উদ্যোগ
সুবর্ণা মেহ্জাবীন স্বর্ণা
প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৪ ১৬:৫১ পিএম
ঐতিহ্যবাহী ক্রুশকাঠির নকশা নিয়ে কাজ করছেন উদ্যোক্তা রুবাইয়াত। তার নিখুঁত কাজের নান্দনিক নকশায় তৈরি এসব পণ্য ঘরের শোভা বর্ধনের পাশাপাশি প্রকাশ করে শৈল্পিক মনের
ক্রুশকাঠিতে বোনা কাজ অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয়। নানি-দাদিদের হাতে বোনা শাল, সোয়েটার, মাফলার ছাড়াও শাড়ির পাড়কে দৃষ্টিনন্দন করতে নকশা, কামিজ বা ফ্রকের সঙ্গে জুড়ে বানানো হতো সুন্দর পোশাক। তবে এসবের বাইরে এখন ক্রুশকাঠিতে বোনার কাজ চোখে পড়ছে ঘর সজ্জার নানা জিনিসে। বসার ঘরের সেন্টার টেবিলে ফুলের নিচে দেখা মিলছে সুন্দর ক্রুশেট ম্যাট। আবার কখনও খাবার টেবিলে ফুলেল মোটিফের রানারে চোখ আটকে যাচ্ছে। নানি-দাদিদের হাতে বোনা এসব নকশা যখন প্রায় বিলুপ্তির পথে তখন এক উদ্যোক্তা নতুন করে কাজ শুরু করলেন ঐতিহ্যবাহী এই নকশা নিয়ে। বলছি উদ্যোক্তা রুবাইয়াত শারমিনের কথা।
ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স এবং মাস্টার্স করে আবার মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় বিআইএমএ থেকে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়েছেন। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন দীর্ঘদিন। এরপর করোনার সময় বাড়িতে বসেও চলেছে অফিসের কাজ। কিন্তু পরবর্তী সময়ে অফিস বাসা থেকে অনেক দূরত্বে স্থানান্তরিত হওয়ায় কাজটি ছেড়ে দিতে হয়। একদিন বন্ধুদের সঙ্গে এক চায়ের আড্ডায় কথা হচ্ছিল রুবাইয়াতের। বন্ধুরা কমবেশি কর্মজীবনে সফল। নিজেও ভালোই ছিলেন কর্মময় জীবনে। কিন্তু কাজ ছাড়া এখন যে আর ভালো লাগছে না। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম উইয়ের কথা জানতে পারেন। এরপর তিনি উইয়ের মাধ্যমে দেখলেন অনেক নারী উদ্যোক্তা রয়েছে যারা নানা ধরনের হাতে তৈরি পণ্য নিয়ে স্ব-স্ব জায়গায় সফল। তখন তিনিও ভাবলেন নিজে এমন একটা উদ্যোগ নিলে মন্দ হয় না।
নিজে স্বনির্ভর হবেন এই স্বপ্ন ছিল ছোটবেলা থেকেই। কখনোই বসে না থেকে নানা ধরনের কাজ করতে পছন্দ করতেন। ইন্টেরিয়র ডিজাইনের প্রতি বেশ ঝোঁক ছিল। এরপর উইতে নানা ধরনের হস্তশিল্পের কাজ দেখলেও চোখে পড়েনি ক্রুশকাঠির কাজ। তাছাড়া নিজে ক্রুশকাঠিতে বোনার নানা নকশা করতে পছন্দ করতেন। তখন চিন্তা আসে শাল, সোয়েটার বা পোশাকে ক্রুশকাঠির নকশার ধারা ব্যতীত অন্য কীভাবে এই নকশা ব্যবহার করা যায়। ভাবতে গিয়ে মাথায় আসে ঘরের শোভা বাড়ানোর নানা ধরনের জিনিস তৈরিতে। বসে না থেকে শুরু করে দেন ক্রুশকাঠিতে বোনা। কুশন কভার, রানার, ম্যাট তৈরি করে উই গ্রুপে দেন। রুবাইয়াত কালেকশন নামে নিজের একটা ফেসবুক পেজ খোলেন। প্রথম দিকে নিজের হাতে সূক্ষ্ম কাজ করে বিক্রি করতেন। এখন ১৫ জন কর্মী রয়েছে এই উদ্যোক্তার সঙ্গে। নিজের বাড়িতেই আলাদা জায়গা রয়েছে কাজের জন্য। পুরোনো একটি নকশার ধারাকে নিজের শৈল্পিক সত্তাকে কাজে লাগিয়ে নতুন করে এনেছেন ঘর সাজানোর নানা সামগ্রী হিসেবে।
রুবাইয়াত কালেকশনে মেলে রানার, কুশন কভার, বেড কভার, বেড রানার, রাগ, প্লেট ম্যাট, টিস্যু কভার। এগুলো সবই ক্রুশকাঠির নকশায় তৈরি। কোনোটাই আবার কটন ফেব্রিকের সঙ্গে এই নকশা দিয়ে অলংকরণ করা। তাদের রয়েছে শুধু ক্রুশকাঠির নকশা দিয়ে তৈরি নান্দনিক বেড কভার, যা শুধু দেশের বাইরে রপ্তানি করা হয়। শীতপ্রধান দেশে এই নকশার বেড কভারগুলো খুব উপযোগী। তা ছাড়া এই বেড কভার বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। এ ছাড়া নতুন করে ব্লকের কাজের নানা কিছু নিয়ে কাজ করছেন। যার মধ্যে আছে পর্দা, বেড শিট, কুশন কভার।
বেশিরভাগ থিম থাকে ফ্লোরাল। এ ছাড়া বোহো থিম, কনটেম্পোরারি, জাপানিজ থিমে নকশা করা হয়। অন্য দেশের নানা নকশা নিয়ে ফিউশনধর্মী নকশাও রয়েছে তাদের। আরও নকশার পরিকল্পনা চলছে। বোহো থিমের নান্দনিক পর্দা নজরকাড়ার মতো। এ ছাড়া নেট, এমব্রয়ডারি, মসলিনের পর্দাও রয়েছে।
মোটিফ হিসেবে ব্যবহার করেন দেশের ষড়ঋতুর থিম। রানারে দেখা মেলে ফুলেল মোটিফ, কুশন কভার এবং বেড কভারে ফুলের মোটিফের পাশাপাশি আছে জাপানিজ এবং কনটেম্পোরারি থিম। বেশিরভাগ পর্দা ও বেড কাভার রয়েছে কটন, মসলিন এবং নেট কাপড়ে। কটনের টেবিল রানারের সঙ্গে ফিউশনধর্মী ক্রুশকাঠির কাজ চোখে পড়ার মতো।
উদ্যোক্তা রুবাইয়াত বলেন, সব সময় চেষ্টা থাকে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী নতুন নকশার নানা সামগ্রী আনার। যাতে ক্রেতা তাদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য এখানে পেয়ে যায়। আমি নিজে কর্মীদের শিখিয়ে নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি করি সব পণ্য।
এখনও পুরোটা অনলাইনভিত্তিক থাকলেও খুব তাড়াতাড়ি শোরুম দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেন নিখুঁত কাজের কারিগর রুবাইয়াত। সব ধরনের হোম ডেকর পণ্য নিয়ে শিগগিরই শোরুম করার ইচ্ছা তার, যেখানে সব অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী নানা ধরনের পণ্য রাখতে চান তিনি।