আইন-আদালত
দিলরুবা শরমিন
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:৪৬ পিএম
পাঠকদের আইনগত সমস্যার সমাধানে এই বিভাগ। নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী দিলরুবা শরমিন...
প্রশ্ন : আমার একটা ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। সম্পর্ক থাকার সময় কথা ছিল আমরা খুব শিগগিরই বিয়ে করব। তবে সেটা আমার ১৮ বছর বয়স হলে তারপর। আমাদের খুব গভীর সম্পর্ক থাকার কারণে সে প্রতিনিয়ত আমার কাছে আমার একান্ত ব্যক্তিগত ছবি চায়। না দিলে রাগ করে। কথা বলে না। দেখা করে না। এর ফলে আমার খুব কষ্ট হতো। আমার প্রেমিকের বারবার চাপে বা অনুরোধে আমি তার কাছে আমার একান্ত ব্যক্তিগত ছবিগুলো দিই। এরপর আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়। কিন্তু আস্তে আস্তে আমার প্রেমিক বদলে যেতে শুরু করে। হঠাৎই সে আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আমি আমাদের পরিচিত বন্ধুদের কাছে জানতে পারি সে অন্য মেয়ের সম্পর্কে জড়িয়েছে। কোনোভাবেই তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারি না। বাসায় গিয়ে পাই না। অফিসে গেলে দেখা করে না। এরপর হঠাৎ বন্ধুদের কাছে শুনি, সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের বন্ধুদের বিভিন্ন গ্রুপে সে আমার একান্ত ব্যক্তিগত ছবিগুলো শেয়ার দিয়েছে এবং অন্য বন্ধুদের দ্বারাও শেয়ার দিয়েছে।
আমি নিজে ওই গ্রুপগুলোয় ঢোকার চেষ্টা করে দেখি সেসব গ্রুপ থেকে আমাকে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। আমি বিস্মিত হয়ে যাই যে সে আমার একান্ত ব্যক্তিগত ছবিগুলো গ্রুপে শেয়ার দিয়েছে যেগুলো আমার কাছ থেকে নিয়েছে এবং আমিই তাকে দিয়েছি। কেবল শেয়ার দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, সেখানে আজেবাজে কথাও লিখেছে। আমি বিষয়টা নিয়ে নানাভাবে প্রতিবাদ করলে আর তাদের এসব শেয়ার না করার অনুরোধ করলে তারা আমাকে তিরস্কার করে এবং আরও শেয়ার করবে বলে জানায়। আমি এ সমস্যা নিয়ে আমার কাছের বন্ধুদের সঙ্গে, বড় ভাই ও আপাদের সঙ্গে কথা বললে তারাও উদ্যোগ নিয়ে এসব ছবি শেয়ার করা থেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করেন; কিন্তু আমার ওই সাবেক প্রেমিক বা তার অনুগতরা জঘন্য ভাষায় আমার বড় ভাই ও আপাকে তিরস্কার করে। আমি তখন বাধ্য হয়ে থানায় কমপ্লেন দিতে যাই। পুলিশ আমার সবকিছু শুনে আমাকে জঘন্য ভাষায় তিরস্কার করে এবং মামলা না নিয়ে একটা জিডি নেয়। পুলিশ আমাকে বলে, আপনার মানসম্মান বাঁচানোর জন্যই মামলা নিলাম না। জিডি নিয়েছি এটাই যথেষ্ট। জিডি করার খবর পেয়ে কিছুদিন আমার সাবেক প্রেমিক ও তার দলবল চুপচাপ ছিল। যখন দেখেছে আমি জিডি করে কোনো ফল পেলাম না, বিচার পেলাম না তখন তারা আবারও একই কাজ শুরু করেছে। আরও জঘন্য ভাষায় আমাকে নিয়ে গ্রুপে হাসাহাসি করে আর ছবি একাধিক নামে-বেনামে অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার দেয়। এরকম অবস্থায় আমি খুবই খারাপ আছি। আপনার কাছে আমার জানতে চাওয়া আমি এখন কী করব? আমার বাঁচার উপায় কী? বিচার কীভাবে পাব?
- নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ধানমন্ডি, ঢাকা
উত্তর : আপনি সরাসরি একজন ক্রিমিনাল আইন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আপনার সাবেক প্রেমিক যা করেছে সেটা আইনগতভাবে চরম অন্যায়। তাকে সাজা পেতেই হবে। বিশ্বাসভঙ্গ, ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও শেয়ার করা চরমভাবে আইনের লঙ্ঘন। প্রমাণিত হলে এর সাজা ভয়াবহ। এ মামলায় কোনো ব্যক্তির সাক্ষ্য না দিলেও চলবে। কেবল ডকুমেন্টসই কথা বলে। আপনি ডকুমেন্টগুলোর স্ক্রিনশট নিয়ে রাখুন। তার বিরুদ্ধে একাধিক ফৌজদারি মামলা হবে। পুলিশের উচিত ছিল আপনাকে তিরস্কার না করে মামলা নিয়ে তাকে আগে গ্রেপ্তার করা। আপনি থানায় আরেকবার চেষ্টা করুন। থানা সহযোগিতা না করলে আদালতে যান। সাহস রাখুন। অপরাধ প্রমাণ করতে পারলে সাজা তার হবেই। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী সাজা মৃত্যুদণ্ড অবধি।