মরিচ্চাপ নদ
কৃষ্ণ ব্যানার্জী, সাতক্ষীরা
প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৪ ১২:১৩ পিএম
আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২৪ ১২:১৬ পিএম
খনন করতে গিয়ে নদটি খালে পরিণত হতে চলেছে
মরিচ্চাপ নদ ছিল শত শত জেলের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। লঞ্চ-স্টিমারের অবাধ চলাচলে নদটি একসময় প্রাণবন্ত ছিল। নাব্য হারিয়ে জরাজীর্ণ নদটি পুনঃখননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। স্থানীয়রা বলেছেন, খনন করতে গিয়ে নদটি খালে পরিণত হতে চলেছে। তাদের দাবি, নদের ৭৫ শতাংশ বাদ দিয়ে খননকাজ চালানো হচ্ছে; আর এভাবে চললে সরকারি অর্থ অপচয় ছাড়া কিছুই হবে না।
তেঁতুলিয়া গ্রামের শংকর ব্যানার্জি বলেন, ‘মরিচ্চাপ আমাদের প্রাণের সম্পদ। কালের আবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। নাব্য ফেরাতে যেভাবে খনন করা হচ্ছে তাতে নদটি ক্রমে খালে পরিণত হতে চলেছে। নদের ৭৫ শতাংশ বাদ দিয়ে খনন করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও ইচ্ছামতো খনন করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন।’
আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দীপঙ্কর সরকার দ্বীপ জানান, মরিচ্চাপ নদ কেন্দ্র করে আশাশুনি বা দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসাবাণিজ্যে প্রসার ঘটে। খুলনা ও বরিশালের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগমাধ্যম ছিল মরিচ্চাপ। এ নদের বুক চিরে চলত লঞ্চ, স্টিমার, বড় বড় নৌকা। সুন্দরবনসহ এ অঞ্চলের পণ্যসামগ্রী এক জেলা থেকে অন্য জেলায় পরিবহন করা হতো এ রুট দিয়ে। তিনি বলেন, ‘মরিচ্চাপের নাব্য ফেরাতে সরকার পুনঃখননের ব্যবস্থা করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, নদটি কেটে খাল বানানো হচ্ছে। এক্সকেভেটর দিয়ে জমাট পলিমাটি নদের পাড়ে ফেলে রাখা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে এ মাটি ধুয়ে নদ ফের ভরাট হয়ে যাবে।’
নদী বাঁচাও আন্দোলনের নেতা অধ্যক্ষ আশেক ই-এলাহী বলেন, ‘শুধু মরিচ্চাপ নয়, আদি যমুনা, বেতনাসহ জেলার সব নদ-নদী ও খাল পুনঃখননে অনিয়ম করা হচ্ছে।’
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়সূত্রে জানা গেছে, দেশের সবকটি জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখননের প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এর আওতায় মরিচ্চাপের মধ্যচাপড়ার খোলপেটুয়া নদীর সংযোগ থেকে তেঁতুলিয়া বেতনা নদীর সংযোগ পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার পুনঃখননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ১৬ কোটি টাকায়। টেন্ডারে কাজ পায় পটুয়াখালীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএ জেভি। কার্যাদেশ দেওয়া হয় গত বছর অক্টোবরে। কাজটি চলতি বছরের ২০ জুন শেষ করার কথা। সিএস রেকর্ড অনুযায়ী আশাশুনির মরিচ্চাপ নদের প্রস্থ কোথাও ৬০০ ফুট, আবার কোথাও ৫৫০ ফুট। কিন্তু প্রকল্পটির ডিজাইন অনুযায়ী পুনঃখনন করা হচ্ছে ৯০-১৮০ ফুট।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএ জেভির স্বত্বাধিকারী মো. অলিউল্লাহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন অনুযায়ী খননকাজ করা হচ্ছে। এখানে ঠিকাদারের কিছু করার নেই। এলাকার লোকজন পক্ষে-বিপক্ষে অভিযোগ বা কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক। তবে খননকাজে কোনো অনিয়ম করা হচ্ছে না। প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি জুনের মধ্যে শেষ হবে।’
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান জানান, মরিচ্চাপের নাব্য ফিরিয়ে আনতে যে পরিমাণ পুনঃখনন দরকার সে অনুযায়ী প্রকল্পের ডিজাইন করা হয়েছে। প্রস্থ কোথাও ৬০০, কোথাও ৫৫০ ফুট। তবে একটি নদ পুনঃখনন করে আগের স্থানে ফিরে আনা যায় না।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনি আলম নূর বলেন, ‘ডিজাইন অনুযায়ী খনন চলছে। এ পর্যন্ত কোনো অনিয়মের অভিযোগ আসেনি। এলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’