প্রচ্ছদ
সুবর্ণা মেহ্জাবীন স্বর্ণা
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৪ ১৭:১৩ পিএম
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৪ ১৭:১৯ পিএম
মডেল : জারিন আভা; মেকআপ : রেড বিউটি সেলুন; ছবি : ফারহান ফয়সাল; কৃতজ্ঞতা : জি এ লেডিস টেইলার্স
আসছে ঈদ, চাই নতুন পোশাক। ফ্যাশন হাউসগুলোয় দেখা যাচ্ছে নানান রঙের ও ঢঙের ঈদ পোশাক। যেখানে প্যাটার্ন, মোটিফ ও ডিজাইনে রয়েছে নতুনত্ব। তবু অনেকে আনস্টিচ থ্রি পিস কিংবা গজ কাপড় কিনে নিজে নকশা করতে ভালোবাসেন। এতে নিজের ইচ্ছেমতো ডিজাইন যেমন করা যায় তেমনি পোশাকটি হয় অন্যদের থেকে আলাদা। তাদের গন্তব্য এখন দর্জিবাড়ি
বাহারি সব ঈদ পোশাক যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ফ্যাশন হাউসের পাশাপাশি অনলাইনেও দেখা মিলছে নিত্যনতুন ডিজাইনের পোশাক। অনেকে দেশি ব্র্যান্ড কিংবা অনলাইন থেকে বেছে নিচ্ছেন পছন্দমতো পোশাক। আবার অনেকেই চান এমন পোশাক যা হবে সবার থেকে আলাদা। তাই নিজের পছন্দের নকশা ও কাটে বৈচিত্র্যময় পোশাক বানাতে ছুটছেন দর্জিবাড়ি।
বাজার ঘুরে গজ কাপড়ের সঙ্গে মানানসই লেস বা ইয়ক কিনে নিজের পছন্দমতো নকশা ও কাটে পোশাক বানাতে পছন্দ করেন অনেকে। কখনও ক্যাটালগ দেখে আবার কখনও সেই কাট বা প্যাটার্নের সঙ্গে কিছুটা রদবদল করে দর্জির থেকে বানিয়ে নিচ্ছেন পোশাক। ইতোমধ্যে ঈদের কাজ শুরু করে দিয়েছেন দর্জিবাড়ির কারিগররা। নিজের পছন্দমতো ঈদের জামা বানাতে অনেকেই গজ কাপড় কিনে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন সেখানে। আর যারা ভাবছেন বানাবেন কিন্তু দর্জিবাড়ি যাননি এখনও, তারা আর দেরি না করে চলে যান। কারণ সবখানেই রয়েছে ঈদের পোশাক বানানোর ভিড়। দর্জির দোকানগুলো ঘুরে জানা গেল, মূলত শবেবরাতের পরই ঈদের অর্ডার আসা শুরু হয়েছে। অধিকাংশ দোকান রমজানের ১০ তারিখ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ তারিখ পর্যন্ত অর্ডার নেবে। কিছু দোকানে এখনই বন্ধ হয়ে গেছে অর্ডার নেওয়া। অনেকে আবার বেশ আগেই দর্জিবাড়িতে ফরমাশ দিয়ে রেখেছিলেন, যাতে চাপ বাড়ার আগেই পোশাকটি পেয়ে যান। ঈদের পোশাকে প্রতি বছরই নকশা ও কাটে কিছু না কিছু পরিবর্তন হয়। গত বছর যে নকশা ছিল জনপ্রিয়, তা এ বছরও যে থাকবে এমন নয়। কিছু থাকবে সঙ্গে হবে নতুনের সংযোজন। এবারের ঈদে গলা, হাতা কিংবা সালোয়ারের কাটছাঁট কেমন হবে দেখে নিন-
দেশি ফ্যাশনে সালোয়ার-কামিজের আবেদন বরাবরই অনন্য। সময়ের ফেরে কামিজের কাটে ও ডিজাইনে এসেছে নানান হেরফের। তবে ছয়-সাত বছর ধরে কামিজে লম্বা ঝুল ফ্যাশনে থাকলেও এবার ঈদে হাঁটু পর্যন্ত বা তার চেয়ে কয়েক ইঞ্চি ছোট কামিজ ফ্যাশনেবল হবে। জামার লং ৩৬-৪২ ইঞ্চির মধ্যে ওঠানামা করছে। গত বছর জামায় ঘের চলেছে ৩৫-৩৮ ইঞ্চি, কিন্তু এ বছর ২৫-২৮ ইঞ্চির মধ্যে। ওপরের অংশে জামার মতো হয়ে এসে বুকের নিচে জোড়া লাগিয়ে এক ছাঁটের অনেক ঘেরের গাউন ধাঁচের পোশাক প্রাধান্য পাচ্ছে। আবার লম্বা কুর্তা, কোটি এসবও আছে পছন্দের তালিকায়। একরঙা কামিজে ফুলের কাজ, লেইস ও চিকেন কারি, ইয়ক বা লেইস তো আছেই সঙ্গে পোশাকের ডিজাইনে প্রাধান্য পাচ্ছে নানা ধরনের বোতাম ও বড় পুঁতি। একরঙা কাপড়ে ছাপানো নকশা ও নকশা করা কাপড়ে একরঙা কাপড় দিয়ে কুঁচি করে বা বিভিন্ন ধরনের নকশার আকৃতি ফুটিয়ে তুলতে দেখা যায় দর্জিবাড়িতে। আবার হাতার নিচে জামার দুই পাশে পাইপিং দিয়েও পোশাকে ডিজাইন করা হচ্ছে।
জি এ লেডিস টেইলার্সের শাহ জামাল বলেন, ‘টিস্যু কাপড়ের পোশাক বানানোর অর্ডার আসছে বেশি এ বছর। আগের মতো আর দোকানে এলে ক্যাটালগ দেখানো লাগে না। নেট থেকে নকশা দেখিয়ে পছন্দমতো পোশাক বানিয়ে নিতে চান সবাই। এখনকার বেশিরভাগ থ্রি পিসে গলার নকশা করাই থাকে। ইন্ডিয়ান লিনেন কাপড়ের সালোয়ার-কামিজ বানাতে দিচ্ছেন অনেকে।’
গলার ক্ষেত্রে রয়েছে অনেক নকশা। জামায় গোল, উঁচু গলা, নৌকা কাট, তিন কোনা গলা, পিঠের অংশে হৃদয় আকারের কাটাও আছে। এ ছাড়া হাইনেক কলার, শেরওয়ানি কলার, ছোট করে গোল গলা, বড় করে কাটা গোল, মেট্রো বা চার কোনা কাটের গলার বেশ চাহিদা রয়েছে। এসব গলায় অন্য রঙের কাপড় দিয়ে পাইপিন ডিজাইনও বেশ ট্রেন্ডি। ব্লাউজে গোল ও নৌকা কাটের গলা চলছে নকশাদার কারুকাজের কাপড়ে। সাধারণ কাপড়ের ব্লাউজে চলছে গোল গলা, তিন কোনা, চার কোনা, ব্যান্ড কলার প্রভৃতি। পাশে চেইন দেওয়া গলার চাহিদাও বেশ।
কামিজের হাতায়ও কিছুটা নতুনত্ব দেখা যাচ্ছে। সোজা কনুই পর্যন্ত, থ্রি-কোয়ার্টার, ফুল হাতা, কোল্ড শোল্ডার, হাতার নিচের অংশে ঘের দেওয়া, ট্রাইস্লিভ হাতা যা দু-তিন জায়গা দিয়ে কাটা থাকে আর মাঝে থাকে পুঁতি বসানো। এ ছাড়া বেলবটম হাতাও অনেকের পছন্দ। হাতায় ঝালর, কুঁচি ও লেইস ইত্যাদির ব্যবহার বেশি দেখা যাচ্ছে এবার। এ ছাড়া রুমাল হাতা, এক থেকে তিন স্তরের অন্য রঙের ঝালর লাগানো হাতা, হাতার ওপর অংশে কাটা, মাঝখানে কেটে ফিতা দিয়ে আটকানো হাতা-এসবও চলছে আগের মতোই।
স্ট্রেইট কাটের প্যান্ট বা স্লিম ফিট ধুতি প্যান্ট এবার ট্রেন্ডে। এ ছাড়া ঢিলা কামিজের সঙ্গে সিগারেট প্যান্ট বা ফ্রক ধরনের কামিজের সঙ্গে ফ্লেয়ার প্যান্টও বানাতে পারেন। পালাজ্জো কিংবা স্কার্ট পালাজ্জো তো আছেই তবে চাপা প্যান্ট চলছে বেশি। এ ছাড়া কোমরের অংশে ইলাস্টিক লাগানো প্যান্ট ঢঙের সঙ্গে হাঁটুর
সামান্য ওপর থেকে বেশি কুঁচির সালোয়ারের চাহিদাও অনেক। এ ছাড়া প্যান্ট ঢঙের সালোয়ারের নিচে লেস বা ইয়ক ডিজাইন বেশ ট্রেন্ডি এখন। এ ছাড়া চলছে সোজা কাট বা সিগারেট কাটের সালোয়ার। যার ঘের ১০-১২ ইঞ্চি। টিউলিপ, সারারা প্যান্টের ফরমাশও কম নয়।
ছেলেদের জন্য
ঈদে ছেলেদের অন্যতম পোশাক পাঞ্জাবি। পছন্দমতো ফেব্রিকে পাঞ্জাবি বানাতে অনেকে তাই চলে যান দর্জিবাড়ি। সুতি, হালকা খাদি কাপড় বেশি চলে পাঞ্জাবির জন্য। অনেকে বাটিক অথবা টাইডাইয়ের পোশাক পছন্দ করেন। সেমি লং ঝুলের পাঞ্জাবির চল বেশি। একটু ঢিলেঢালা টাইপ করে বানাতে পারেন। আবার কুর্তা বানাতে চাইলেও টাইট ফিটিং এড়িয়ে যাওয়া ভালো। এমব্রয়ডারির কাজ, গলা ও হাতায় পাইপিন কিংবা বর্ডার করে নিচ্ছেন অনেকে। তবে বেশিরভাগ ছেলেই সাধারণ ডিজাইনের পাঞ্জাবি পরতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আবার শার্ট, প্যান্ট, স্যুট, ব্লেজারের মতো ফরমাল ড্রেসেরও কদর রয়েছে। শার্ট কিংবা প্যান্ট বানানোর ক্ষেত্রে ফরমাল ডিজাইন প্রাধান্য পাচ্ছে।
মজুরি
স্থান ও দোকান ভেদে সেলাইয়ের দরদাম ভিন্ন। সাধারণ কাটের সালোয়ার-কামিজের খরচ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। নকশা ও ছাঁটের ওপর নির্ভর করে জিপসি সেলাইয়ের দাম পড়বে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। আনারকলি ও গাউনের ডিজাইনে পোশাক তৈরিতে খরচ পড়বে টাকা পর্যন্ত। বাহারি নকশার কুর্তি ও ব্লাউজের মজুরি পড়বে ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। আর ডিজাইনভেদে পাঞ্জাবি বানাতে খরচ পড়বে ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। শার্ট ও প্যান্ট উভয়ের ক্ষেত্রেই মজুরি পড়বে ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে।