× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মহাকাশে লাল-সবুজের ‘ধূমকেতু’

ইমদাদুল হক

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৩৩ পিএম

আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৩৪ পিএম

প্রজেক্টসহ টিম ধূমকেতু এক্স

প্রজেক্টসহ টিম ধূমকেতু এক্স

এটুআইয়ের ইনোভেশন প্রজেক্ট ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয় টিম ধূমকেতু এক্স। প্রজেক্টটি নিয়ে গত বছর আলোকদিয়া পাতায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তারুণ্যের সেই স্বপ্নযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। ভাষা আন্দোলনের মাসে পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ হবে বাংলাদেশের প্রথম রকেট ‘ধূমকেতু এক্স একুশ’। বিস্তারিত জানাচ্ছেন- ইমদাদুল হক

দুই বছর অপেক্ষার পর আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের মাটি থেকেই মেড ইন বাংলাদেশ রকেট উৎক্ষেপণের অনুমতি পেয়েছে ধূমকেতু এক্স। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মাসে পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ হবে বাংলাদেশের প্রথম রকেট ‘ধূমকেতু এক্স একুশ’। এ সিরিজে রয়েছে ধূমকেতু ১, ২, ৩, ৪ ও একুশে ১। সূত্রমতে, বান্দরবান কিংবা সমুদ্রোপকূলীয় এলাকা থেকে এ উৎক্ষেপণ কাজ সম্পন্ন হবে সরকারি গাইডলাইন অনুযায়ী।

গবেষণা কাজের জন্য মহাকাশের ১.৫ থেকে ৫ কিলোমিটার রেঞ্জের দূরত্বে পাঠানো হবে ধূমকেতু ৩ সিরিজের রকেট। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের সার্কিট ও সেন্সরসমৃদ্ধ এ রকেটগুলো উৎক্ষেপণের মাধ্যমে পৃথিবীর উচ্চ বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বাতাস নিয়ে আবহাওয়ার বিভিন্ন বার্তা সংগ্রহ করে আবার ফিরিয়ে আনা হবে।

আইসিটি বিভাগের অধীন এটুআই প্রকল্প আয়োজিত প্রথম রকেট্রি চ্যালেঞ্জে ১২৪টি টিমের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে ধূমকেতু দল লাভ করে ৫০ লাখ টাকার অনুদান। সেই অর্থ দিয়ে চারটি রকেট বানিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশে প্রথম মহাকাশ গবেষণা উন্নয়ন কোম্পানি ধূমকেতু এক্স। ধূমকেতু-১ মডেলের দুটি এবং ধূমকেতু-২ নামে আরও দুটি। ধূমকেতু-১ লম্বায় ৬ ফুট, প্রস্থে ৩.৫ ইঞ্চি। আর ৮ ফুট দৈর্ঘ্যের ধূমকেতু ৩ ও ৪-এর ডায়ামিটার ৪.৫ ইঞ্চি। আর ৫২ কিলোমিটার দূরত্বে যেতে সক্ষম রকেটটির ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও ধূমকেতু এক্সের প্রধান নির্বাহী নাহিয়ান আল রহমান অলি। তবে এখনও বাজেট ছাড় না পাওয়ায় কাজটি আপাতত স্থগিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত ধূমকেতু এক্স একুশ

অলি আরও জানালেন, এটুআইয়ের ইনোভেশন তহবিল থেকে প্রাপ্ত বাজেটের টাকায় রকেট ধূমকেতু ১, ৪ ও একুশে ২১ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের সার্কিট ও সেন্সরসমৃদ্ধ। এগুলো ফেব্রুয়ারিতে প্রথম উৎক্ষেপিত হবে, যা পৃথিবীর উচ্চ বায়ুমণ্ডলে নিয়ে আবহাওয়ার বিভিন্ন বার্তা সংগ্রহ করে আবার ফিরিয়ে আনা হবে। তবে গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি ‘পুঁটি মাছ’-এর ইঞ্জিন পরীক্ষায় এর রেঞ্জ ১ কিলোমিটার পর্যন্ত সফল হয়েছে। আর bayanno-৫২-এর রেঞ্জ হবে ৫২ কিলোমিটার। সব ঠিক থাকলে এ বছরের মাঝামাঝি উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে। গত বছরের ২৫ নভেম্বর ময়মনসিংহ টাউন হল মাঠে প্রদর্শন করা হয়েছিল ৪৫ কেজি ওজনের রকেট ‘ধূমকেতু এক্স একুশ’। পরিদর্শন শেষে এ উদ্যোগকে চাঁদ ও মঙ্গল জয়ে দামালদের জন্য অনুপ্রেরণা বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রেসিডেন্ট এবং নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের অ্যাডভাইজার আরিফুল হাসান অপু। তার ভাষায়, ‘একটি রকেট লঞ্চিং জাতিকে বিজ্ঞানমুখী করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে ছাত্রছাত্রী এবং বাচ্চা যারা স্বপ্ন দেখছে যেকোনো সময় আমরাও চাঁদে যাব, মঙ্গলগ্রহে যাব এবং সেখানে স্পেস এক্সপ্লোরেশন করব আমি মনে করি তাদের জন্য এটি একটি বিশাল অনুপ্রেরণা।’

