শখের বাগান থেকে নার্সারি
অচিন্ত্য মজুমদার
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৪ ১৪:০৬ পিএম
নার্সারি করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন ভোলার শৌখিন বৃক্ষপ্রেমী ফাহাদ হাসান
প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্ব
গড়ে তুলে শখের বাগান থেকে নার্সারি করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন ভোলার শৌখিন বৃক্ষপ্রেমী
ফাহাদ হাসান। ভোলা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে গড়ে তুলেছেন ২ শতাধিক
দেশি-বিদেশি গাছের ভান্ডার। তবে থেমে নেই জাত সংগ্রহ। সংগ্রহে নেই এমন কোনো গাছের নাম
শুনলেই তিনি ছুটে যান, সংগ্রহ করে আনেন চারা।
সরেজমিনে ভোলা শহরের
উকিলপাড়া টাউন স্কুলের বিপরীতে পৌর মেয়রের বাড়িসংলগ্ন ‘গ্রীনটাচ নার্সারি’তে
গিয়ে কথা হয় শৌখিন বৃক্ষপ্রেমী মো. ফাহাদ হাসানের সঙ্গে। তিনি জানান, একসময় বেসরকারি
একটি সংস্থায় চাকরি করতেন। ২০১৫ সালে চাকরিরত অবস্থায় শখের বশে বাড়ির আশপাশে গাছের
চারা সংগ্রহ করে ছোট পরিসরে নার্সারি শুরু করেন। ২০২১ সালে চাকরি ছেড়ে নার্সারির আকার
বড় করা শুরু করেন। নাম দেন গ্রীনটাচ নার্সারি। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বাণিজ্যিকভাবে
গাছের চারা উৎপাদন ও বিক্রি করে সফলতা পাচ্ছেন। পাশাপাশি তার পরামর্শ আর আধুনিক কৃষি
যন্ত্রপাতির ব্যবহার করে অনেকেই রোগবালাইমুক্ত ফুল, ফল আর ছাদবাগান গড়ে তুলেছেন।
ফাহাদ হাসান জানান,
এক বছরের ব্যবধানে পুরো ভোলা জেলায় তিনি ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। তার নার্সারি থেকে চারা,
পরিবেশবান্ধব জৈব সার, উর্বর মাটি, টব, নিড়ানি, কাটারসহ আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি নিতে
প্রতিদিনই বহু মানুষ ছুটে আসে। ব্যস্ত জীবনে কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই সব একসঙ্গে হাতের
নাগালে পেয়ে অনেক মানুষের বৃক্ষরোপণের প্রতি আগ্ৰহ তৈরি হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন তার
ব্যবসার পরিধি বাড়ছে, অন্যদিকে দিন দিন বাড়ছে বৃক্ষপ্রেমী ও উদ্যোক্তা।
তার নার্সারিতে দেশি-বিদেশি
উচ্চফলনশীল ফলদ, বনজ, ঔষধি, মসলাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল, অর্ধশতাধিক জাতের ক্যাকটাস,
সাকুলেন্ট, বনসাই পাওয়া যায়। চারার দাম ২০ থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
একসঙ্গে সবকিছুর সমন্বয় ঘটিয়ে বাগানবিলাসী বৃক্ষপ্রেমীদের কথা চিন্তা করে তার এমন উদ্যোগ
বলে জানান ফাহাদ হাসান।
তিনি আরও জানান, তার
নার্সারিতে দেশি-বিদেশি আমের চারা, চায়না লিচু, মুম্বাই লিচু, জাম, ভিয়েতনামি কাঁঠাল,
পেয়ারা, রাম্বুটান, নারকেল, জামরুল; থাই পেয়ারা, লটকন, আমলকী, কদবেল, পেঁপে, সফেদা,
মিষ্টি তেঁতুল, বেদানা, ডালিম, কমলা, নাশপাতি, বেল, চালতা, আমড়া, ড্রাগন ফল, করমচা;
চায়না কমলা; কাশ্মীরি কুল, বাউকুলসহ শতাধিক দেশি-বিদেশি ফলের চারা রয়েছে। অন্যদিকে
তার নার্সারিতে মিলবে শোভাবর্ধনকারী গোলাপ, বেলি, জবা, জুঁই, গাঁদা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা,
বাগানবিলাস, সাদা জিনিয়া, কসমস, সূর্যমুখী, পাতাবাহার, কৃষ্ণচূড়া, মাধবীলতা, ক্রিসমাস
ট্রি, ফিজিয়াম, ডালিয়া, নয়নতারাসহ দেশি-বিদেশি ফুলের চারা। এ ছাড়া বারোমাসি লবঙ্গ,
এলাচ, দারচিনি, তেজপাতা, গোলমরিচ, তুলসী, শজনেসহ বিভিন্ন মসলা, ঔষধি গাছ, কাঠের গাছের
চারা পাওয়া যায়।
গ্ৰামীণ জন উন্নয়ন
সংস্থার বৃক্ষ গবেষক কৃষিবিদ আনিসুল হক টিপু জানান, শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন একটি নার্সারিত
নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় উদ্যোগ। বিশেষ করে নার্সারির উদ্যোক্তা ফাহাদ হাসান তার পরামর্শ
দিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষকে যেভাবে বাড়ির ছাদে, টবে অথবা আশপাশে গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ
করছেন, এটা সবুজ বনায়ন সৃষ্টির মাধ্যমে জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে প্রকৃতির ভারসাম্য
রক্ষায় বিরাট ভূমিকা পালন করবে।