অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ১২:৪৪ পিএম
সাফিয়া খাতুনের জীবন চলে নৌকা চালিয়ে
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের শীলছড়ির বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব সাফিয়া খাতুন। পেশায় নৌকাচালক। কর্ণফুলী নদীতে নৌকায় যাত্রী পারাপার করেন। আর এ কাজে অর্জিত অর্থে সংসার চলে তার। সম্প্রতি কর্ণফুলীর সীতারঘাটে দেখা মেলে তার।
একজন নারী হয়েও নৌকা চালানোর মতো শক্ত পেশা বেছে নিয়েছেন সাফিয়া। শত প্রতিকূলতা পার করে জীবনসংগ্রাম করে যাচ্ছেন তিনি। সাফিয়া খাতুন জানান, তার স্বামী আবুল কাশেম তিন বছর আগে মারা যান। তিনিও ছিলেন নৌকার মাঝি। সংসারে চার মেয়ে এক ছেলে। দুঃখভারাক্রান্ত কণ্ঠে আরও জানান, তিনটি মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর একমাত্র ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে আলাদা হয়ে গেছে। বর্তমানে একটি মেয়েকে নিয়ে এই বুড়ো বয়সে সংসারের বোঝা বয়ে যাচ্ছেন তিনি।
নৌকায় যাত্রী পারাপার করে যা আয় হয় তাই দিয়ে কোনোমতে চলছে সংসার। কোনো দিন ১০০ আবার কোনো দিন ২০০ টাকা, কোনো দিন আয় হয় আরও কম। বলা চলে, অভাব নিত্যসঙ্গী করে শেষ বয়সেও সংসারের বোঝা বয়ে যাচ্ছেন।
সাফিয়া আরও বলেন, ‘সীতারঘাটে মা সীতার মন্দিরে ধর্মীয় উৎসব হলে যাত্রী পারাপারে বেশিসংখ্যক লোক হয়। তখন গড়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। আবার অনেকে ছোট নৌকায় পারাপার হতে চায় না। উৎসব না থাকলে দিনে ১০০-২০০ টাকা আয় হয়। আবার মাসে গড়ে ছয় থেকে সাত দিন এক টাকাও ইনকাম হয় না। কিস্তি নিয়ে ছোট্ট নৌকাটি তৈরি করেছি। অনেক সময় কিস্তির টাকাও জোগাড় করতে পারি না। তবে সরকারি বিধবাভাতা পাই। তবু সব সময় সংসারে অভাব লেগে থাকে। অসুস্থ শরীর নিয়ে আর পারছি না এ বোঝা টানতে।’
মাঝি সাফিয়া খাতুনের বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রহমান আলী, শিবু দাশসহ কয়েকজন বলেন, ‘আমরা প্রায়ই সাফিয়া খাতুনের নৌকায় কর্ণফুলী পারাপার হই। যতটুকু পারি তাকে সহায়তার চেষ্টা করি। মানুষটির জীবন সত্যিই অনেক কষ্টের। তার পরিবারে সহযোগিতা প্রয়োজন।’
এ বিষয়ে ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. সরোয়ার বলেন, ‘স্বামী নেই এ মানুষটির। কোনোরকমে কষ্টে দিনাতিপাত করেন। ইতোমধ্যে উনার জন্য ভিজিডি কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উনাকে শীতবস্ত্র দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে পরিষদের পক্ষ হতে উনাকে সহায়তা করা হবে।’ পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এ অসহায় মহিলাটির পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।