঙ্গলবাড়ি পৌঁছাল। সেই বাড়ির রাস্তার ধারে বড় একটি মাটির ঘরের কাছে গিয়ে দাঁড়াতে বোনটি লাফিয়ে উঠল। দেখে, গাছের সবুজ পাতার রস আর ইটের খোয়া গুঁড়া করে রঙ বানিয়েছে। তার পর দেয়ালের বুকে লাল সবুজ বাংলাদেশের পতাকা এঁকেছে। ভাইয়ের এমন সারপ্রাইজে সে দোকানের কেনা পতাকা থেকে বেশি খুশি হলো। বলল, ‘ভাই তুমি দেয়ালে পতাকা আঁকার কথাটি আমাকে আগে জানাওনি কেন? আমাকেও বলতে তুমি। আমি আর পতাকা কেনার আবদার করতাম না।’ বোনের প্রশ্নের উত্তরে ভাই বলল, ‘শোন দেশের এই লাল সবুজের পতাকা এক দিনে পাওয়া যায় নাই। অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে বোন। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ফসল।’ ভাইয়ের কথা শুনে বোনের চোখে আনন্দের পানি চলে এলো।