ফৌজিয়া হক
প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:১৪ পিএম
সাফল্য লাভের জন্য শুধু পড়াশোনায় তুখোড় হওয়াই যথেষ্ট নয়। ক্লাসরুমের বাইরে থেকেও গ্রহণ করতে হয় জীবনের পাঠ। আয়াসপূর্ণ জীবন পেরিয়ে বাইরের জগতে রাখতে হয় পদক্ষেপ। সাফল্য লাভের জন্য প্রয়োজনীয় তেমন সাত পদক্ষেপ জানাচ্ছেন ফৌজিয়া হক
খুঁজে নাও পরামর্শদাতা
নিজের জন্য খুঁজে নাও একজন বিজ্ঞ পরামর্শদাতা। জীবনের পথ বন্ধুর, পিচ্ছিল। যেকোনো মুহূর্তে পতন ঘটতে পারে। এই বিপদসংকুল পথে একজন বিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ তোমাকে সহায়তা করতে পারে। তবে এই পরামর্শদাতা খুঁজে পাওয়াও সহজ নয়। পরামর্শদাতা হতে পারেন তোমার বড় ভাইবোন, আত্মীয়, এলাকার গুরুজন; যিনি ভালো পরামর্শ দিতে পারবেন বলে তোমার মনে হয়। কোনো সেলিব্রিটিও হতে পারেন, যার জীবনকে তুমি অনুসরণ করো। তুমি যে পেশা গ্রহণ করবে বলে ভেবেছ, সেই পেশার সফল কোনো ব্যক্তিও হতে পারেন তোমার পরামর্শদাতা। তার কাছে কোনো কিছু না-লুকিয়ে তোমার সমস্যা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য খুলে বলো। তারপর তার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করো।
দক্ষতা অর্জন করো
সাফল্য লাভের জন্য পুঁথিগত জ্ঞান যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন বাস্তব জীবনে কাজের অভিজ্ঞতা। আগে পেশাজীবীরা প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নিয়ে কোনো পেশায় প্রবেশ করে তারপর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেই কাজ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করতেন। বর্তমানে যেকোনো চাকরির ভাইভায় পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে আনুষঙ্গিক বিষয়েও দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে হবে শিক্ষার্থী জীবনেই। বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, এক্সেল, ওয়ার্ড প্রোগ্রাম ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে চাকরির ক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়।
অংশ নাও পাঠবহির্ভূত কার্যক্রমে
স্কুলে বা স্কুলের বাইরে যেসব পাঠবহির্ভূত কার্যক্রম যেমনÑ গান, আবৃত্তি, নাচ, বিতর্ক, কুইজ, খেলাধুলা, বিভিন্ন অলিম্পিয়াড বা প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয় সেগুলোতে অংশ নাও। তোমার মেধাকে বিকশিত করতে এগুলো বিশেষ সহায়ক। শুধু তাই নয়, সমাজের আর দশজনের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাও তুমি অর্জন করতে পারবে এর ফলে। যা পেশাগত জীবনে সাফল্যের পথে তোমাকে অনেকটুকু এগিয়ে দেবে।
নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করো
জীবনে চলার পথে সমস্যা আসবেই। এই সমস্যাগুলো নিজেই সমাধানের চেষ্টা করো। সমস্যা সমাধানের জন্য চিন্তাশক্তিকে নানাভাবে কাজে লাগাতে হয়। সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে হয়। এর ফলে মেধার বিকাশ ঘটে। সমস্যা সমাধানের মাধ্যমেই একজন মানুষ সাফল্যের পথে এগিয়ে যায়। তাই নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করার চেষ্টা করো।
যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করো
মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং তা রক্ষা করা একটি বড় গুণ। এটি মানুষের প্রভাববলয়কে বিস্তৃত করে। সফলতা লাভে সহায়তা করে। তাই মানুষের সঙ্গে পরিচিত হও। যোগাযোগ রক্ষা করে চলো। সবার সঙ্গে যথাসম্ভব সদ্ভাব বজায় রাখো।
নিজের ওপর ভরসা রাখো
কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার বলেন, ক্রিকেটে নিজের অনুভূতির ওপর বিশ্বাস রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটাই একজন ভালো খেলোয়াড়ের সঙ্গে একজন খারাপ খেলোয়াড়ের পার্থক্য গড়ে দেয়। প্রতিটি খেলোয়াড়ের স্বকীয়তা আছে, আছে নিজেকে মাঠে তুলে ধরার নিজস্ব স্টাইল। সমালোচকরা আমাকে খেলতে শেখাননি। আমি মনে করি, তারা জানেন না, মাঠে আমি কী চিন্তা করছি কিংবা আমার শরীর আমাকে কতটুকু সাহায্য করছে।
স্বপ্নকে ধাওয়া করো
কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার এই সম্পর্কে বলেন, খেলায় আমার উত্থান-পতন ছিলই। কিন্তু খেলোয়াড় হিসেবে আমি কখনোই হারতে পছন্দ করতাম না। বাস্তবে শুধু সন্তানদের সঙ্গে খেলার সময়ই আমি নিজেকে ছাড় দিই। কারণ, আমার স্ত্রী আমাকে বলেছে যে, মাঝেমধ্যে সন্তানদের জিততে দিতে হয়। কিন্তু সব সময় আমি তাদের জিততে দিই না। কারণ, তাদের সামনে এখনও অনেকটা পথ পড়ে আছে এবং এই পথে তাদের লড়াই করে জিততে হবে। আমি সব সময়ই আমার সন্তানদের বলি, ‘তোমাকেই জীবনের পথে এগিয়ে যেতে হবে, অনেক পরিশ্রম করতে হবে এবং জীবনে জিততে হবে।’ আমি ১৫ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট শুরু করি এবং তখন থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল একজন টেস্ট খেলোয়াড় হওয়া। দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছেটা আমার তখন থেকেই তীব্রতা পেতে শুরু করে। সেই স্বপ্নকে ধাওয়া করেই আমি এতদূর এসেছি।