× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নট আ বোরিং প্রতিযোগিতা

ফাইনালে বাংলাদেশের বোরড টানেলারস

আসমাউল হুসনা

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৪ ১৪:৩১ পিএম

আপডেট : ১০ মার্চ ২০২৪ ১৬:৪১ পিএম

বাংলাদেশের বোরড টানেলারস দলের সদস্য হিসেবে আছেন আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ শিক্ষার্থী

বাংলাদেশের বোরড টানেলারস দলের সদস্য হিসেবে আছেন আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ শিক্ষার্থী

প্রতি বছর সারা বিশ্বের প্রকৌশলীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় নট-এ-বোরিং প্রতিযোগিতা। বিশ্বের বড় বড় দলের সঙ্গে লড়াই করে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম দল হিসেবে ফাইনালের টিকিট পেয়েছে বাংলাদেশের  শিক্ষার্থীদের দল বোরড টানেলারস

২০২১ সালে চালু হওয়া নট আ বোরিং কমপিটিশনের আয়োজনের তৃতীয় আসরে বিশ্বের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঘা বাঘা দলের মধ্য থেকে সেরা ১০টি দলকে দেওয়া হয়েছে ফাইনালের টিকিট। সুখবর হলো, দেশের মধ্যে তো বটেই, পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেই প্রথম দল হিসেবে এ তালিকায় সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশের দল ‘বোরড টানেলারস’।

‘আমার সীমার বাঁধন টুটে/দশ দিকেতে পড়ব লুটে/পাতাল ফেড়ে নামব নীচে, উঠব আবার আকাশ ফুঁড়ে/বিশ্ব-জগৎ দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে।’ কবি কাজী নজরুলের লেখা ‘সংকল্প’ কবিতা বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন পর্যায়ে একের পর এক সফলতা অর্জন করছে তারা। বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক প্রতিষ্ঠা করেন দ্য বোরিং কোম্পানি। লুপ, হাইপার লুপসহ দ্রুত, নিরাপদ ও আরামদায়ক পরিবহন, ব্যয় হ্রাস, মালবাহী টানেল তৈরি, ট্রাফিক সমাধান, দ্রুত পয়েন্ট টু পয়েন্ট পরিবহনব্যবস্থার লক্ষ্যে টানেল অবকাঠামো তৈরি করাই এ প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য।

প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটি প্রকৌশলীদের নিয়ে ‘নট আ বোরিং কমপিটিশন’ নামে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সারা বিশ্বের উদ্ভাবনপ্রিয় তরুণদের এক বিশেষ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। চ্যালেঞ্জটি হলো, বানাতে হবে বিশাল এক যন্ত্র। স্বয়ংক্রিয়ভাবে মাটি খনন করে সুড়ঙ্গ তৈরি করাই হবে যন্ত্রের কাজ। নট আ বোরিং কমপিটিশনের আয়োজক হিসেবে থাকে ইলন মাস্কের দ্য বোরিং কোম্পানি। মজার বিষয়, এ বোরিং শব্দের অর্থ কিন্তু একঘেয়ে বা বিরক্তিকর নয়; এর অর্থ দাঁড়ায় খনন করা। নট আ বোরিং কমপিটিশনের যাত্রা ২০২১ সালে। এ আয়োজনের তৃতীয় আসরের অন্যতম সুখবর হলো, শুধু দেশের মধ্যে নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ভেতর প্রথম দল হিসেবে এ তালিকায় সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশের দল বোরড টানেলারস।

আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, একটি দল

দলের সদস্য দুজন থেকে শুরু করে এখন ১৮ জন। এ দলের সদস্য হিসেবে আছেন আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি) শিক্ষার্থী। বিগত বছরগুলোয় জার্মানির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি মিউনিখ, এমআইটি, ভার্জিনিয়া টেক, ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইকের মতো বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ তাদের নিজস্ব টানেল বোরিং মেশিনের নকশা ও ম্যানুফ্যাকচারিং করে চূড়ান্ত পর্বে অংশ নেয়। গত বছর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের দল বোরড টানেলার্স। বিশ্বের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঘা বাঘা দলের মধ্য থেকে সেরা ১০টি দলকে দেওয়া হয়েছে ফাইনালের টিকিট। মার্চের শেষ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বাসট্রপে বসবে আট দিনের ফাইনাল আসর। চ্যাম্পিয়ন শিরোপার পাশাপাশি নতুন উদ্ভাবন, ডিজাইন, নির্ভুল নেভিগেশন ইত্যাদি বিভাগেও দেওয়া হবে আলাদা পুরস্কার।

বোরড টানেলার দলটির নেতা শায়েখ মোহাম্মাদ শিথিল (অ্যালামনাই, ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়া), কো-লিডার এম শাহরিয়ার ইকবাল (যন্ত্রকৌশল ১৭, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)। বোর্ড সদস্য শিবলি নোমান (মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়া), ইমরান খান (পুরকৌশল ১৯, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়), তালহা জুবায়ের (নটর ডেম কলেজ), ফাহিন উদ্দিন ইনাম (অ্যালামনাই ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং-১৭, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়)।

প্রকল্পের কাজ সফল করতে নিমগ্ন শিক্ষার্থীরা

প্রকল্পের আদ্যোপান্ত

টানেল খনন করতে প্রয়োজন হয় বোরিং মেশিন। টানেল বোরিং মেশিন এমন একটি যন্ত্র, যা বিভিন্ন মাটি ও শিলাস্তরের মধ্যে বৃত্তাকার প্রস্থচ্ছেদের সঙ্গে সুড়ঙ্গ খনন করতে ব্যবহৃত হয়। এগুলো মাইক্রো টানেলিংয়ের জন্যও ব্যবহৃত হতে পারে। এ যন্ত্রগুলোকে শক্ত শিলা থেকে বালু এবং যেকোনো কিছুর মাধ্যমে সুড়ঙ্গ খনন করার জন্য নকশা করা যেতে পারে। বোরড টানেলারসদের বোরিং মেশিনের মোটর ও হাইড্রোলিক সিস্টেমগুলোর কর্মক্ষমতার জন্য এটি বৈদ্যুতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে

নিজেদের ভাবনা 

যেকোনো টানেল করতেই সাধারণত টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) নামে একটি যন্ত্র লাগে। মোহাম্মদ শিথিল বলছিলেন, ‘সহজ কথায়, এ টিবিএমকেই আরও আধুনিক করতে চান ইলন মাস্ক। এজন্যই তিনি সারা বিশ্বের মাথাগুলো কাজে লাগাতে চান।’ ৩০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫০ সেন্টিমিটার প্রস্থের টানেল নির্মাণ করার পরীক্ষা (টাস্ক) দেওয়া হয় প্রতিযোগীদের। সহদলনেতা শাহরিয়ার ইকবাল যোগ করলেন, ‘টানেল নির্মাণের অন্যতম উদ্দেশ্য ট্রাফিক সমস্যার সমাধান। রাস্তা খুঁড়তে গিয়ে যেন চলাচলে সমস্যা না হয়, নিশ্চিত করা। আমরাও সেটি মাথায় রেখেই যন্ত্রটি তৈরি করেছি। গত বছরের মার্চে যখন প্রাথমিক রাউন্ডের জন্য প্রস্তুতি নিই, টিবিএম নির্মাণ শেখার তেমন কোনো উপকরণই ছিল না। একদম শুরু থেকেই শুরু করতে হয়েছে। ডিজাইন, মডেল, প্রোটোটাইপসহ প্রযুক্তিগত কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর তিনবার আমাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।’ এর পরই ফাইনালের টিকিট পেয়েছে দল।

অন্য প্রতিযোগিতার সঙ্গে ‘নট আ বোরিং কমপিটিশন’-এর পার্থক্য হলো, এতে অংশ নিতে হলে শুধু বড় একটা যন্ত্র বানালেই চলবে না, যুক্তরাষ্ট্রে এটাকে বয়ে নিয়েও যেতে হবে। দলের উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব হিউস্টনের পিএইচডি গবেষক সালমান প্রমন। তাঁর বক্তব্য, ভবিষ্যতে সম্ভাবনাময় অবস্থানে পৌঁছতে হলে এই তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া দরকার। পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার কার্যকর নীতিমালা থাকা দরকার। রাষ্ট্রীয়ভাবেই বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’

দলনেতা শায়েখ মোহাম্মদ শিথিল বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগিতাটি খুবই চ্যালেঞ্জিং। কেননা একটি বোরিং মেশিন তৈরি করতে যে প্রযুক্তি ও গবেষণা প্রয়োজন তা আমাদের দেশে খুব একটা সহজলভ্য নয়। দলগত প্রচেষ্টা ও ইচ্ছাশক্তির জোরে নামমাত্র ফান্ডিং থাকার পরও বিশ্বের বড় বড় দলের সঙ্গে লড়াই করে চূড়ান্ত পর্যায়ে নির্বাচিত হয়েছে আমাদের দল। বোরড টানেলার্স বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। আমাদের লক্ষ্য হলো উদ্ভাবনী মাইক্রো-টানেল বোরিং মেশিন ডিজাইন ও তৈরি। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাইরের দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের প্রকৌশলের শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করা।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা