দন্ত্যস রওশন
প্রকাশ : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:৪১ পিএম
আপডেট : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:১০ পিএম
অলংকরণ : জয়ন্ত সরকার
ভাইয়া কাল তোমার জন্মদিনে কী করবে? আবরার বলে, কিছুই করব না। স্কুল থেকে ফিরে লম্বা একটা ঘুম দেব। দিয়ানা বলে, ঘুম থেকে উঠে কী করবে? তখন তো সন্ধ্যা হয়ে যাবে, কেক কাটবে না? আবরার বলে, বাবা বলেছে এবার কেক কাটার দরকার নেই। কথা শুনে মন খারাপ হয়ে যায় দিয়ানার। বলে, বাবার কাছে কি টাকা নেই? আবরার ছোট বোনের কথার জবাব দেয়, তা তো আমি জানি না। মনে হয় নেই। দিয়ানা বলে, কোনো চিন্তা করবে না ভাইয়া। আমার মাটির ব্যাংকে অনেক টাকা আছে। চলো ব্যাংকটা ভেঙে টাকা বের করি। না, না দরকার নেই। ওটা তোর জন্মদিনের জন্য থাক। তুই খরচ করিস। দিয়ানা কিছুতেই কিছু শুনবে না। সে ভাইয়াকে টেনে নিয়ে যায় পাশের ঘরে। যেখানে ব্যাংকটা রাখা আছে। দুই ভাইবোন ছুটে যায় সেখানে। গিয়ে দেখে ব্যাংক ভাঙা! কোনো টাকা নেই। ভাঙা ব্যাংক দেখেই দিয়ানা কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। মা ছুটে আসে রান্নাঘর থেকে। কী হয়েছে তোর? কাঁদছিস কেন? আবরার মাকে ভাঙা ব্যাংকটা দেখিয়ে দেয়। ভাঙা ব্যাংক দেখে মায়েরও মন খারাপ হয়ে যায়। মা বলে, এটা নিশ্চয় আহিনের কাজ। ও কলেজ যাওয়ার সময় আমার কাছে টাকা চেয়েছিল। আমি দিইনি।তারপর এ ঘরে ঢুকল। আমি ঠাসঠাস শব্দ পেলাম। ও ছাড়া এ কাজ কেউ করেনি। দিয়ানার কান্না কিছুতেই থামে না। হঠাৎ আহিন ফোন করে মাকে। বলে, তাড়াতাড়ি দিয়ানাকে দাও তো। মোবাইলটা এগিয়ে দেয় মা। কথা বলো, তোমার বড় ভাইয়া ফোন করেছে। আহিন বলে, দিয়ানা। আমি খুবই সরি। তোর মাটির ব্যাংকটা ভেঙে ফেলেছি। আমার টাকার খুব দরকার ছিল। তুই মন খারাপ করিস না। আমি সুন্দর একটা মাটির ব্যাংক কিনে নিয়ে আসছি।
আজ টিউশনির অনেক টাকাও পেয়েছি। বাসায় এসে তোর সব টাকাও দিয়ে দেব। দিয়ানা খুব খুশি। সে ঘর গোছাতে থাকে। বাসায় কয়েকটি বেলুন ছিল সেগুলো ফুলিয়ে ঘরে ঝুলিয়ে দেয়। এখন ভাইয়ার আসার অপেক্ষা। তারা দুজন বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে চেয়ে আছে কখন ভাইয়া আসবে। সন্ধ্যা হয়ে গেল কিন্তু কিছুতেই আহিন ভাইয়া আসছে না। হঠাৎ দরজায় কলিং বেল বেজে ওঠে। আবরার, দিয়ানা দুজনই দৌড়ে যায়। নিশ্চয় ভাইয়া এসেছে। দরজা খুলতেই দেখে অচেনা একটা লোক। তিনি বলেন, আপনাদের একটা পারসেল আছে। ভেতরে জন্মদিনের কেক। নিন, এখানে একটা সাইন করুন। ক্লাস ফাইভে পড়া আবরার সাইন করে। ভাইবোন দুজনই খুশি। দিয়ানা বলল, আগে বাবা আর বড় ভাইয়া আসুক তারপর কেক কাটা হবে। মা বলল, বাপরে এত বড় কেক! আবরারের আর অপেক্ষা করা হলো না। সে কেকের প্যাকেটটা খুলে ফেলল। ভেতরে লেখা, ‘শুভ জন্মদিন আবরার ভাইয়া-দিয়ানা’। দিয়ানা নিজের নাম কেকে দেখে আনন্দে নেচে উঠল। হঠাৎ রান্নাঘর থেকে মা ছুটে এলো। বলল, তোমার বড় ভাইয়া ফোন করেছে। তোমার বাবা নাকি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আহিন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাছে। তোমরা বাসায় থাকো। আমি হাসপাতালে যাচ্ছি। অনেক রাত হয়ে যায়। মা-বাবা, বড় ভাইয়া কেউ বাসায় ফেরে না। দিয়ানা বলে, ভাইয়া কেকটা ফ্রিজে রেখে দিই। সবাই আসুক তারপর কাটব। আবরার বলে, হ্যাঁ, ঠিক বলেছো, রেখে দাও। বাবা-মা, বড় ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করতে করতে একসময় ওরা ঘুমিয়ে পড়ে।