প্রেমের অনুগল্প
মোকাদ্দেস-এ-রাব্বী
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১১:৫১ এএম
ফারহা আমার ডেস্কের সামনে বসে আছে। মাথা নিচু করে। মাথা নিচু না করে উপায় আছে! একটু আগে আমিও লজ্জায় ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকিয়ে ছিলাম। এরপর একটু একটু করে ফারহার দিকে তাকানোর চেষ্টা করছি।
ফারহা আমার সামনে কিংবা আশপাশে থাকলে তার দিকে তাকাব না, তা কী হয়! আমি না তাকাতে চাইলেও আমার মন আমার কাছে প্রশ্ন করেÑফারহার দারুণ সৌন্দর্য্য না দেখতে চাইলে কি দেখবে তুমি! এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য আমি ফারহার দিকে তাকিয়ে থাকি। অপলক চোখে তাকিয়ে থাকি। ফারহাও আমার মতো লজ্জায় লাল হয়ে আছে।
ফারহা আর আমার লজ্জার বিষয়টা বলি। একটু আগে আমার সহকর্মী খুরশিদা ব্যাংক থেকে এসে আমাদের দুজনকে একসঙ্গে গল্প করতে দেখে প্রশ্ন করে গেছেÑ‘আমি এসে আবার আপনাদের অসুবিধা করে দিলাম না তো?’ এ কথা বলেই আবার ব্যাংকে চালান ছেড়ে আসার কথা বলে বাইরে গেছে। এ প্রশ্নের পর আমি লজ্জায় বিব্রত হয়ে যাই। ফারহাও তাই।
অফিসে ফারহা নিচের ফ্লোরে বসে। মাঝে মাঝে ওপরের ফ্লোরে আমাদের রুমে আসে খুরশিদার সঙ্গে দেখা করতে। খুরশিদার সঙ্গেই দেখা করতে আসে নাকি আমাকে দেখতে উঠে আসে জানি না। সব সময় মানুষ নিজেকে দিয়ে অন্যের বিবেচনা করে। কাজেই আমি আমার ভাবনা থেকেই ভেবে নিই ফারহা আমাকে দেখতেই খুরশিদার কাছে আসে। যেহেতু নিজেও মাঝে মাঝে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে যাই। ফারহার প্রতি এত ভালো লাগা কাজ করে কেন? জানি না। ভাবছি, এ প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানে নামব।
থাই গ্লাসের দরজায় ঘ্যাচ করে শব্দ হলো। সঙ্গে সঙ্গে দুজনের চোখ থাই গ্লাস বরাবর দরজার দিকে। দেখলাম খুরশিদা ফিরে এসেছে।
ঢুকতে ঢুকতে ফারহার উদ্দেশে বলল, ‘তখন তো আর জানতাম না তুমি আসবে। জানলে কি আর খালি হাতে আসি! গরম গরম শিঙাড়া আর জিলিপি নিয়ে এলাম।’ বলেই সেগুলো আমার টেবিলে রেখে তার ডেস্কে ব্যাগ রাখতে গেল।
আমি আর ফারহা আগের মতোই নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি। কী বলব বুঝতে পারছি না।
খুরশিদা ফিরে এসে তাগাদা দিয়ে বলল, ‘ফারহা নিচ্ছো না কেন? খাবার সামনে রেখে মুখ দেখাদেখি করে কোনো লাভ হবে?’ বলেই একটু থেমে যায়।
আমি জিলিপি নিতে নিতে ফারহার দিকে চোরের মতো তাকাই। ফারহাও হাত বাড়িয়ে নিতে শুরু করে। খুরশিদা আবার বলে, ‘নাকি আমি ফিরে এসে অসুবিধা করে ফেললাম আপনাদের?
এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আবারও লজ্জায় মাথা নিচু করে ফারহা বলল, কী যে বলেন না আপনি খুরশিদা আপু!
খুরশিদার কথায় আমিও লজ্জা পাই। বারবার লজ্জা পেতে পেতে
আমাদের এ রুমটাকে লজ্জাবতী গাছ মনে হচ্ছে। সে গাছের নিচে আমরা। দূরত্ব বজায় রেখে একে অপরের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করি। আর সবার এসব কথা শুনে লজ্জা পাই!