ডি এইচ মান্না
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৪ ১৪:১২ পিএম
নিজের তৈরি রোবটের সঙ্গে নিহাল
খাবার পরিবেশন করছে শাড়ি-গহনা পরা যন্ত্রমানবী। দেশি পোশাক গায়ে আধুনিক প্রযুক্তির এ রোবট ক্রেতার অর্ডার করা খাবার ঠিকঠাকমতো পৌঁছে দিচ্ছে টেবিলে টেবিলে। দূর থেকে বোঝার উপায় নেই এটি মানুষ নাকি রোবট। বলছিলাম হবিগঞ্জ সদরের বদর উদ্দিন খান রোডে অবস্থিত কিচেন টুয়েন্টি রেস্টুরেন্টের কথা।
সম্প্রতি স্থানীয়দের মাঝে এটি রোবট রেস্টুরেন্ট নামে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু আলোচিত এ রোবটের মূল নির্মাতা নিহাল দাস অংকুর। তার তৈরি রোবট স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। রোবটটির কারণে কিচেন টুয়েন্টি রেস্টুরেন্টে ব্যবসা বেড়েছে অনেক গুণ। তাই রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষও খুশি নিহালের এমন নিখুঁত কাজের জন্য। নতুন অনেক উদ্যোক্তা নিহালের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন কম বাজেটে এ রকম রোবট তৈরির জন্য।
নিহালের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি সম্পর্কিত নানাবিধ প্রজেক্টের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তার। ২৩ বছরের তরুণ নিহাল দাস অংকুর সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ডাকবাংলা এলাকার বাসিন্দা অরুণ কুমার দাস ও শিবালী রানী দাস দম্পতির ছোট ছেলে। তিনি গোলাপগঞ্জ এমসি একাডেমি থেকে ২০১৭ সালে এসএসসি শেষে সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রনিকসের ওপর ডিপ্লোমা শেষ করেন ২০২২ সালে।
কলেজ থেকেই তার রোবট তৈরির নেশা। সেই নেশা থেকেই স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন রোবট তৈরির প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সাফল্য অর্জন করেন। বর্তমানে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন টেক রিলেটেড প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করে অর্থ উপার্জন করছেন। নিহালের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোবট দিয়ে খাবার পরিবেশন করে সম্প্রতি আলোচনায় আসা হবিগঞ্জের কিচেন টুয়েন্টি রেস্টুরেন্টে কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তার বন্ধু অর্পণ চন্দের মাধ্যমে। অর্পণ চন্দও রোবট নিয়ে কাজ করেন। প্রথমে রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ তাদের সঙ্গে রোবটের আইডিয়াটি শেয়ার করেন।
পরে তারা রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবে রেস্টুরেন্টের জন্য একটি রোবট তৈরির কাজে চুক্তিবদ্ধ হন। এরপর নিহাল প্রায় চার মাস নিরলস পরিশ্রম করে রোবটটি তৈরি করেন। এতে তাকে সহযোগিতা করেন অর্পণ চন্দ। দেশি প্রযুক্তি আর ম্যাটেরিয়ালসে তৈরি হওয়ায় রোবটটিতে খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে মাত্র সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। এর মতো ভালোমানের একটি রোবট বিদেশ থেকে আমদানি করতে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হতো। রোবট বিদেশ থেকে আনার প্রক্রিয়াটাও বেশ কঠিন।
রোবট তৈরির বিষয়ে জানতে চাইলে নিহাল জানান তার আকাশচুম্বী স্বপ্নের কথা। তার স্বপ্ন সিলেটে আন্তর্জাতিক মানের টেক রিলেটেড একটি ইন্ডাস্ট্রি করা। এখান থেকে বিভিন্ন ধরনের রোবট ছাড়াও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন সিস্টেম, আইওটিসহ নানাবিধ টেক রিলেটেড সামগ্রী তৈরি করতে চান। তিনি বলেন, কম খরচে বাংলাদেশে এসব কিছু তৈরি করা সম্ভব এবং চাইলে রোবটের দেশি চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে। নিহালের কাছ থেকে আরও জানা যায়, তার বাবাও একজন সৃজনশীল মানুষ। নিহালের আলোচিত এ রোবট তৈরির কাজে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন তার বাবা করুণ কুমার। ছেলের এমন অর্জনে খুবই খুশি নিহালের বাবা।