শাহিনা নদী
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:১১ পিএম
মডেল : আয়েশা, প্রবা ফটো
শীতের আর্দ্রতাকে বিদায় জানিয়ে সময়টা এখন বসন্ত। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়া বদলের এই সময়টাতে ত্বকের জন্য তাই প্রয়োজন একটু বাড়তি যত্ন
শীতের রুক্ষতায় ত্বক হারায় উজ্জ্বলতা, সজীবতা এবং সেই সঙ্গে চামড়াটাও কেমন কুঁচকে আসে। বসন্তের আগমনী বার্তা গরমের আভাস জানান দিলেও ত্বক এখনও রয়েছে নির্জীব। তাই এই সময়েও ত্বকের প্রয়োজন যত্নের।
মুখের যত্ন
আমাদের শরীরের সব থেকে আকর্ষণীয় অংশ মুখ তথা চেহারা। মুখের ত্বক অনেক বেশি পাতলা ও সেনসিটিভ হয়। সেজন্য সহজেই ঋতু পরিবর্তনের চাপ মুখের ত্বকের ওপর বেশি পরিলক্ষিত হয়। শীত বিদায় নেওয়ার এই সময়েও রয়ে গেছে শীতের রুক্ষতা। সেজন্য মুখ ধোয়ার পরপরই ত্বক অনেক বেশি টান টান ও শুষ্ক দেখায়। শুষ্ক ত্বক দেখতে প্রাণহীণ মনে হয়। এর থেকে মুক্তির উপায় হলো প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। এ ছাড়া ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ ও নিয়মিত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের সজীবতা বজায় থাকবে। অনেক সময় ত্বকে দাগ ও রিঙ্কেল দেখা যায়। এসব রোধ করতে, ফ্যাটি অ্যাসিড ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি শাকসবজি, মাছ ও ফলমূল খেতে হবে বেশি। যেহেতু মুখের ত্বক তিন ধরনের হয় সেজন্য প্রথমে ত্বকের ধরন নির্বাচন করে তারপরই ত্বকে প্রসাধনী ব্যবহার করুন। এ সময় সানবার্ন খুব বেশি হয় এবং তা কেবল মুখে নয়, বরং পিঠ, ঘাড় এমনকি হাত-পায়েও। সেজন্য বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্যই ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। তবে এজন্য সানস্ক্রিনের এসপিএফ-এর মাত্রা ২০++ হওয়া উচিত।
ত্বকের আরেকটি সমস্যা হলো চামড়া ঝুলে পড়া। চামড়া যাতে ঝুলে না যায় সেজন্য ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে হবে। গোসলের আগে কিংবা রাতে ঘুমানোর আগে মুখে কিছুটা অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল দিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। তাতে মুখের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া হারবাল চা পান করলেও রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
মুখের ত্বকের অন্যতম একটি বড় সমস্যা হলো ব্ল্যাক ও হোয়াইট হেডস। এটি দূর করতে মুখের যে স্থানে এটি জমা বেঁধেছে সেখানে ভালোভাবে পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে গরম পানির ভাপ দিন। এরপর ফ্লাকার দিয়ে নিজেই সেগুলো তুলে ফেলুন। এ ছাড়া মুখের মৃত কোষ ও কালচে ভাব দূর করে সজীবতা ফিরিয়ে আনতে চালের গুঁড়া ২ চা চামচ সঙ্গে ১ চা চামচ টক দই কিংবা টমেটোর রস, আলুর রস ১ চা চামচ ও একটা লেবুর অর্ধেকটা নিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। ৩-৪ মিনিট ধরে স্কাবিং করার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর কিছুটা কাঁচা হলুদ বাটা, পরিমাণমতো কাঁচা দুধ ও মধু মিশিয়ে প্যাকটি ভালোভাবে মুখ, গলা, ঘাড় ও হাত-পায়ে লাগিয়ে রাখুন। ৫-১০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। ত্বক অনেক সজীব ও উজ্জ্বল দেখাবে।
গলা ও ঘাড়ের যত্ন
শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ন্যায় গলা এবং ঘাড়ের যত্ন নেওয়া জরুরি। কারণ মুখের ত্বকের সঙ্গে গলা কিংবা ঘাড়ের শেড ম্যাচ না করলে তা দেখতে অনেকটা বেমানান লাগে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মুখের বা হাত-পায়ের যত্ন নিলেও, গলা কিংবা ঘাড়ের ঠিক সেভাবে যত্ন নেওয়া হয় না। ফলে, ত্বক ড্যামেজ কিংবা সানবার্ন হয়ে কালচে কিংবা লালচে দাগ বসে যায়। এমনকি এ সময়ে যত্ন না নিলে গলার চামড়া ঝুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য মুখে যে ক্রিম ব্যবহার করবেন সেটি গলায়ও লাগিয়ে নিন। পাশাপাশি রাতে শোবার সময় অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া ঘরোয়া উপায়ে কালচে দাগ দূর করতে সামান্য পরিমাণে বেকিং সোডা ও পরিমাণমতো কফি পাউডার, অ্যালোভেরা জেল, চিনি ও লেবু একসঙ্গে মিশিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। বাইরে বের হওয়ার আগে মুখের পাশাপাশি গলা এবং ঘাড়েও সানস্ক্রিন লাগাতে হবে।
অন্যান্য অঙ্গের যত্ন
যাদের শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন- পিঠ, বুক, পেট, উরু ইত্যাদি স্থানের ত্বক অনেক বেশি শুষ্ক/টান-টান কিংবা ফেটে গিয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে আছে তারা এ সময় নিয়মিত গ্লিসারিন সাবান দিয়ে গোসল করবেন। গোসলের পর ভেজা শরীরে অলিভ অয়েল, লোশন বা এ ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করলে ত্বকে আর্দ্রভাব বজায় থাকবে এবং ত্বক কোমল ও সতেজ হবে।