মাইশা মালিহা
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:১৬ পিএম
ছবি : হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান দেশের বহু শিক্ষার্থী। নানা বিচিত্র বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে সে দেশে। আছে বেশকিছু বৃত্তিও। আবেদন প্রক্রিয়ার শুরুতেই যে বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের ভাবায়; তা হলোÑ একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়, র্যাংকিং, প্রফেসরদের গবেষণার তালিকা ও ফান্ডিং
এক যুক্তরাষ্ট্রেই সাড়ে ৩ হাজারের বেশি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। যদিও র্যাংক বা মানে অবশ্যই তারতম্য রয়েছে। তাই হাজারো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনটি বাছাই করব, তা অনেকটাই সময়সাপেক্ষ এবং অনেক ক্ষেত্রে অনিশ্চিতও বটে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কোনো না কোনো ফরম্যাটে প্রচুর ফান্ডিং আছে। টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ (টিএশিপ), রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপসহ (আরএশিপ) নানাভাবে গ্র্যাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্টশিপের সুযোগ রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ফান্ডিং একজন ছাত্রের টিউশন, স্বাস্থ্যবীমাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফি কাভার করে। যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে ২০২৩ ওপেন ডোরস রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ১৩ হাজার ৫৬৩ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছেন। গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ৩০০ শতাংশ বেড়ে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ৩ হাজার ৩১৪ থেকে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ১৩ হাজার ৫৬৩ জন হয়েছে। আজ থাকছে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর।
স্নাতকের জন্য সুযোগ কেমন
স্নাতক পর্যায়ে পড়ার জন্য বেশ বিস্তৃত ও নানা আঙ্গিকের সুযোগ আছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির বিভিন্ন কমিউনিটি কলেজে দুই বছরের অ্যাসোসিয়েট ডিগ্রির আবেদন করা যায়। আবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা বিষয়ে চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রির জন্যও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন।
কী ধরনের বৃত্তি আছে
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীর প্রয়োজন অনুসারে তহবিল দেওয়া হয়। অর্থাৎ কেউ তার আর্থিক অবস্থা, আগ্রহ ও প্রয়োজনীয়তা যথার্থভাবে উপস্থাপন করতে পারলে সেসবের ভিত্তিতে বৃত্তির সুযোগ আছে। অন্যদিকে মাস্টার্স ও পিএইচডিতে পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের মেধাভিত্তিক বৃত্তি ও আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়। বেশিরভাগ পিএইচডি ডিগ্রির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফান্ডিং পাওয়া যায় নিয়মিত। তবে যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকর বৃত্তি ফুলব্রাইট স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম। এ বৃত্তির মাধ্যমে পূর্ণ অর্থায়ন পাওয়া যায়।
ফুলব্রাইট বৃত্তির জন্য করণীয়
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পাঠক্রম প্রণয়ন, হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল সায়েন্স, বায়োলজিক্যাল অ্যান্ড ফিজিক্যাল সায়েন্সেস, সোশ্যাল সায়েন্সেস, হিউম্যানিটিজ, বিজনেস, ইকোনমিকস, পাবলিক পলিসি, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস, আরবান প্ল্যানিং, দি আর্টস, সাইকোলজি ও সিকিউরিটি স্টাডিজ বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনে ফুলব্রাইট বৃত্তি দেওয়া হয়। আবেদনের জন্য সাধারণত টোয়েফেলে ন্যূনতম ৯০ অথবা আইইএলটিএস পরীক্ষায় ন্যূনতম ৭ স্কোর থাকতে হয়। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের আমেরিকান সেন্টার থেকে বিস্তারিত জানা যাবে। ওয়েবসাইট : foreign.fulbrightonline.org/apply
বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বৃত্তি, অনুদান, ফেলোশিপ, অ্যাসিস্ট্যান্টশিপসহ নানা আর্থিক সুযোগসুবিধাসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যান। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান, কলা বা আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসছেন।
এ ছাড়া ব্যবসায় প্রশাসনে এমবিএ পড়ার সুযোগ পান অনেক শিক্ষার্থী। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিষয়ে পড়েছেন, সে বিষয়েই যে স্নাতকোত্তর করতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। ইচ্ছা কিংবা সুযোগ থাকলে আপনার কোর্স ও বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত একই অনুষদের অন্যান্য বিষয়ে পড়ার আবেদন করতে পারেন। আপনি যদি আইনে পড়েন, তাহলে ক্রিমিনোলজি, আন্তর্জাতিক আইনে মাস্টার্স বা পিএইচডির সুযোগ খুঁজতে পারেন।
আইইএলটিএস না টোয়েফেল
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার আবেদনে ভাষাদক্ষতার সনদ জমা দেওয়া নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ। প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই আবেদনের জন্য ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার প্রমাণ আপনাকে দিতে হবে। টোয়েফেল পরীক্ষাটি ইংরেজি যাদের মাতৃভাষা নয়, এমন শিক্ষার্থীদের জন্য। স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যারা যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার চেষ্টা করছেন, তাদের জন্য এ পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বছরের যেকোনো সময় এ পরীক্ষা দেওয়া যায়। বিদেশে ভাষাদক্ষতার প্রমাণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন, ভিসার আবেদন ছাড়াও চাকরির জন্য টোয়েফেল সনদ প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইএলটিএস স্কোর বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করা হয়। আইইএলটিএস ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পরীক্ষা। ভাষাদক্ষতার সনদ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনপত্রের সঙ্গে একাডেমিক আইইএলটিএস সনদ জমা দিতে হয়।
জীবনযাত্রার ব্যয় কেমন
বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানভেদে জীবনযাত্রার ব্যয় একেক রকম। টেকসাস, অ্যারিজোনা, ওকলাহোমার মতো স্টেটগুলোয় জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলক কম। অন্যদিকে ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি বা জনবহুল স্টেটে জীবনযাত্রার ব্যয় কয়েক গুণ বেশি হয়।
বৃত্তি ছাড়া পড়তে চাইলে
বৃত্তি ছাড়া পড়ার সুযোগ আছে, কিন্তু বেশ ব্যয়বহুল। স্নাতক পর্যায়ে পড়তে গেলে ন্যূনতম ২০ হাজার ডলার (প্রায় ১৯ লাখ টাকা) এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়তে হলে ন্যূনতম ১৭ হাজার ডলার (প্রায় ১৬ লাখ টাকা) খরচ হতে পারে। তবে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই সহশিক্ষা কার্যক্রম কিংবা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নানা হারে বৃত্তি দেয়।
জিআরই পরীক্ষার সুবিধা
জিআরই (গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশনস) পরীক্ষাটি মূলত স্নাতকোত্তর পর্যায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বৃত্তি ও আর্থিক সুযোগসুবিধা পেতে জিআরই পরীক্ষায় ভালো স্কোর বেশ কাজে আসে। সাধারণ জিআরই পরীক্ষা ছাড়াও ছয়টি বিষয়ে বিষয়ভিত্তিক জিআরই পরীক্ষা নেওয়া হয়। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, কানাডাসহ অনেক দেশের স্নাতকোত্তর পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা, পিএইচডি গবেষণায় ভর্তির জন্য জিআরই স্কোর প্রয়োজন।
রয়েছে কাজের সুযোগও
যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীরা ২০ ঘণ্টা ‘অন ক্যাম্পাস’ কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা অপশনাল প্র্যাকটিকাল ট্রেনিং কর্মসূচির আওতায় পড়া শেষে ডিগ্রিসংশ্লিষ্ট খাতে এক বছর কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট পেতে পারেন।
ভর্তি, বৃত্তি ও কাজের সুযোগ সম্পর্কে জানতে