× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রেমের অনুগল্প

অলোকেশের চিঠি

অলোক আচার্য

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:১৪ পিএম

অলোকেশের চিঠি

সুজাতার হাতে অলোকেশের চিঠি। কাঁপা কাঁপা হাতে ধরে আছে চিঠিটা। মাঝে মাঝে কাঁদছে। চোখের জল পড়ে চিঠিটি ভিজে যাচ্ছে। অলোকেশের সঙ্গে গত চার মাস কোনো যোগাযোগ নেই সুজাতার।

অলোকেশ হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেল! চাকরি ছেড়ে দিল। যেখানে ভাড়া থাকত সেখানেও নেই। অথচ চার মাস আগেও দুজন ছিল বন্ধুমহল ও আত্মীয়স্বজনের কাছে সবচেয়ে আলোচিত জুটি। এমন কোনো জায়গা নেই অলোকেশের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেনি সুজাতা। কোনো লাভ হয়নি। একবার যদি বলত ওর এ হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ার রহস্য, তা হলেও একটা সান্ত্বনা পেত।

এমন তো না যে সুজাতার পরিবার থেকে কোনো আপত্তি ছিল। অলোকেশেরও তাই। ওদের পরিবারও এ মেলামেশা মেনে নিয়েছিল। দুই পরিবারই অলোকেশের চাকরিটা স্থায়ী হলেই চার হাত এক করে দিতে চেয়েছিল।

অলোকেশের সঙ্গে সুজাতার আলাপ একটি ফ্যামিলি প্রোগ্রামে। সুজাতার এক কাজিনের জন্মদিনে অলোকেশ এসেছিল। দুজনের চোখাচোখি হয়েছিল কয়েকবার। এমন কোনো ব্যাপার না। তার পরও অলোকেশকে এত ভালো লাগল যে অলোকেশের কাছ থেকে প্রথম প্রপোজ পেয়ে ওকে অপেক্ষা করাতে পারেনি। তারপর কীভাবে সবকিছু হয়েছে সবটাই মনে আছে।

প্রথম দেখা হয়েছিল একটি রেস্টুরেন্টে। ক্যান্ডল ডিনারের আমন্ত্রণে গিয়েছিল সুজাতা। কি অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি হয়েছিল! সুজাতা অল্প অল্প কাঁপছিল। অলোকেশ সুজাতার হাত ধরেছিল। সুজাতা শুধু বলেছিল, আমার ভয় করছে, হাতটা ছেড়ে দিন। অলোকেশ হাত ছেড়ে দিয়েছিল। অলোকেশ হাত ধরায় সুজাতার ভালোই লাগছিল। একবার মনে হচ্ছিল লজ্জার মাথা খেয়ে বলে, আরেকবার হাতটা ধরবেন, প্লিজ? তা আর বলা হয়নি। অলোকেশও আর ধরতে চায়নি। তারপর বহুদিন ওরা হাত ধরাধরি করে হেঁটেছে রেললাইনের ধার ঘেঁষে, 

নদীর তীরে, পার্কে। হাতগুলো কীভাবে ছেড়ে যায় সেটাই বুঝতে পারেনি সুজাতা। অলোকেশের চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করে। 

কী লিখেছে অলোকেশ?


সুজাতা

আমি জানি তুমি ভালো নেই। আমার হঠাৎ অন্তর্ধান তোমাকে ভেতরে ভেতরে দগ্ধ করছে। করারই কথা। কিন্তু আমার কিছুই করার নেই। তোমাকে সত্যি বলার সাহসও নেই আবার তোমাকে কাছে টানার সাহসও হারিয়ে ফেলেছি। এ চিঠি যখন পড়ছ তখন আর আমাকে খুঁজে লাভ নেই। আমি পৃথিবী থেকে চলে গেছি। ডাক্তারের হিসাব অন্তত সেটাই বলে। আজ যে চিঠি ফিরোজ তোমাকে দিয়েছে সেটা আমিই তোমাকে দিতে বলেছিলাম। মনে করে দেখ আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি। ভালোবাসা দিবস। অথচ আমরা দুজনের কে কোথায়! সত্যি কথা হলো আমি এইচআইভি পজিটিভ ছিলাম। তোমার মনে আছে মাস ছয়েক আগে আমার প্রচণ্ড জ্বর এসেছিল। সেবার রক্ত পরীক্ষা করতে গিয়ে আমার এইডস ধরা পড়ে। কীভাবে আমার শরীরে এ ভাইরাস ঢুকেছে জানি না। তবে অনুমান করতে পারি। তোমার সঙ্গে পরিচয়ের আগে আমার একটা বাইক অ্যাকসিডেন্ট হয়েছিল। আমাকে দুই ব্যাগ রক্ত নিতে হয়েছিল। পরিচিত কারও রক্ত না পাওয়ায় কিনতে হয়েছিল। সম্ভবত সেই রক্ত থেকেই এ জীবাণু আমার শরীরে এসেছে। আমার যা অবস্থা ডাক্তার বলেছিল আমি আর বড়জোর মাস তিনেক বাঁচব। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তোমার কাছ থেকে দূরে থাকার অভ্যাস করতে হবে আজ থেকেই। সেদিনই আমি সব ছেড়ে সবাইকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাই। কেউ আমার ঠিকানা জানত না। আসার আগে শুধু এ চিঠিটা ফিরোজের কাছে রেখে এসেছিলাম। আর আজকের দিনে তোমাকে দিতে বলেছিলাম। ভালো থেকো। জানি সেটা সম্ভব না। তবে সময় একদিন সবকিছু ঠিক করে দেবে।

তোমার

অলোকেশ


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা