× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কাম্পুচিয়ার পথে প্রান্তরে

তানভীর কনক

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:২৪ এএম

অ্যাংকর ওয়াট

অ্যাংকর ওয়াট

১৪ দিনের এক সফরে গিয়েছিলাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কাম্পুচিয়া বা কম্বোডিয়াতে। সঙ্গে ছিল সাইকেল। ঘুরে বেড়িয়েছি সে দেশের গ্রাম থেকে শহরে, লোক থেকে লোকালয়ে। প্রত্যক্ষ করেছি তাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য নানা ধরনের স্থাপত্য।

ট্রিপের তৃতীয় দিন সিয়েম রিপ থেকে আমরা সাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হই কম্বোডিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনা অ্যাংকর ওয়াটের উদ্দেশে।অ্যাংকর ওয়াটশব্দটির অর্থ হচ্ছে নগর মন্দির। কম্বোডিয়ার জাতীয় প্রতীক এই অ্যাংকর ওয়াট। ইহা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ধর্মীয় স্থাপনা। ১৮৬৩ সালে প্রথম প্রবর্তনের পর থেকে কম্বোডিয়ার সব পতাকাতেই অ্যাংকর ওয়াটের প্রতিকৃতি স্থান পেয়েছে। সারা বিশ্বে এটিই একমাত্র ভবন যা কোনো দেশের পতাকায় প্রদর্শিত হয়েছে। বিখ্যাত খেমার সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা রাজা দ্বিতীয় সূর্যবর্মণ দ্বাদশ শতাব্দীতে তার সাম্রাজ্যের রাজধানী প্রধান উপাসনালয় হিসেবে বর্তমান সিয়েম রিপ শহর থেকে প্রায় সাড়ে কিলোমিটার উত্তরে অ্যাংকর ওয়াট মন্দিরটি নির্মাণ করেন। হিন্দু দেবতা বিষ্ণুকে উৎসর্গ করে এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়। প্রথমে হিন্দু মন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হলেও কম্বোডিয়ায় সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থার ফলস্বরূপ পরে অ্যাংকর ওয়াট বৌদ্ধ মন্দিরে পরিণত হয়। ১৯৯২ সালে অ্যাংকর ওয়াট ইউনেস্কোরওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটহিসেবে বিবেচিত হয়। কম্বোডিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থান হিসেবে বিবেচিত এই প্রাচীন স্থাপনা দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার বিদেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে।

প্রাচীন মন্দিরের ওপর শতবর্ষী মহীরুহ

অ্যাংকর ওয়াটের আশপাশে খেমার সাম্রাজ্যের আমলে নির্মিত আরও বেশ কিছু মন্দির স্থাপনা রয়েছে। এদের মধ্যে অন্যতম সুপরিচিত হচ্ছে বায়ন মন্দির। ছাড়া আমরা টাকিও এবং টা ফ্রম মন্দির ঘুরে দেখেছি। পুরো এলাকা এত সুবিশাল যে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবকিছু দেখতে জানতে অনেক সময় লাগে। তাই হয়তো এই এলাকা পরিদর্শনে সময়ের ব্যাপ্তিভেদে টিকিটের ব্যবস্থা রয়েছে। টিকিট কিনে প্রথমেই চলে যাই টা ফ্রম মন্দিরে। প্রাচীন স্থাপত্যকলা ছাড়াও পর্যটকদের কাছে এই মন্দির পরিচিত আরেকটি কারণে। হলিউডের বিখ্যাত মুভি। মন্দিরের প্রধান ফটক দিয়ে ঢোকার পরই ছায়া সুনিবিড় পথ। সেই পথ পেরিয়ে মন্দিরের মূল স্থাপনায় ঢুকতেই চোখে অবাক বিস্ময় খেলা করে। কয়েক শত বছর আগের মন্দির, তার ভেতর আলো আঁধারির খেলা, প্রতিটি পাথরের ভাঁজে গা ছমছমে আদিম বুনো গন্ধ, দেয়াল আঁকড়ে বেড়ে ওঠা শতবর্ষী মহিরুহÑ এসব অবলোকন করতে করতে অবচেতন মন যেন এক ঝটকায় কয়েক শত বছর পেছনে চলে যায়। যেখানে শুধুই জন্ম নেয় ঘোর লাগা কিছু মুহূর্তের, বাস্তবতা পরাবাস্তবতার মাঝে ব্যাখ্যাতীত কিছু রহস্যময়তার!

টা ফ্রম মন্দির দেখা শেষে সাইকেল নিয়ে চলতে শুরু করি বায়ন মন্দিরের উদ্দেশে। বলে রাখা ভালো যে, অ্যাংকর ওয়াট ওপরে উল্লেখিত মন্দিরগুলো একটি বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে অবস্থিত। এলাকাটি অ্যাংকর থম নগর এলাকার অন্তর্ভুক্ত। বর্গকিলোমিটার আয়তনের অ্যাংকর থম ছিল খেমার সাম্রাজ্যের সর্বশেষ রাজধানী। অ্যাংকর থম এর আশপাশের রাস্তাগুলো এককথায় অসাধারণ। রাস্তার উভয় পাশেই রয়েছে সাইকেলের জন্য আলাদা লেন। পিচঢালাই করা ঝকঝকে-তকতকে মসৃণ রাস্তার দুপাশে আকাশছোঁয়া বিশাল বড় বড় সব গাছ পথের শোভা বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। কিছুদূর পর পর হাতছানি দিয়ে ডাকে খেমার সাম্রাজ্যের আমলে গড়ে ওঠা একেকটি স্থাপনা।

বায়ন মন্দিরের পথে চলতে চলতে পথের ধারের এমনই এক স্থাপনার হাতছানি উপেক্ষা করতে পারিনি। প্রথম দর্শনেই টাকিও মন্দির দেখে থেমে যাই। টাকিও মন্দিরের সুউচ্চ স্থাপনা নজর কাড়তে বাধ্য। একদম ওপরে ওঠার পর গাছগাছালিতে ঢাকা আশপাশের এলাকার চমৎকার এক ভিউ পাওয়া যায়। মন্দিরে ওঠার সময় সবাই যেন মাথা নিচু করে ওপরে ওঠে এবং নামার সময় যেন পৃষ্ঠদেশ প্রদর্শন না করে মাথা নিচু করেই নিচে নামেÑ রকম চিন্তা করেই নাকি রকম করে সিঁড়ি বানানো হয়েছিল।

টাকিও মন্দিরে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে সাইকেল নিয়ে আমরা পা বাড়াই বায়ন মন্দিরের উদ্দেশে। অ্যাংকর ওয়াটের পর কম্বোডিয়ায় বায়ন মন্দির সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। খেমার রাজা সপ্তম জয়াবর্মণের আমলে নির্মিত এই মন্দিরটি অ্যাংকর থম নগরীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। সুবিশাল স্থাপনা, পাথরে খোদাই করা বিশালাকৃতির সব মুখাবয়বের জন্যই বায়ন মন্দির সুপরিচিত। বায়ন মন্দির দেখে চলতে শুরু করি কাঙ্ক্ষিত অ্যাংকর ওয়াটের দিকে। অ্যাংকর ওয়াটের পশ্চিম গেটে যখন পৌঁছাই পর্যটকদের বেশ ভিড়। দিনের দুটি সময়ে অ্যাংকর ওয়াটে পর্যটকদের সমাগম সবচেয়ে বেশি হয়। সূর্যোদয় সূর্যাস্তের সময়। এই সময়জ্ঞানের মাহাত্ম্য বুঝেছিলাম শেষ বিকালে অ্যাংকর ওয়াট থেকে ফিরে আসার সময়। শেষ বিকালের সূর্য সোনাঝরা আলোর সবটুকু নিয়ে যখন পুরো অ্যাংকর ওয়াটের ওপর আছড়ে পড়ছিল, পাথরের ওই সুবিশাল প্রাচীন স্থাপত্যের গায়ে তখন যেন সোনালি আগুন লেগেছিল! সেই দৃশ্য সারা দিনের সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়, চোখে নেশা লাগায়, মনে অদ্ভুত এক বিভ্রম জাগায়। শুধু এই দৃশ্য দেখার জন্যই যেন অ্যাংকর ওয়াটে যাওয়া সার্থক!

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা