× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ডে ট্রিপ

টাঙ্গাইলের জমিদার বাড়ি

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:১০ পিএম

দেলদুয়ার জমিদার বাড়ী

দেলদুয়ার জমিদার বাড়ী

অনেক দিন ধরে ভাবছি কোথাও ঘুরতে যাব। হঠাৎ করেই একটা সুযোগ পেয়ে পরিকল্পনা করে ফেললাম ঢাকার টাঙ্গাইলে যে কয়টি জমিদার বাড়ি আছে সবকটি ঘুরে আসার।

আব্দুল্লাহপুর টু টাঙ্গাইল বাসে টিকিট (১৮০ টাকা প্রতিজন) নিয়ে শুরু করলাম দীর্ঘ তিন ঘণ্টার যাত্রা। টাঙ্গাইলের একটু আগে করটিয়া নেমে প্রধান সড়কের পাশ থেকে নিলাম একটি অটোরিকশা (৩০ টাকায়)। অটোরিকশা ড্রাইভার মামা নিয়ে গেলেন করটিয়া জমিদার বাড়িতে।

পুরোনো জমিদার বাড়ির প্রতিটি দেয়ালে লেগে আছে জমিদারদের শিকার করা হরিণের শিংসহ মাথার খোলস। আর তৎকালীন তাদের রুচিপূর্ণ ভাব নিয়ে তোলা বিভিন্ন ধরনের ছবি। বাড়ির প্রতিটি আসবাবপত্র পুরোনো কাঠের তৈরি এখনও শক্ত ও মজবুত রয়েছে, যদিও কিছু কিছু নষ্ট হওয়ার পথে। বিশাল জমিদার বাড়ির বড় বড় দুটি দালান রয়েছে। তার মধ্যে সামনেরটি খুবই সুন্দর এবং মাঝে রয়েছে একটি বিশাল পুকুর। করটিয়া বাজারের পাশে আরও একটি জমিদার বাড়ি আছে যেটিতে হয়তো ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না, তবে বাইরে থেকে দেখতে পারেন। পাশে একটি সুন্দর মসজিদও রয়েছে।

এরপর চলে এলাম মহেড়া জমিদার বাড়িতে। করটিয়া প্রধান সড়ক থেকে বাসে করে (১০ টাকা প্রতিজন) নামলাম মহেড়া। সিএনজি অটোতে দুজন শেয়ারে চলে গেলাম মহেড়া জমিদার বাড়ি (১৫ টাকা প্রতিজন)। মহেড়া জমিদার বাড়িটি বাংলাদেশ সরকার অধিগ্রহণ করে এখানে স্থাপন করেছে বাংলাদেশ পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে ৮০ টাকা প্রতিজন টিকিটের বিনিময়ে। মহেড়া জমিদার বাড়িতে মোট তিনটি বড়, দুটি ছোট পুরোনো জমিদারি দালান এবং একটি বড় পুকুর রয়েছে সামনে। প্রতিটি দালানের সামনে রয়েছে সুন্দর বাগান এবং ভেতরে রয়েছে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের আরও একটি নতুন সম্ভবত দালান যেটি তাদের ডরমেটরি হিসেবে ব্যবহার হয়। 

পাকুল্লা জমিদার বাড়ি

মহেড়া থেকে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে বাসে করে নামলাম পাকুল্লা। বেশিদূর যেতে হয়নি, পাশেই হেঁটে পৌঁছে গেলাম লাল রঙের বিশাল সাইডওয়াল দেওয়া দোতলা জমিদার বাড়ির সামনে কার্পেট বিছানো মাঠে। সামনে এগোতেই চোখে পড়ল জমিদার বাড়ির দরজার পাশের সামনের রুমে কারা যেন বসে আছে। পরিচয় হলাম তাদের সঙ্গে। সপ্তম জমিদার বসে আছেন সামনের অফিস রুমে আর ভেতরে রয়েছেন তার পরিবারের সবাই। অন্যরা সবাই থাকেন ঢাকায়। বাজারের পাশেই রয়েছেন দেলদুয়ার জমিদার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শতবর্ষী শাহী জামে মসজিদ। দেখার সুযোগ হলেও কোনো ইতিহাস জানতে পারিনি।

দেলদুয়ার জমিদার বাড়ির উদ্দেশে

শেয়ারে সিএনজি অটোতে করে চলে গেলাম দেলদুয়ার (২০ টাকা প্রতিজন)। সকাল সকাল খুব বৃষ্টি হওয়ায় সারাটা দিন ঠান্ডা ঠান্ডা, দুজনে ঘুরে বেড়াতে খুব ভালো লাগছিল। দেলদুয়ার পৌঁছে রিকশা নিলাম (এই রিকশা না নিলে জমিদার বাড়ি দেখা হতো না)। জমিদার বাড়ির রাস্তা দেখেই বুঝা গেল সেই মাপের জমিদার ছিলেন এই বাড়ির লোকজন। পাশে শতবর্ষী মসজিদ আর সামনে বিশাল পুকুর। নিস্তব্ধ এলাকার মধ্যে বিশাল জমিদার বাড়ির ভেতরটা দেখার জন্য দুটি গেটেই ঢুঁ মেরে দেখলাম কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই।

আমাদের রিকশার ড্রাইভারের পরিচিত হওয়ায় উনার অনেক কষ্টের ফলে কেয়ারটেকারকে ম্যানেজ করে ভেতরে ঢুকতে সক্ষম হলাম। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল সবুজ খড়ে মোড়ানো কার্পেটের বিশাল খোলা উঠান। বিশাল আকৃতির শতবর্ষী গাছগুলো সাক্ষী হয়ে আছে এই বাড়ির প্রতিটি জমিদারের উত্থান ও পতনের ইতিহাসের। পাশেই রয়েছে জমিদার বাড়ির নিজস্ব কবরস্থান। এখানে শুয়ে আছেন ডজনখানেক এক্স-জমিদার, সঙ্গে তাদের জন্মসাল আর মৃত্যুসাল শোভা পাচ্ছে মার্বেল পাথরের খোদাই করা বোর্ডে।

বহুগুণের অলংকারিক বৃক্ষ কাঠবাদামের ফুলের সুগন্ধে যেন এখান থেকে বের হতেই ইচ্ছে করছিল না। বাড়ির নাম ‘নর্থ হাউস’। শতবর্ষী এই বাড়িটির প্রতিটি ইটের দেয়াল পুরোনো হলেও নতুনভাবে চুনকাম করা হয়েছে লাল আর সাদা রঙের মিশ্রণে। দেখতেই ব্রিটিশ আমলের মন্ত্রীর বাড়ির মতোই মনে হয়েছিল। পরে জানতে পারলাম এই বাড়ির জমিদার ব্রিটিশ আমলের মন্ত্রী ছিলেন। এখানে আর বেশি সময় না নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম পরের আরেকটি জমিদার বাড়ির খোঁজে।

নাগরপুর জমিদার বাড়ির পোড়াবাড়িতে

রিজার্ভ সিএনজি অটো ভাড়া করে ৩০০ টাকায় চলে গেলাম নাগরপুর (যদি শেয়ারে যেতে চান তাহলে ভেঙে ভেঙে সিএনজি অটো করে যেতে পারেন, এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা খরচ হবে)। রিকশা নিয়ে জমিদার বাড়ির সামনে গিয়েই দেখি সবকটি গেট বন্ধ। জমিদার বাড়ির সীমানা কতটুকু পর্যন্ত কারও কাছ থেকে জানতে পারলাম না, তবে সামনে প্রধান যে দুটি পুরোনো দালান দেখলাম তাতে নাগরপুর মহিলা অনার্স কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। সামনের পুকুর ঘাটে বসে খেঁচিয়ে ২/৩টি ফটো নিয়ে নিলাম আর চিন্তা করলাম যদি ভেতরেই না ঢুকতে পারি তাহলে এগুলো দিয়ে কাজ চালিয়ে দেব।

৫/৬টি জীর্ণশীর্ণ বাড়ি ঘুরে চারপাশ ঢুঁ মেরে কোথাও কোনো কিনারা করতে না পেরে সামনের দরজার ফটক দিয়ে মোবাইলের ক্যামেরা লাগিয়ে প্রধান দালানসহ দুটি দালানের ছটি নিয়ে রাখলাম। পরে জানতে পারলাম এখানে গোপন ক্যামেরা (সিসিটিভি) বসানো হয়েছে এবং ভেতরে কেউ নেই তখন। অবশ্য ওইদিন শনিবার হওয়াতে কলেজ ছুটির দিনে কাউকে পাওয়া যায়নি। খোলার দিনে গেলে হয়তো ভেতরে ঢোকাটা সম্ভব হতো। যা দেখেছি তাতেই সন্তুষ্ট থেকে চলে এলাম টাঙ্গাইলের ঐতিহাসিক মজাদার খাবার চমচম খাওয়ার জন্য টাঙ্গাইল প্রধান শহরে। তারপর এখান থেকে সোজা ঢাকা।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা