ভক্তি নদী
রহিম শুভ, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:০০ পিএম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৩:১৩ পিএম
শুধুমাত্র সাইনবোর্ডেই আছে ভক্তি নদীর অস্তিত্ব
ঠাকুরগাঁওয়ের চিরচেনা একটি নদীর নাম ভক্তি নদী। সদর উপজেলার ভেলাজান দিয়েই বয়ে গেছে এই নদী। জনশ্রুতি আছে একসময়ের খরস্রোতা ভক্তি নদীতে জাহাজ চলত। তবে সিএস, আরএস ম্যাপে পাওয়া যায়নি এই নদীটির কোনো অস্তিত্ব। তাই নাম নেই জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তালিকায়ও।
ঠাকুরগাঁওয়ের ভেলাজান বাজার সেতু দিয়ে যাওয়ার পথে বাঁ পাশে তাকালে যে কারও চোখে পড়ে রংচটা একটি সাইনবোর্ড। তাতে লেখা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঠাকুরগাঁও। ভক্তি নদী, মোট দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার। ভক্তি নদীর উৎপত্তি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া ও চিলারং ইউনিয়নের বিভিন্ন নিম্নভূমি থেকে। নদীটি মূলত রাণীশংকৈল উপজেলার কুলিক নদীর উপনদী। রুহিয়া, আখানগর, চিলারং এবং রায়পুর ইউনিয়ন অতিক্রম করেছে ভক্তি নদী।
সরজমিনে দেখা যায়, নদীটি এখন নিম্নভূমিতে পরিণত হয়েছে। চাষ হচ্ছে ধান আর ভুট্টা। তবে বর্ষাকালে এই নদীতে অনেক পানিপ্রবাহ থাকে। নদীটি খনন প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
ভেলাজান বাজারে কিসমত আলী বলেন, বাজারে ঢুকতে সাইনবোর্ড আর বর্ষাকাল এলে বোঝা যায় এটি নদী। বর্ষাকাল চলে গেলে বোঝার আর উপায় থাকে না। নদীটা ভরাট করে জায়গা দখল করে নিয়েছে স্থানীয় অনেক মানুষ।
মানিক হোসেন নামে একজন বলেন, এখনও নদী খনন করলে পুরোনো লোহার টুকরা আর কাপড়ের পুঁটলি পাওয়া যায়। দাদার কাছে শুনছি এই নদীতে একটা জাহাজ ডুবে গেছিল।
আব্দুল আজিজ বলেন, সরকার চাইলে সব সম্ভব। আমরা এলাকাবাসী চাই নদীটি পুনঃখনন করা হোক। নদী থাকলে কৃষকের সেচ দেওয়াসহ দেশি মাছ পাওয়া যাবে। স্থানীয় আরেক বাসিন্দা আব্দুস সামাদ বলেন, নদীর জায়গা দখল করে ধান, গম, ভুট্টা চাষ হচ্ছে। নদীর পাড় কেটে ভরাট করেছেন স্থানীয়রা। নদীটি খনন হলে এই এলাকার কৃষি প্রাণ ফিরে পাবে।
সদর উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার আবু তালেব বলেন, এসএ, সিএস ও আরএস রেকর্ডের নকশায় নদীটির অস্তিত্ব নেই। সম্প্রতি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ভক্তি নদী। এ বিষয়ে কমিশন চিঠি দিলে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক আট সদস্যের একটি কমিটি করেন। আমরা কাজ করছি।
ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়া বলেন, ‘১৮৩৬ সালে ভয়াবহ এক ভূমিকম্পে নদীটি বিলীন হয়ে যায় বলে জানতে পেরেছি। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন থেকে একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, ঠাকুরগাঁওয়ে ভক্তি নামে একটি নদী রয়েছে। কিন্তু কমিশনের তালিকায় নদীটি বাদ পড়েছে। পরে জেলা প্রশাসক আট সদস্যের কমিটি গঠন করেন। স্থানীয়দের মুখে এ নদীর নাম শুনে এর নামকরণ করা হয়েছে। এখন এটি নিম্নভূমি। বর্ষাকালে দেড় থেকে দুই মাস পানি থাকে। এর সমস্ত জমি ব্যক্তিমালিকানাধীনে রেকর্ড রয়েছে।