মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪ ১২:৩২ পিএম
সামাজিক মাধ্যমে বই আলোচনা করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন মাইশা রশিদ
বই পড়তে কে না ভালোবাসে? বইয়ের গল্প শুনতেও অনেকের ভালো লাগা আছে। বইটার কী ভালো লাগল-ভালো লাগল না, কোন জায়গা একটু অন্যরকম হলে ভালো হতো-এমন সব গল্পই তিনি প্রাঞ্জল ভাষায় বলেন। আর রাজ্যের মানুষ তা মুগ্ধ হয়ে শোনে। বই পড়তে আগ্রহী হয়। কেতাবি ভাষায় বই রিভিউ বললেও তিনি এটাকে বই আলোচনা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে মাইক্রোবায়োলজি পড়াশোনার পাশাপাশি বইয়ের গল্প বলে সবার নজর কেড়েছেন মাইশা রশিদ।
বই পড়ে তা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করেন। কৌতূহলবশত ব্যক্তিগত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পড়া বইগুলো স্টোরি কিংবা পোস্ট করে অনুভূতি জানান। এতেই ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। মানুষের ভালোই ফিডব্যাক আসে। তারা এমন আলোচনা আরও চায়। ঠিক সে কারণেই ইনস্টাগ্রাম পেজ Bookaholic-এ পুরোদমে বই আলোচনা শুরু করেন। এভাবে তার শুরু হলেও এরপর আর পেছন ফিরে তাকাকে হয়নি। শুধু বই আলোচনাই নয়, এ বইমেলায় লেখক হ্যাল এলরড, বইটির নাম দ্য মিরাকল মর্নিং অনুবাদ করেছেন। বইটি প্রকাশিত হয়েছে শব্দশৈলী প্রকাশনী থেকে।
শুরুর দিকে বইয়ের সুন্দর ছবি আর আলোচনা করতেন। একসময় দেখলেন মানুষ ভিডিও বেশি পছন্দ করে। এখন মূলত ভিডিও বেশি করেন। ফেসবুকে তার পেজের নাম মাইসা.রিডস। সেখানে হাজার হাজার ভক্ত তার আলোচনা শুনে মতামত জানান। আবার একইভাবে ইনস্টাগ্রামেও তার ভক্ত অসংখ্য।
বইয়ের মান যাচ্ছেতাই। রিভিউ করতে দিলেও মাইশা তা করেন না। তিনি মনে করেন তার রিভিউ দেখে একজন পাঠক তার টাকা খরচ করে বই কিনবে; সে ক্ষেত্রে আমি একজনের টাকা খরচের কারণ হচ্ছি। তাই আমার ভিডিওটা অবশ্যই ভালো হতে হবে এবং আমি বই নেওয়ার সময় প্রথম শর্ত হিসেবে এটাই বলি যে বই রিভিউর পুরো স্বাধীনতা আমার থাকবে। বই আলোচনা করার সময় বইটা কী মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করছে কিংবা বইটার অনুভূতি কতটা নিজের মধ্যে আয়ত্ত করতে পেরেছে সেগুলো প্রাধান্য দেন।। মাইশা এ পর্যন্ত ২০০টির বেশি বইয়ের লিখিত আলোচনা করেছেন। আর ভিডিও ৬০টির মতো। তবে সংখ্যার চেয়ে তিনি মানসম্মত কাজে বিশ্বাসী। ২০১৯ সালে প্রথম আয় পনেরোশ টাকা হলেও এখন যতটা আয় হয় তা দিয়ে নিজের খরচ চলে যায় তার।
গায়ক অনুপম রায়কে কে না চেনে? মাইশার প্রিয় গায়ক। অনুপম রায়ের লেখা ‘আমাদের বেঁচে থাকা’ বইটির আলোচনা করেছেন মাইশা। সে আলোচনা গায়ক অনুপম রায় পড়ে মাইশাকে শুভকামনা জানিয়েছিলেন। এটা মাইশার জন্য বড় অনুপ্রেরণা বলে জানান।
শুধু বুক রিভিউতে মাইশা থেমে নেই। তিনি কনটেন্ট রাইটার হিসেবে সমান জনপ্রিয়। রকমারি, শেকড়, লাইফ স্কিলসহ আরও অনেক জায়গায় কনটেন্ট রাইটার হিসেবে তিনি কাজ করেছেন। দেশের বাইরেও মাইশার কাজ আলো ছড়াচ্ছে। তিনি জানান, ভারতীয় লেখকদের থেকেও রিভিউর জন্য বই পাচ্ছেন। শুরুর দিকে তিনি টেন মিনিট স্কুলের অ্যাফিলিয়েটর হিসেবে কাজ করেছেন। এ ছাড়া দুটো প্র্রকাশনীর সঙ্গে নিয়মিত কাজ তার অনেক দিন থেকেই চলছে। বই পড়ে তার আলোচনা করবেন। এজন্য টাকা দিতে হবে কেন? মানুষের এমন ভাবনা মাইশাকে খুব দুঃখ দেয়। আবার বইয়ের মান যেমনই হোক না কেন, বইটাকে ভালো করে বলার জন্য একটা চাপ থাকে। এগুলো তার কাজের চ্যালেঞ্জ। তবে বই রিভিউ বা আলোচনাকারীর সংখ্যা বেড়েছে। একে মাইশা ভালো চোখে দেখছেন। মাইশা একটু বুদ্বি খাটিয়ে কাজ করেন। এই যেমন জ্যামে বসে বই পড়েন। কীভাবে রিভিউ করবেন তা-ও গুছিয়ে ফেলেন। ফলে বাড়তি সময় তার এ কাজে ব্যয় করতে হয় না। বাবা-মা তাকে সব সময় সাহায্য করেন। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি রিভিউ করতে তার একটুও বেগ পেতে হয় না।
বই পড়ে পুরস্কার পাওয়া তার ছোটবেলা থেকেই। বুক রিভিউ শুরু করার পর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, বুক অ্যাসোসিয়েশন থেকে তিনি সম্মাননা, সার্টিফিকেট পেয়েছেন। তবে বুক রিভিউয়ার হিসেবে বুকওয়ার্ম অ্যাসোসিয়েশন থেকে অ্যাওয়ার্ড তার অনন্য অর্জন। পড়াশোনার পাশাপাশি বই নিয়ে কাজ করাটাকে আরও বড় পরিসরে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আগামীর ভাবনা তার এমনই।