রুবাইয়া হাসনাইন
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৩৬ পিএম
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৪১ পিএম
সুন্দর ছবিটি এঁকেছে ইমরুল কায়েস রাফসান। সে ঢাকার এস ও এস হারম্যান মেইনার কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী
দলনেতা মিথিকা। মিথিকা হঠাৎ বলে উঠল, এবার ভাষার মাসে ডিফারেন্ট কিছু কাজ করতে হবে। তার জন্য প্ল্যানিং করা দরকার। বললাম, তা তো বুঝলাম। তবে বাংলিশ ভাষায় কথা বলছিস কেন? মিথিকা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। বুঝলাম, মিথিকা হয়তো ওর কথাগুলো নিয়ে ভাবছে। কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করলাম, কী হলো, কথা বলছিস না কেন? মিথিকা এবার বলল, বাংলিশ বলছি কোথায়? ঠিকই তো আছে। বললাম, ঠিক নেই। ডিফারেন্ট, প্ল্যানিং এ শব্দগুলো না বললেই হতো। তার বদলে ব্যতিক্রম আর পরিকল্পনা বললে তো আরও ভালো হতো। মিথিকা বলল, তাই তো! খেয়াল করিনি। স্যরি। তুই আবারও ভুল করলি। ‘স্যরি’ নয় ‘দুঃখিত’। সে এবার জিবে কামড় দিল। ভাবলাম, মিথিকা লজ্জা পেয়েছে। তাই আর কথা বাড়ালাম না। বললাম, এবার বল, কী পরিকল্পনা করা যায়। মিথিকা এবার বলল, শোন বড় করে পোস্টার করব। পোস্টারে অনেক রকম ছবি আঁকব। ভাষা দিবস নিয়ে। ভাষা রক্ষা দাবির ওপর। বললাম, চমৎকার পরিকল্পনা। খুব ভালো হবে।
মিথিকা বলল, অন্যদের সঙ্গেও বিষয়টা নিয়ে কথা বলব। তবে মূল কাজটা তোকেই করতে হবে। আমরা সাহায্য করব। তুই তো ভালো আঁকতে পারিস, লিখতেও পারিস। তাহলে তুই ব্যাপারটা গুছিয়ে ফেল। তোকেই পোস্টারটা উপস্থাপন করতে হবে। মনে রাখিস, সময় তেমন নেই। পরদিন সকালে আব্বুকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা আব্বু, ভাষার দাবি বিষয়টা আসলে কেমন? আমরা তো আমাদের ভাষায়ই কথা বলি। নিজেদের ভাষার আবার দাবি করার কী আছে?
আব্বু বললেন, আছে। অনেক রকমই হতে পারে। ভাষারও শত্রু আছে, মিত্র আছে। ধরো, তুমি যে ভাষায় কথা বলো, সেটা যদি অন্য ভাষার লোক মানতে না পারে, উল্টো তার ভাষায় তোমাকে কথা বলতে বলে, তখন কি তুমি মানবে? বললাম, না।
হ্যাঁ, মানবে না। তুমি তখন তোমার ভাষায় কথা বলার জন্য দাবি করবে, তাই না? এটাই ভাষার দাবি। এমন দাবিটাই উঠেছিল বায়ান্ন সালে। তখন ভাষা নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল। সবাই ‘ভাষার দাবিতে’ গর্জে উঠেছিল। ফলে আমাদের ভাষার শত্রুরা আমাদের ওপর জোরজুলম করতেছিল। কিন্তু আমাদের লোকেরা অনেক কঠোর অবস্থানে থেকে প্রতিবাদ করেছিল। সে সময় অনেকেই শহীদ হয়েছিল। বুঝলে?
বললাম, হ্যাঁ। কিন্তু ভাষা আন্দোলন তো হয়ে গেছে। এখন আবার ভাষার দাবির কথা বলছে কেন সবাই? আব্বু বললেন, ভাষা তো পেয়েছি, কিন্তু তাকে রক্ষা করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা যাতে বিকৃত না হয়, অন্য ভাষা যেন এ ভাষা খেয়ে ফেলতে না পারে, তার জন্য কাজ করতে হবে। সজাগ থাকতে হবে।
আব্বুর কথা শুনে মিথিকার কথা মনে পড়ছিল। মনে মনে ঠিক করলাম, ভাষার শুদ্ধিকরণ দাবি নিয়েই পোস্টার বানাব এবং সেটা স্কুলে উপস্থাপন করব। দুই দিনের মধ্যেই পোস্টারের কাজ শেষ করে ফেললাম। পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি। পোস্টার নিয়ে স্কুলে গেলাম। সবাই খুব খুশি। স্যারেরাও ভীষণ খুশি হলেন। আমাদের গ্রুপের ছয়জন সদস্য। মিথিকা, মিফতাহুল, আরুশা, সুমাইয়া, রাইসা আর আমি। অন্যান্য গ্রুপেরও সবাই এসেছে। ষষ্ঠ শ্রেণির সাদিকা এসে বলল, ‘চল ব্রো, শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে আসি।’ সাদিকাকে বললাম, ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছে, তাদের সম্মান করতে এসেছো। তাই বাংলা ভাষায় কথা বলো। ভাষাকে ভালোবাসতে শেখ। এটা ভাষার দাবি, ভাষার প্রতি ভালোবাসা। না হলে তোমার সঙ্গে ফুল দিতে যাব না। সাদিকা বলল, আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে ক্ষমা করে দিও। বললাম, ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই। চলো, সবাই মিলে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে আসি।
সপ্তম শ্রেণি, পলাশ সারকারখানা কলেজ, পলাশ, নরসিংদী