এ অনুপ্রেরণাদায়ী স্বপ্নবাজ তরুণের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেল, ছোটবেলা থেকে বিমান ও রকেট আবিষ্কারের নেশা ছিল নাহিয়ান আল রহমানের। সেই স্বপ্ন ডানা মেলতে শুরু করে ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তির পর। গাইবান্ধায় বেড়ে ওঠা এ যুবক সাহস করে স্পেস এক্স হওয়ার স্বপ্নে গড়ে তোলেন ধূমকেতু এক্স স্টার্টআপ। এ কাজে বন্ধুরাও সহায়তা করেছেন। কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত পত্রিকা ধূমকেতুর সঙ্গে মিলিয়ে রকেটগুলোর নাম রাখা হয়েছে ধূমকেতু। সে সময় ২০ জনের টিমকে সঙ্গে নিয়ে পাঁচ বছরের চেষ্টায় তৈরি করেন ধূমকেতু এক্স নামে একটি রকেট। নিজের প্রাইভেট পড়ানোর জমানো টাকা আর মায়ের ব্যাংক হিসাব থেকে ঋণ এ পুঁজি নিয়ে কাজ শুরু করেন নাহিয়ান। বিনিয়োগের এ অঙ্কটা একসময় ১২ গুণ ছাড়িয়ে যায়। এরপর সলিড জ্বালানির দুটি ইঞ্জিন তৈরি করে গড়ে তোলেন যথাক্রমে ৬, ৮, ১০ ১২ ফুট উচ্চতার প্রোটোটাইপ রকেট।

এখন দেশেই টেকসই একটি রকেট ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে বিভিন্ন দেশে অবস্থান করেও ধূমকেতু এক্সে যুক্ত রয়েছেন বাংলাদেশি ৩০ জন রকেট গবেষক ও বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির ইন্টার্ন। বাংলাদেশকে স্যাটেলাইট উৎপাদক দেশের কাতারে নিয়ে যেতে গবেষণা করছেন তারা। এর মাধ্যমে ১৯৬৩ সালে প্রতিবেশী ভারত যে কাজটি শুরু করেছিল, ২০২০-এ এসে সে কাজ শুরু করল ধূমকেতু এক্স। এত পরে এসে শুরু করে সাফল্য মিলবে কি? এমন সংশয়ের জবাবে অলি বললেন, ‘এখন টেকনোলজি খুব ফাস্ট। আমাদের বাংলাদেশি জাতীয়তার যে গবেষকরা এখন যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া-ভারত-চীনে রয়েছেন তাদের নিয়ে এজন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছি। তাই আমাদের ক্যাচআপ করতে বেশি সময় লাগবে না। সরকারি নীতি ও আর্থিক সহযোগিতা পেলে ২০২৬-২৭ সাল নাগাদ বাংলাদেশ থেকেই ন্যানো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের একটি ভেহিকল টেস্ট করব। সেটি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে হবে। নজরুল-১ রকেট ২৬০ কেজি পেলোড নিয়ে লো-অরবিটে যেতে সক্ষম হবে। এভাবেই একদিন আমরা নিজেরাই বঙ্গবন্ধু-৫ বা ৬ উৎক্ষেপণ করতে পারব।’

সেই প্রচেষ্টায় যুক্ত আছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবেডেড সিস্টেম প্রকৌশল প্রধান ইরফান মাহমুদ তুষার, ইউরোপীয় কমিশনের ইরামাস মান্ডাস স্কলারশিপপ্রাপ্ত প্রকৌশলী সাইদুর রহমান, অ্যারোস্পেস স্পেশালিস্ট শাহরুখ খান, ময়মনসিংহ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সফটওয়্যার প্রকৌশলী আদিল আরহাম, ফজলে রাব্বি বিন্দু, আশরাফ মিয়া, জান্নাতুল নাইম, পদ্মা স্মার্ট টেকনোলজির তাজমিউল হাসান, পরিবেশ-বিশ্লেষক নাদিম আহমেদ, কেমিক্যাল গ্রাফিক প্রকৌশলী লিয়ান মল্লিক লিহান, এআই অ্যানিমেটর রোহান বিন মিজান, যন্ত্রপ্রকৌশলী সারা করিম, তড়িৎ ও ম্যাটেরিয়াল প্রকৌশলী বৃষ্টি পল প্রমুখ।

এভাবেই এ তরুণ প্রকৌশলী ও উদ্ভাবকদের হাত ধরে একদিন মহাকাশেও নিজেদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হবে বাংলাদেশ। বিশ্বে নিজস্ব মহাকাশ উৎক্ষেপণকারী ক্লাবের সদস্য হতে পারবে। এ বড় ধাপ উত্তীর্ণ হতে পারলে বাংলাদেশ থেকে যে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ায় ব্যয় হচ্ছে তা সাশ্রয় হবে। উন্মুক্ত হবে স্যাটেলাইট রপ্তানির দ্বারও। তবে তা ২০৩০ সালের আগে সম্ভব না একেবারেই। অবশ্য ২০৪১ সালের স্মার্ট সোনার বাংলার স্বপ্নপূরণে আমরা বুক বাঁধতেই পারি।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, ডিজিবাংলাটেক.নিউজ

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা