ওমর ফারুক
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪ ১১:২৯ এএম
বেইলি রোডের আগুনে পুড়ে গেছে কত স্বপ্ন, কত আশা, কত আপনজন
এমন ২৯ ফেব্রুয়ারি আর না আসুক! কত স্বপ্ন, কত আশা, কত পরিবারের রক্তের আপনজন হারিয়ে গেছে। আগুনে পুড়ে কয়লা হয়েছে। বেইলি রোড অনেকের স্মৃতিতে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যে স্মৃতি বুকের বাঁ পাশে পিনপিন কষ্ট দেবে। মনে পড়লেই মন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে।
কীভাবে মনকে বুঝ দেবে জানি না। কত খুশিমনে জন্মদিন উপভোগ করতে গেছে। ফিরেছে মৃত নিথর দেহ নিয়ে। ইতালি যাবে তাই পরিবার নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেছে। ফিরেছে আগুনে জ্বলে নিঃশ্বাস হারিয়ে। যেখানে গ্রিনকার্ড নিয়ে ইউরোপ ঘোরার কথা; অথচ সেই ভাই ও তার পরিবার পুরো দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। বেইলি রোড়ের সেই মার্কেটের কর্মচারীরা পরিবারের জন্য রাতদিন এক করে পরিশ্রম করেছে। কিন্তু কে জানত সেই পরিবারের মুখে এমন কান্নার রোল পড়বে। জীবিকা নির্বাহের বটবৃক্ষ হারিয়েছে। অজস্র নয়ন চোখের জল ফেলছে। চোখ ফুলে গেছে স্বজনের আহাজারিতে। মন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে সেদিন সূর্যের জ্বলন্ত অগ্নির মতো জ্বলেছে মার্কেট। পৃথিবীর সব আগুন যেন পরিবার-পরিজন হারানো মানুষের অন্তর্দেশে লাগছে। আহ জীবন! কত রঙিন স্বপ্ন ছিল তাদের। উষসী থেকে ভোর পর্যন্ত পড়াশোনা করে বুয়েটে জায়গা করে নিয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরিবার গর্ব করে বলত আমার ছেলে বুয়েটে পড়ে। আমার মেয়ে বুয়েটে পড়ে। নাহিয়ান ভাই ও লামিশা আপু। আপনারা আমাদের ক্ষমা করুন। নাহিয়ান ভাইয়ের বন্ধু জুনায়েদ উল্লেখ করেন, নাহিয়ান বলেছিল, ‘এখানে থাকলে একদিন হয় রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা যাব, না হলে আগুনে পুড়ে।’ এত তাড়াতাড়ি নাহিয়ান ভাইয়ের কথা সত্যি হবে কেউ কল্পনা করেনি। সেই বুয়েটের নাহিয়ান ও লামিশা আপু মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেছেন বেইলি রোডে! কীভাবে স্থির থাকবে তাদের আত্মীয়স্বজনরা?
সেই মার্কেটের কর্মচারী, যার অক্লান্ত পরিশ্রমে সংসার চলছে। রাতে নাইট ডিউটি করছে। ওভার টাইমে কাজ করছে। নিচের ফ্লোর থেকে শেষ ফ্লোর পর্যন্ত চড়ে বেড়িয়েছে। পরিবারের আহার জোগাড় করেছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার অর্থ দিয়েছে। পরিবার উৎফুল্ল ও প্রফুল্ল রাখতে চেয়েছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছে এই ভেবেÑএকদিন শান্তি আসবে।
আগুনে সব শান্তি কেড়ে নেবে জানত না। জানত না জীবন যেখানে যেমন। সেই কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরেছে নিথর দেহ নিয়ে। টাকার মেশিন অদৃশ্য হয়েছে পরিবারের। সৃষ্টিকর্তা এমন লিখন কেন লিখেছিলেন? কেন তাদের এমন যন্ত্রণাময় মৃত্যু দান করলেন? দুনিয়ায় সবকিছুর শাস্তি দিয়ে দিলেন?
ভর্তি পরীক্ষার খরচ জোগাড় করতে নাঈম প্রহরীর চাকরি নিয়েছিল। সেই নাঈম মৃত্যুর তালিকায় ভর্তি হয়ে সারা জীবনের মতো চলে গেছে। এমন ভাগ্য জীবনে লেখা ছিল জানলে নাঈম আজ কোথায় থাকত? নাঈম আমাদের ক্ষমা করিস ভাই।
আগুন লাগার ঘটনা নতুন নয়। আমাদের দেশে এমন ঘটনা চলমান। বহুজনের ঠিকানা হয়েছে মর্গে। সৃষ্টিকর্তা এমন কষ্ট কাউকে না দিক। তার কাছে সেই কামনা। এমন মৃত্যু কেউ সহ্য করতে পারবে না।
এমন মৃত্যু কাম্য নয়। যে মৃত্যুতে জাতি স্তব্ধ ও বাকরুদ্ধ! শেষনিঃশ্বাস অন্তত কৃত্রিম কনক্রিটের দালানের সঙ্গে লেপ্টে জ্বলে মরতে চাই না।