× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কালীগঙ্গা

নদীটি এখন ফসলের মাঠ

শাহজাহান বিশ্বাস

প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:৩০ এএম

আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪ ১৭:০৩ পিএম

মানিকগঞ্জের কালীগঙ্গা নদীর পানি শুকিয়ে ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে

মানিকগঞ্জের কালীগঙ্গা নদীর পানি শুকিয়ে ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে

একসময়কার মানিকগঞ্জের খরস্রোতা কালীগঙ্গা নদীর পানি শুকিয়ে এখন সবুজ ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। দেখা দিয়েছে পানির অভাব। হারিয়ে যাচ্ছে কালীগঙ্গার ঐতিহ্য, বন্ধ হয়ে গেছে নৌ-চলাচল।

বর্ষা এলেই দুকূল ভেঙে একাকার হয়ে যেত এক সময়। সেই নদী এখন শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে। জেগে উঠেছে চর, দুপাড় ভরে গেছে পলিমাটিতে। নদীর ঠিক মাঝে ধানের চারা রোপণ করেছেন অনেকেই। দেখে মনে হবে এটি কোনো ফসলের মাঠ। এভাবেই এক দিন হারিয়ে যাবে মানিকগঞ্জের খরস্রোতা কালীগঙ্গা। 

ঘিওর উপজেলার আশাপুর গ্রামের কৃষক বদর আলী (৬৫) জানান, নদীর পারে আমার ৬০ শতাংশ জমি রয়েছে। এবার আমি মাষকলাই বুনেছি। কিছুটা আবার গোল আলুও রোপণ করেছি। কালীগঙ্গা এখন আর আগের কালীগঙ্গা নেই। এটি এখন ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে।

কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, কালীগঙ্গার বুকে এবং নদী তীরবর্তী দুপাড় এখন রীতিমতো ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। নদীর বুকজুড়ে চলছে চাষাবাদ। কোথাও কোথাও গরু চরানো কিংবা শিশু-কিশোরদের খেলার দৃশ্য চোখে পড়ে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক শিক্ষক বলেন, নদী ভরাট হয়ে যাওয়া, দীর্ঘমেয়াদি ও পরিকল্পিত খনন না করা, ব্যবসায়ীদের অবৈধ-অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন, দূষণ এবং দখলে কালীগঙ্গার অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। কয়েক স্থানে একটা সরুধারা প্রবাহিত হচ্ছে। অনায়াসেই হেঁটে চলাচল করে গরু-ঘোড়ার গাড়ি। নাব্য হারানো এসব নদীর আকার-আয়তন মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে নদীর গতিসীমা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুরের যমুনা থেকে কালীগঙ্গা নদী উৎপন্ন হয়ে জাবরা হাটের কোলঘেঁষে সিংগাইরের ধল্লা পর্যন্ত কালীগঙ্গা নদীটির বিস্তৃতি। ৭৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কালীগঙ্গার গড় প্রস্থ ২৪২ মিটার। জেলার বুক চিরে বয়ে গেছে পদ্মা, যমুনা, ইছামতী, কালীগঙ্গা, কান্তাবতী, মনলোকহানী, গাজীখালী, ক্ষীরাই, মন্দা, ভুবনেশ্বর, ধলেশ্বরী। ১৩৭৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মানিকগঞ্জে নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৪১ কিলোমিটার। ছোট-বড় ১১টি নদীতে বছরজুড়েই পানির প্রভাব ছিল বিস্তর। এর মধ্যে একসময়ের প্রমত্তা কালীগঙ্গার প্রলয়ংকারী রূপ ছিল ভয়াবহ, এ নদীতে চলত স্টিমার, ফেরি। দুকূল ছাপিয়ে ভাঙত বসতি-ফসলি জমি। এখন হেমন্তেই যেন মরা খালে পরিণত হয়েছে কালীগঙ্গা। 

কালীগঙ্গা পারের সিংজুরী গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, দুই দশক আগেও বছরজুড়ে পানি থাকত নদীতে। নদীর বেশিরভাগ অংশই শুকিয়ে গেছে। নৌকার পরিবর্তে চলাচল করে ঘোড়ার গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহন। পানির উৎসকে বাঁচিয়ে রাখার দাবিতে সম্প্রতি মানিকগঞ্জ নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটি সব নদী ও খালের নাব্য রক্ষায় নিয়মিত খনন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদী ও খালের নাব্য রক্ষায় নিয়মিত খনন কার্যক্রমের দাবি জানিয়ে আসছেন তারা।

পরিবেশ ও প্রকৃতিবাদী লেখক দীপক কুমার ঘোষ বলেন, নদীমাতৃক দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। মানিকগঞ্জে নদীর প্রভাব ছিল বিস্তর। নদী ঘিরেই গড়ে উঠেছিল এ অঞ্চলের কৃষি, অর্থনীতি, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও সভ্যতা। কিন্তু সেই ঐতিহ্য ক্রমশই হয়ে আসছে সংকুচিত। আজ পানির দেশে পানির জন্যই হাহাকার। সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনায় সরকারের মনোযোগ ও কার্যকরী পদক্ষেপে আরও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

এ নদীকে কেন্দ্র করে জেলার কযেকশ জেলে পরিবারের রুটি-রোজগার হতো। নদীতে পানি না থাকার কারণে জেলেরা বদল করছেন পেশা। ফলে পরিবার নিয়ে তারা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।

জাবরা গ্রামের পরীক্ষিত হালদার বলেন, ‘নদীতে পানি শুকিয়ে গেছে। পানি নেই, মাছ নেই। বাধ্য হয়ে পূর্বপুরুষদের পেশা বাদ দিয়ে স্বর্ণের দোকানে কাজ করছি।’

ঘিওর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, কালীগঙ্গা নদী পানিশূন্য হয়ে পড়ায় মাছের উৎপাদন কমেছে ৪৫ ভাগ, হুমকির মুখে জেলেদের জীবন-জীবিকা। পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। কালীগঙ্গা নদী পারের তরা গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আবুল কাশেম জানান, এই নদীতে নিয়মিতভাবে স্টিমার, বড় বড় লঞ্চ ও বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল করতে দেখেছি। ঘিওর হাট, জাবরা হাট, তরা হাট, বেউথা বন্দর ছিল জমজমাট নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসিদ্ধ এলাকা। ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।

জেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চলের অধিকাংশ চাষি আগে নদী থেকে পানি তুলে জমিতে সেচ দিতেন। নদীগুলো মরে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এতে মারাত্মক সেচ সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। 

মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মানিকগঞ্জে প্রবহমান নদীগুলো, বিশেষ করে কালীগঙ্গা ও ধলেশ্বরীর অবস্থা খুবই করুণ। বেশিরভাগ নদীতেই পানির অভাব। এতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, কৃষি, মৎস্য, জীববৈচিত্র্যসহ সর্বত্র এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, নদী খনন ও পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। কিছু কাজ চলমান রয়েছে। আরও খননের জন্য জলবায়ু ট্রাস্ট এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বরাবর কয়েকটি প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা