রিকোর্স চাকমা, রাঙামাটি
প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৪৭ পিএম
রাঙা বেস ক্যাম্পে রয়েছে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য রাত্রিযাপনের তাঁবু ক্যাম্প
নীল জলঘেরা কাপ্তাই লেকের মাঝে গাছগাছালির ছায়া সুনিবিড় সবুজ এক দ্বীপে রাঙা রঙের টিনের ছাউনিতে সাতজন উদ্যোক্তা মিলে সদ্য গড়ে তুলেছেন ‘রাঙা বেস ক্যাম্প’ রেস্টুরেন্ট। রাঙামাটি সদর উপজেলার বালুখালী ইউনিয়নের জারুলছড়ি, হাজারীবাগ এলাকায় সুবলং ঝরনায় যাওয়ার পথে কাপ্তাই লেকের এক দ্বীপে এই রেস্টুরেন্টের অবস্থান।
এই রাঙা বেস ক্যাম্পে রয়েছে অ্যাডভেঞ্চার প্রেমিকদের জন্য রাত্রিযাপনের আকর্ষণীয় তাঁবু ক্যাম্প, পিকনিক-সেমিনারের ব্যবস্থা, নিজস্ব বোটের মাধ্যমে পরিবহন, নানা স্বাদের মানসম্মত খাবারসহ বিশেষ প্যাকেজের সুবিধা থাকায় প্রতিদিন ছুটে আসছেন পর্যটকরা।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালে রাঙামাটি শহরের কাছেই কাপ্তাই লেকের বুকে পেদা টিং টিং নামের রেস্তোরাঁ ও রিসোর্ট চালু হয়। এটিই ছিল জেলার প্রথম জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ ও রিসোর্ট। এর পরপরই বিভিন্ন সময়ে কাপ্তাই লেকে গড়ে উঠতে থাকে রিসোর্ট-কটেজ। গত ৫ বছরের ও বেশি সময়ে কাপ্তাই লেকের পারে ও বিভিন্ন দ্বীপে ২০ থেকে ২৫টি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া কাপ্তাই লেকে ভ্রমণের জন্য গত কয়েক বছরের ব্যবধানে যুক্ত হয়েছে অনন্ত ১০টি হাউস বোট। এসব বোটে থাকা ও খাওয়ার সুবিধা রয়েছে। এককথায় কাপ্তাই লেককে কেন্দ্র করে বদলে যাচ্ছে রাঙামাটি পর্যটন শিল্প।
চলতি বছরে যাত্রা শুরু হয়েছে ‘রাঙা বেস ক্যাম্প’ নামক রেস্টুরেন্টের। এরই মধ্যে পর্যটকদের কাছে নজর কাড়ছে রেস্টুরেন্টটি। রাঙামাটি শহরের পূর্বদিকে কাপ্তাই লেকের একটি দ্বীপে গড়ে তোলা হয়েছে এই রেস্টুরেন্টটি। রাত্রিযাপনের জন্য তাঁবু ক্যাম্প, নানা স্বাদের মানসম্মত খাবারের ব্যবস্থা, পিকনিক ও সভা-সেমিনারের ব্যবস্থা, দিনব্যাপী ভ্রমণের জন্য বিশেষ প্যাকেজসহ পর্যটকদের আকর্ষণের নানা ধরনের সুব্যবস্থা রয়েছে।
রাঙা বেস ক্যাম্পের পরিচালক রক্তিম দেওয়ান জানান, আমাদের রেস্টুরেন্টের পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের পাশাপাশি থাকবে মানসম্মত নানা স্বাদের খাবার, পিকনিক ও সভা-সেমিনারের ব্যবস্থা, অ্যাডভেঞ্চার প্রেমিকদের জন্য রাত্রিযাপনের বিশেষ তাঁবু ক্যাম্প। এ ছাড়া জনপ্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা করে আটজনের ভিত্তিতে একটা প্যাকেজ চালু থাকবে রেস্টুরেন্টে। প্যাকেজের মধ্যে থাকবে রেস্টুরেন্টের নিজস্ব বোটের মাধ্যমে পর্যটকদের আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা, নাশতা, দুপুরের খাবার, সারা দিন রাঙামাটির দর্শনীয় জায়গাগুলো ঘুরে দেখানো এবং রাতের খাবার ও তাঁবুতে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা।
তিনি আরও জানান, রাঙামাটি একটা পর্যটন নগরী। পর্যটকদের মানসম্মত খাবার ও সেবা দিতে মূলত তাদের এই রেস্টুরেন্ট করা এবং তাদের রেস্টুরেন্টটিকে কেন্দ্র করে এই এলাকার মানুষদের একটা আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া।
চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা মাসুদ রানা সোহেল, লিটন, হাবিবুর রহমান, পারফেজসহ বেশ কয়েক পর্যটক বলেন, আমরা সকালে বন্ধুরা মিলে রাঙামাটিতে বেড়াতে এসেছি। সুবলং যাওয়ার সময় রেস্টুরেন্টটি দেখে বোট থেকে নেমে ঘুরে দেখলাম। বেশ ভালো লেগেছে, জায়গাটাও সুন্দর। এবারে থাকার কোনো প্রস্তুতি ছিল না। তবে সামনের বার এলে আমরা বন্ধুরাসহ এখানেই তাঁবুতে রাত্রিযাপন করব।রাঙামাটি পর্যটন শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফদাংতাং রান্দাল বলেন, এখানে স্থানীয় লোকজন পর্যটন স্পটের উদ্যোক্তা হলেও তারা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। তাদের জন্য সরকার থেকে প্রণোদনা বা ব্যাংক থেকে বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে রাঙামাটির পর্যটন শিল্প আরও এগ্রিয়ে যাবে।
চাকমা সার্কেলের চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, যে এলাকায় পর্যটন গড়ে তোলা হচ্ছে, সে এলাকার স্থানীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করে তাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, এতিহ্য, ধর্ম, আচার সবকিছুর সঙ্গে যেন সম্পৃক্ত করে তাদের সঙ্গে সংহতি রাখা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আমি মনে করি, নতুন কিছু অভিনব জিনিস দেখতে আমাদের এই অঞ্চলে বাইরের মানুষ আসুক এবং সবার যে ধর্ম, কৃষ্টি রয়েছে সেটার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে যেন আমাদের পর্যটনটা এগিয়ে যায়।