নুসরাত খন্দকার
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:১৩ পিএম
বিয়ে মানে জীবনের এক নতুন অধ্যায়। নতুন জীবনের পথচলায় শুরুটা সুন্দর এবং স্মরণীয় করে রাখতে চলে নানা আয়োজন। বাজেটের মধ্যে বিয়ের কেনাকাটা নিয়ে দেখুন এ লেখা-
বিয়ে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। দুজন মানুষের একসঙ্গে পথচলার শুরুটা এখান থেকেই। তাই সামর্থ্যের মধ্যে সুন্দর স্মৃতি রাখতে চেষ্টা করেন সবাই। বিয়েতে বরকনে দুজনের জন্যই কেনা হয় নতুন পোশাক ও আনুষঙ্গিক অনেক কিছু। কারণ বিয়ের দিন এ দুজনের দিকেই থাকে সবার মনোযোগ। বিশেষ দিন বিয়ের কার্ড থেকে শুরু করে পোশাক এবং আনুষঙ্গিক কী কী প্রয়োজন, কোথায় মিলবে এবং দাম কেমন দেখে নেওয়া যাক-
বিয়ের কার্ড বা নিমন্ত্রণপত্র
নিমন্ত্রণপত্র হিসেবেই নয়, কার্ডের মাধ্যমে ব্যক্তির রুচিবোধ এবং পছন্দের আভাস পাওয়া যায়। তাই বিয়ের কার্ড হওয়া চাই দৃষ্টিনন্দিত। বাংলাবাজার ও পল্টন, কাটাবন, নিউমার্কেটে মিলবে কার্ডের দোকান। এ ছাড়া আজাদ কিংবা আইডিয়াল প্রোডাক্টসেও ভালো মানের বিয়ের কার্ড রয়েছে। এখন বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের কাছে ইচ্ছে এবং পছন্দমতো ডিজাইনের কার্ড তৈরি করার সুযোগ রয়েছে। দোকান এবং ধরন ভেদে সাধারণ কার্ডের দাম ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আর মখমলের তৈরি কার্ডের দাম ৭০ টাকা থেকে শুরু।
গায়েহলুদের সরঞ্জাম
বিয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান হলো গায়েহলুদ। তাই একে সবচেয়ে সুন্দরভাবে উদ্যাপন করা চাই। হলুদের তত্ত্বের উপকরণের মধ্যে থাকে ডালা-কুলা, পোশাক, প্রদীপবাটি, রাখি, চন্দন, সোহাগপুরি, আফসান, হলুদ তোয়ালে, মেহেদি, ছোট পালকি, ঝুড়ি, মাছডালা, হাঁড়ি, পানসুপারি, জর্দা, মিষ্টি, বরকনের জন্য কসমেটিক প্রভৃতি। এগুলো আলাদা করে কিনে নিজেই ডালা তৈরি করে নিতে পারেন। অথবা সাজানো ডালার তৈরি সেট কিনে নিতে পারেন। এ ছাড়া ফুল গায়েহলুদের অন্যতম অনুষঙ্গ। গয়না ও স্টেজ সাজাতে প্রাকৃতিক ফুলের পাশাপাশি কৃত্রিম ফুলও ব্যবহৃত হচ্ছে বর্তমানে।
কোথায় পাবেন কেমন দাম
এলিফ্যান্ট রোডে এসবের জন্য রয়েছে নানা দোকান। যেখানে পেয়ে যাবেন হলুদের সব উপকরণ। এ ছাড়া কাটাবন, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, বসুন্ধরা সিটির লেভেল-৮, যমুনা ফিউচার পার্ক, ইস্টার্ন প্লাজা, মিরপুর ১০সহ বিভিন্ন শপিং মলে পাবেন হলুদসামগ্রী। শাহবাগ, গাউছিয়া, এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুরের ফুলের দোকানগুলোয় পেয়ে যাবেন প্রয়োজনীয় ফুল। এসব দোকানে গায়েহলুদের জন্য ফুলের গহনার সেটও মিলবে। ডালা-কুলা কিনতে পারবেন ১৫০-৬০০, প্রদীপবাটি ১০-৫০ টাকা। এ ছাড়া বিয়ের উপটান-চন্দন, সোহাগপুরির দাম পড়বে ২০০-৬০০ টাকা। মেহেদি, আলতা ৪০-১৫০ টাকায় পেয়ে যাবেন। ঝুড়ি, পালকি, রুমাল, আফসান এগুলোর দাম পড়বে ১০০-৮০০ টাকা। পানসুপারি, মাছডালা ৩০০-১ হাজার ৫০০ টাকা। তত্ত্বের সেট কিনতে চাইলে গুনতে হবে ৫০০-৩ হাজার টাকা।
বিয়েতে কনের পোশাক
বিয়ের শাড়ি কিংবা লেহেঙ্গা পাবেন যমুনা ফিউচার পার্ক, বনানী, গুলশান ও মিরপুর বেনারসি পল্লীতে। এর পাশাপাশি নিউমার্কেট, চাঁদনি চক, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটেও বিভিন্ন দামের শাড়ি পাওয়া যায়। এ ছাড়া মৌচাক, এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুলের মার্কেটগুলো থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। আড়ং, লুবনান, বাংলার মেলা, ইনফিনিটি, রং, অঞ্জন’স, কে-ক্র্যাফটের মতো ফ্যাশন হাউসগুলোয়ও পাবেন আকর্ষণীয় বিয়ের পোশাক। বেনারসি শাড়ি কিনতে পারবেন জায়গাভেদে ৫ হাজার-৫০ হাজার টাকায়। লেহেঙ্গা কিনতে গুনতে হবে ৮ হাজার-৪০ হাজার টাকা।
বরের পোশাক
বরের পোশাক ভাড়া করে নিয়ে আসার চল রয়েছে অনেক জায়গায়। তবে এ ক্ষেত্রে বরকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। কারণ কনের বিয়ের পোশাকও বিয়ের পর আর তেমন কোথাও পরা হয় না। তোলা থাকে আলমারিতেই। তাই বরকে বিয়ের পোশাক কেনা থেকে বিরত রাখা ঠিক নয়। তবে ভাড়া করা পোশাক নয়, বিয়ের দিন বরের জন্যও থাকুক নতুন ও আকর্ষণীয় পোশাক। বরের সাজের কথা মাথায় এলেই সবার আগে মনে পড়ে শেরওয়ানির কথা। শেরওয়ানি, পাজামা, ওড়না, পাগড়ি, নাগরা সব মিলিয়ে তবেই না বরের সাজ পূর্ণ হয়। বরের পোশাক কিনতে হলে যেতে পারেন যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা সিটি, মৌচাক, এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুলের মার্কেটগুলোয়। এসব জায়গায় পেয়ে যাবেন শেরওয়ানি, পাগড়ি, ওড়না, নাগরা ও বিভিন্ন অনুষঙ্গ। আড়ং, লুবনান, বাংলার মেলা, ইনফিনিটি, রং, অঞ্জন’স, কে-ক্র্যাফটেও পেয়ে যাবেন বিয়ের পোশাক। বিভিন্ন মানের শেরওয়ানির দাম পড়বে ৪ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বরের শেরওয়ানির সঙ্গে পাজামার দাম পড়বে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। ওড়নার দাম ৭০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আর পাগড়ি ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।
লাগেজ
প্রেসিডেন্ট, ডেসি মিলানসহ অসংখ্য ব্র্যান্ডের লাগেজ বাজারে মেলে। ব্র্যান্ডেড লাগেজগুলোর দাম শুরু হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ থেকে। তবে আকারভেদে এর দাম হতে পারে ১১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। চাইলে নন-ব্র্যান্ডেড লাগেজ কিনতে পারেন। সে ক্ষেত্রে লাগেজের দাম শুরু হবে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে।
জুতা
বিয়ের শপিং তো হবে পা থেকে মাথা পর্যন্ত। পাগড়ি তো হলো, এবার নজর দিই পায়ের দিকে। জুতার ক্ষেত্রে প্রথমেই লক্ষণীয় যে বরকনে উভয়ের জুতা হতে হবে অনুষ্ঠানের উপযোগী। অনেক জুতা আছে যা খুব কষ্ট করে পরতে হয়। বিয়েতে এমন জুতা পরিহার করাই উত্তম। এতে সহজেই পায়ে দাগ পড়ে যেতে পারে। বরকনের বিয়ের বানানসই জুতা পেয়ে যাবেন নিউমার্কেট, কাটাবন, গাউছিয়া, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, ইস্টার্ন প্লাজা, মিরপুর ১০সহ বিভিন্ন শপিং মলে। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকান থেকেও কিনতে পারবেন। এজন্য গুনতে হবে ১ হাজার-৫ হাজার টাকা।