× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গ্যালাপাগোসের দুর্লভ জীববৈচিত্র্যের রাজ্যে

রেজাউল বাহার

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৫৬ পিএম

আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১২ এএম

পুরো মানবজাতির এক মৌলিক প্রশ্নের উত্তর মিলেছে এখানে, প্রাণের বিবর্তন  ছবি : লেখক

পুরো মানবজাতির এক মৌলিক প্রশ্নের উত্তর মিলেছে এখানে, প্রাণের বিবর্তন ছবি : লেখক

পুরো মানবজাতির এক মৌলিক প্রশ্নের উত্তর মিলেছে এখানে, প্রাণের বিবর্তন। সেই থেকে এই দ্বীপপুঞ্জ আছে অনেকটা সুরক্ষিত। গ্যালাপাগোসই হয়তো পৃথিবীর শেষ নন্দনকানন। একমাত্র এখানেই বন্য প্রাণীরা মানুষের ভয়ে ভীত নয়। লিখেছেন রেজাউল বাহার

আমরা মানুষ, প্রকৃতির ক্ষুদ্র এক অংশ। সৃষ্টির রহস্য আমরা কীভাবে ভাবতে চাই বা ভাবতে ভালো লাগে তা দিয়ে প্রকৃতির কিছু যায়-আসে না। প্রকৃতি চলছে তার নিয়মে, সাপলুডু খেলছে। আমরা খেলাটা দেখছি, বোঝার চেষ্টা করছি। যুগ যুগ লেগে যাচ্ছে প্রকৃতির একটা লেয়ার বা আস্তরণ উন্মোচন করতে। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, ১৮৩১ সালে ব্রিটিশ রয়েল নেভি থেকে এক জাহাজ বের হয়ে পড়ল দক্ষিণ আমেরিকাসহ কিছু ভূখণ্ডের মানচিত্র তৈরির কাজে। জাহাজে উঠলেন একজন প্রকৃতিবিজ্ঞানী। তার কাজ বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন প্রাণীর নমুনা সংগ্রহ করা। পাঁচ বছর তিনি জাহাজে ঘুরে বেড়িয়েছেন। দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডর দেশের পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরে কিছু দ্বীপপুঞ্জ, নাম গ্যালাপাগোস। ভিন্ন ভিন্ন দ্বীপে একই প্রাণীর মাঝে তিনি কিছু তফাত দেখলেন। মিলাতে পারছেন না কেন এই ভিন্নতা। তিনি দেখলেন, বোঝার চেষ্টা করলেন। সমুদ্রযাত্রা শেষে তিনি লিখলেন দ্য অরিজিন অব স্পিসিজ, প্রকাশিত হলো। 

গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ কোনো সাধারণ দ্বীপপুঞ্জ নয়

পৃথিবীতে আধুনিক মানুষের অবস্থান প্রায় দুই লাখ বছর। এই দীর্ঘ লম্বা সময় পেরিয়ে প্রথম একজন মানুষ প্রকৃতির সাপলুডু খেলার কৌশল কিছুটা ধরে ফেললেন- প্রকৃতিতে প্রাণের বিবর্তন হচ্ছে প্রাকৃতিক নির্বাচনের ধারায়। শতসহস্র বছর মানুষ একই প্রশ্ন করে যাচ্ছে- আমি কোথা থেকে এলাম? কেন এলাম? কোথায় যাচ্ছি? এই সবটুকুর খানিকটা উত্তর মিলে গেল। আমি কোথা থেকে এলাম, তা জানা হলো। কিন্তু গ্রহণযোগ্যতা পেল না। পৃথিবী তখন ধর্মের ছায়ায় আশ্বস্ত। আমরা ঈশ্বরের তৈরি, সেখান থেকেই শুরু। প্রচলিত সব ধর্মগ্রন্থে সেভাবেই বলা আছে। এরই মাঝে ‘দ্য অরিজিন অব স্পিসিজ’ আর তার লেখক চার্লস ডারউইন আঙুল ঢুকিয়ে দিলেন। বলা হলো, মানুষের পূর্বপুরুষ আর বানরের পূর্বপুরুষ একই প্রাণী থেকে আসা। সেই প্রাণের বিলুপ্তি ঘটেছে। বিবর্তনের শাখায় একপাশে মানুষ, অন্যপাশে বানর। জীববিজ্ঞানের সূত্রে মানুষ আর বানর চাচাতো ভাই। 

তারপর ১৬৪ বছর পার হয়ে গেছে। মানুষের জানার শাখায়-প্রশাখায় প্রতিটি বিন্দুতে প্রকৃতির এই সাপলুডু খেলা স্পষ্ট। মানুষ দেখছে, জানছে, অসংখ্য বিন্দু পরে যাচ্ছে একই সরলরেখার ওপর। একবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই, যেখানে প্রাণীর বিবর্তনকে অস্বীকার করা হয়। বিজ্ঞান ধাপে ধাপে জমা করেছে বিবর্তনের প্রমাণ। কয়েকটি শাখায় বিবর্তন নিয়ে অধ্যয়ন হয়। ডারউইন যা বলেছিলেন সেটা ছিল পর্যবেক্ষণ থেকে একটা থিওরি। সহজ নয় বলেই সময় লেগেছে ১৬৪ বছর। লাখো মানুষের মেধার আর তথ্যের ওপর ভর করে আজ জানা হয়ে গেছে পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী একে অন্যের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। প্রায় ৩৭০ কোটি বছর আগে এককোষী প্রাণ থেকেই শুরু আজকের চেনা-জানা প্রতিটি প্রাণের। এক দীর্ঘ সময় পার করে একজন মানুষ, চার্লস ডারউইন যা দেখলেন তা তার আগে কেউ দেখল না? কী অদ্ভুত, কী সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হলো- আমরা কোথা থেকে এলাম।

গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ

পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠে হাজার হাজার দ্বীপপুঞ্জ আছে। গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ কোনো সাধারণ দ্বীপপুঞ্জ নয়। পুরো মানবজাতির এক মৌলিক প্রশ্নের উত্তর মিলেছে এখানে, প্রাণের বিবর্তন। সেই থেকে এই দ্বীপপুঞ্জ আছে অনেকটা সুরক্ষিত। মানুষের বসবাসের আওতার বাইরে। পৃথিবীর অনেক প্রান্তে ভ্রমণ মানে একটা বাকেট লিস্ট। গ্যালাপাগোসের জন্য আমাকে আলাদা বাকেট নিয়ে ঘুরতে হয়েছে অনেক বছর। 

প্রশান্ত মহাসাগরে দক্ষিণ আমেরিকার মূল ভূখণ্ড থেকে ১০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে আছে মূলত ১৩টি বড় দ্বীপ। ভূতাত্ত্বিক বয়সে এই দ্বীপপুঞ্জের বয়স খুবই কম। মাত্র ৫০০ লাখ থেকে ১ কোটি বছর আগে পৃথিবীর নাজকা টেক্টোনিক প্লেটে জীবিত আগ্নেয়গিরির লাভায় তৈরি এই দ্বীপপুঞ্জ। মূল ভূখণ্ড থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে থাকার কারণেই এখানে কোনো উদ্ভিত বা প্রাণীর আগমন ছিল না দীর্ঘ সময়। ধীরে ধীরে কখনও সমুদ্র জলে ভেসে, কখনও আকাশে-বাতাসে উড়ে কিছু প্রাণের আগমন ঘটে এই দ্বীপপুঞ্জে। যারাই এসেছে, তাদের ধরন মূল ভূখণ্ডের অন্য প্রাণীদের থেকে আলাদা। দীর্ঘদিন সমুদ্রে ভেসে থাকা কাঠ লতাপাতায় আশ্রয় নিয়ে ঝরে, হয়তো দুর্ঘটনাক্রমে এদের আগমন এই দ্বীপপুঞ্জে।

আমরা গ্যালাপাগোস যাব দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের মূল ভূখণ্ড থেকে। দ্বীপের নাম বাল্ট্রা। দ্বীপটি কমার্শিয়াল এয়ারপোর্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দ্বীপে কোনো জনবসতি নেই। মূলত গ্যালাপাগোসের প্রায় সবকটি দ্বীপই জনবসতি শূন্য। সংরক্ষিত আছে প্রাকৃতিকভাবে। এয়ারপোর্টে নেমে ২০ ডলারের রেজিস্ট্রেশন ফি, গ্যালাপাগোস জাতীয় উদ্যানের জন্য ১০০ ডলার ফি দিতে হয়। বাসে চেপে যেতে হয় সমুদ্রঘাটে। মোটর বোটে পাড়ি দিতে হয় ছোট্ট ক্যানেল। ওপাশটাতেই সান্তাক্রুজ দ্বীপ। এখানেই জনবসতি। থাকতে হবে এখানেই হোটেলে বা লজে, সেখান থেকে বোটে করে দেখতে হবে বিভিন্ন দ্বীপ।

দৈত্যবত বিশাল কচ্ছপ

সান্তাক্রুজ দ্বীপে আছে শতাব্দী পেরিয়ে যাওয়া স্থলে থাকা দৈত্যবত বিশাল কচ্ছপ। এদের জীবনকাল প্রায় ১৫০ বছর। বিগত শতবর্ষে বিজ্ঞানীরা যে কচ্ছপ পৃথিবীতে নেই বলে জানতেন, তারই সন্ধান মিলেছে গ্যালাপাগোস দ্বীপে। প্রথমে খবরটি কেউই বিশ্বাস করতে পারেননি। ১০০ বছর আগে শেষবার দেখতে পাওয়া প্রাণী আবার আসবে কেন, প্রশ্ন ছিল সবার।

বিশ্বের বিরল অতিকায় কচ্ছপ

কিন্তু হারিয়ে যাওয়া অতিকায় কচ্ছপ পাওয়ার পর ২ বছর ধরে গবেষণার শেষে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হলেন, যে কচ্ছপ প্রজাতিটির সন্ধান তারা পেয়েছেন, তা ‘সেলনয়ডিস ফ্যান্টাসটিকাস’। চিহ্নিতকরণের সময় থেকেই যা বিশ্বের অন্যতম বিরল অতিকায় কচ্ছপ নামে পরিচিত ছিল। তবে সংরক্ষণের অনেক চেষ্টার পরেও তা হারিয়েই যায়। এত দিন পর আবারও সেই প্রাণীর দেখা পেয়ে সত্যিই উচ্ছ্বসিত প্রাণবৈচিত্র্য প্রেমিক বিজ্ঞানীরা।

আমাদের গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ দেখা হয়েছিল মোটরচালিত ক্যাটামারান বোটে। ৮টি কেবিন, ১৬ জন পর্যটক, ক্রু আছেন সাতজন। সামনের ৪ দিন আমরা ভেসে বেড়াব প্রশান্ত মহাগরের গভীরে গ্যালাপাগোসের এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে। প্রতিটি দ্বীপে প্রাণের বিবর্তন স্পষ্ট এখানে। কিছু দ্বীপ পাখিদের স্বর্গরাজ্য। এদের ডিম পাড়ার জন্য গাছে নীড় বাঁধার প্রয়োজন পড়ে না। এরা বাসা বাঁধে মাটিতে, পাথরে। তাদের শিকারি বলে নেই অন্য কোনো প্রাণী। আমরা অনেকটা গা-ঘেঁষে হেঁটে যাচ্ছি অথচ ভয় নেই তাদের, উড়ে যাচ্ছে না।অল্প কিছু পর্যটক যারা এখানে আসে, তারা তাদের কাছে হুমকি নয়। এ এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা, পাখিদের নিজস্ব ভূমে এতটা কাছ থেকে তাদের কখনও দেখিনি।

পাখিদের স্বর্গরাজ্য এই দ্বীপ

গ্যালাপাগোসে ১৩ জাতীয় ‘ফিঞ্চ’ পাখি আছে। আমেরিকায় ফিঞ্চদের ঠোঁট মোটা হয়, যাতে ঠুকরে ঠুকরে শক্ত বীজ খেতে পারে। গ্যালাপাগোসে গিয়ে বিভিন্ন আবহাওয়ায় বিভিন্ন রকমের ফুল, ফল, বীজ ও পোকামাকড় খেতে গিয়ে ঠোঁটের ১৩ রকমের হেরফের হয়েছে । এমনকি সব পাখিটাই এমন বদলেছে যে, একই জাতি বলে চেনা যায় না। প্রতিটি পাখি এক এক দ্বীপে সীমাবদ্ধ। ক্যাকটাস ফিঞ্চের বিরাট মোটা ঠোঁট, এদের ঠুকরে খাওয়ার জন্য। আবার অন্য দ্বীপে ওয়র্বলার ফিঞ্চের ঠোঁট সরু ও ছুঁচল, যাতে ফুলের মধু খেতে সুবিধা হয় । এদের পর্যবেক্ষণ করেই ডারউইন ইভল্যুশন থিওরি উদ্ভাবন করেন।

আছে অ্যালবাট্রস! এর ডানা এত বড় আর ওজনেও অমন বেশি যে, ওড়ার জন্য এরোপ্লেনের মতো রীতিমতো রানওয়ের দরকার হয়! রানওয়ে দিয়ে পাখিগুলো দৌড়ে আসে আর সমুদ্রে ঝাঁপ দেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে বিশাল ডানা মেলে শূন্যে ভেসে পড়ে।

এই দ্বীপের পাখিরাও কম বৈচিত্র্যপূর্ণ নয়

এক ধরনের দুর্লভ পানকৌড়ি দেখা যায় তাদের আবার ওড়বার দরকার নেই। তাই ডানাগুরো খুব ছোট। শুধু ডুব দিয়ে মাছ ধরে। আরও কয়েকশ বছর পর ডানা দুটো একেবারেই মিলিয়ে যাবে, বৈজ্ঞানিকদের তাই ধারণা। হয়তো পানকৌড়ি বলে চেনাই যাবে না। ডারউইনের নিয়ম অনুযায়ী তৈরি হবে সম্পূর্ণ এক নতুন জাতের পাখি।

পাখিরাও কম বৈচিত্র্যপূর্ণ নয়, যেমন— এই সোয়ালো-লেজের গাল। সিগাল গোত্রের অন্য পাখিদের মতো ওরাও বেশিরভাগ সময় সাগরের আকাশে উড়ে বেড়ায়। পার্থক্য হলো ওরা উড়ে বেড়ায় রাতে। পৃথিবীর একমাত্র পরিপূর্ণ নিশাচর পাখি। রাতের অন্ধকারেও দেখতে পায়। সেজন্য ওদের চোখও অন্য পাখিদের তুলনায় বড়সড়। রাতের বেলা ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ায়। রাতের সাগরে ভাসতে থাকা প্ল্যাংকটন জ্বলজ্বল করে। অনেক মাছ আর স্কুইড ভেসে উঠে সেসব খেতে। তারাই হয় এই পাখিদের খাবার। এভাবে ওরা উড়তে উড়তে ইকুয়েডর, পেরু হয়ে চিলির সৈকতেও চলে যায়। কিন্তু প্রজননের সময় হলে ঠিক ফিরে আসে গ্যালাপাগোসের আসল বাসায়। আছে বিরাট ডানা ছড়ানো মিশকালো পাখি ম্যাগনিফিসেন্ট ফ্রিজেটবার্ড। পুরুষ পাখির গলায় ঝোলে লাল টুকটুকে থলি। মেয়ে পাখিকে আকর্ষণ করার সময় ওই থলিটা ফোলায়, যেন টুকটুকে লাল বিরাট বেলুন। দেখে মনে হয় পাখিটা একটা মস্ত বেলুনের ওপর বসে তা দিচ্ছে।

গ্যালাপাগোসে আছে নানা রকমের জলের ও ডাঙার প্রাণী

পাখি ছাড়াও গ্যালাপাগোসে আছে নানা রকমের জলের ও ডাঙার প্রাণী। বেশিরভাগই সরীসৃপ জাতীয়। গ্যালাপাগোসে বেশ কয়েক জাতীয় ডাঙার কচ্ছপও আছে। এদের সাইজও বিশাল, ওজনে প্রায় ১০০ থেকে ২০০ পাউন্ড, বয়সে ১০০ বছরের বেশিও হতে পারে। গ্যালাপাগোসে তিন ধরনের ইগুয়ানার দেখা মেলে। ডাঙার ইগুয়ানা লম্বায় ছয় ফুট পর্যন্ত হয়। চলে বেশ দ্রুত। 

গ্যালাপাগোসই হয়তো পৃথিবীর শেষ নন্দনকানন। একমাত্র এখানেই বন্যপ্রাণীরা মানুষের ভয়ে ভীত নয়। হয়তো সুদূর অতীতে সবকিছু এ রকম ছিল। দ্বীপটির পানিতে প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে ৮০০ ধরনের শামুক-জাতীয় প্রাণী। এর মধ্যে ঝিনুক, স্কুইড ও অক্টোপাসও রয়েছে। রয়েছে বিশালদেহী হোয়েল শার্ক। প্রাণীদের এই সুবিশাল প্রাচুর্য থাকায় গ্যালাপাগোসকে প্রাণিজগতের মাতৃভান্ডার বলা হয়।

একমাত্র এখানেই বন্য প্রাণীরা মানুষের ভয়ে ভীত নয়

দিনের বেলায় দ্বীপে ঘুরে রাত কাটাতে হয় বোটে, ছোট মোটর বোটে এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যাওয়াটাও একটা চ্যালেঞ্জ। কখনও সমুদ্র উত্তাল, নিদ্রাহীন রাত আর সি-সিকনেস তো আছেই। বাল্ট্রা, সান্তাক্রুজ দ্বীপ পেরিয়ে আমরা দেখেছি সেইমৌর, বারটলোম, জেনোভেসা, ডারউইন-বে দ্বীপগুলো। প্রতিটি দ্বীপের রহস্য আর সৌন্দৰ্য তার নিজস্ব। বলা হয়ে থাকে গ্যালাপাগোসের সৌন্দর্যের বর্ণনা করতে যাওয়া ভুল। শুধু কাছ থেকে এসে দেখে যেতে হবে। প্রথিবীর এই ছোট অংশে মানুষের উপস্থিতি তার আগমন আর বিবর্তন বোঝার জন্য অমূল্য এক স্থান। এখনও এই দ্বীপপুঞ্জ বিবর্তনের জীবিত ল্যাবরেটরি হিসেবে ধরা হয়। আছে এখনও সংরক্ষিত। কিন্তু কত দিন? কেউ জানেন না। মানুষ বিবর্তনের এমন একসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার মেধা, বুদ্ধি, বিবেচনা মানুষের আছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে মানুষেরই মাঝে।

গ্যালাপাগোস তোমার-আমার অস্তিত্বের রূপকার। মানুষের শতসহস্র বছরের মৌলিক প্রশ্নের জবাব দিয়ে গেছে এই দ্বীপপুঞ্জ। আমি কোথা থেকে এলাম- আপাতত সে প্রশ্নের উত্তর আমাদের অনেকটা জানা, প্রাণের বিবর্তন ধরে আজকে আমরা এখানে, এই সময়ে। ১৬০ বছর আগে একজন মানুষ মাত্র ২২ বছর বয়সে এই দ্বীপপুঞ্জে এসে যা দেখলেন, যা ভাবলেন, সব বদলে দিল আমাদের জানা স্বর্গের গল্পগুলোকে। আমরা তো স্বর্গ থেকে আসিনি। আমরা স্বর্গেই আছি।

ছবি : লেখক

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা