মাহমুদ হাসান
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:৪৮ পিএম
ঢেউয়ের গর্জন ও পাখির কলকাকলিতে অনিন্দ্য সুন্দর সমুদ্রসৈকত
নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে ঘেরা সমুদ্রসৈকত। যেখানে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য। চোখ জুড়ানো আর দৃষ্টিনন্দন ওই সমুদ্রসৈকতের নাম জাহাজমারা, তুফানিয়া, সোনারচর ও চরহেয়ার। সৈকতের তটরেখায় লাল কাঁকড়ার দলবেঁধে ছোটাছুটি। ঢেউয়ের গর্জন। সবুজ বনাঞ্চল। গাছে গাছে পাখির কলকাকলি।
পর্যটনের অপার সম্ভাবনায় ঘেরা সৈকত চারটির ভৌগোলিক অবস্থান নদী ও সাগরবেষ্টিত পটুয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীতে। ৩০ কিলোমিটার দূরের সৈকত কুয়াকাটার চেয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে রাঙ্গাবালীর পর্যটন স্পটগুলো এগিয়ে। কিন্তু যাতায়াতে সময় বেশি হওয়ায় পিছিয়ে ছিল এখানকার পর্যটন সম্ভাবনা। রাঙ্গাবালীর সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগমাধ্যম একমাত্র নৌপথ। তবুও অসংখ্য পর্যটক প্রাকৃতিক সান্নিধ্য পেতে এখানে ছুটে আসেন।
সৌন্দর্যমণ্ডিত পর্যটন স্পটের নিদর্শন
অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে জেগে থাকা ‘সোনারচরে’ সোনা নেই ঠিকই, কিন্তু আছে সোনালি আভা। সূর্যের রশ্মি যখন সৈকতের ওপর পড়ে, তখন দূর থেকে মনে হয়, সত্যিই সোনার আবির্ভাব হয়েছে এখানে। মনে হবে প্রলেপ দেওয়া হয়েছে স্বর্ণের। সোনারচর উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে সাগরের কোলঘেঁষে অবস্থিত। বনবিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, সুন্দরবনের পরই আয়তনের দিক থেকে এটি বৃহত্তম বনাঞ্চল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সুবিশাল সমুদ্রসৈকত।
সৌন্দর্যের কমতি নেই ‘জাহাজমারা’ দ্বীপেও। দ্বীপটির ভৌগোলিক অবস্থান মৌডুবি ইউনিয়নে। জাহাজমারার কাছেই আরও দুটি দ্বীপ রয়েছে। একটির নাম ‘তুফানিয়া’ অন্যটির ‘চরহেয়ার’। যেখানে আছে নিবিড় সবুজের সমারোহ। সৈকতে অগণিত লাল কাঁকড়ার ঝাঁক। আছে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত। বনবিভাগের ঘন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। জেলে নৌকার বহর।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা পর্যন্ত যাবেন। ভাড়া জনপ্রতি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। গলাচিপা সদর থেকে সড়কপথে ১৫ থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে পানপট্টি কিংবা বোয়ালিয়া ঘাটে যাবেন। সেখান থেকে স্পিডবোট কিংবা লঞ্চে রাঙ্গাবালী যাবেন। ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ টাকা ও ৬০ টাকা। এ ছাড়াও ঢাকার সদরঘাট থেকে সন্ধ্যা ৬টায় দোতলা লঞ্চ ছেড়ে আসে রাঙ্গাবালীর উদ্দেশে। ভাড়া সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ৩০০ ও ডাবল ২ হাজার ৫০০।
যেখানে রাত্রিযাপন করবেন
খুব সকালে সৈকত ঘুরে দেখার জন্য বেরিয়ে পড়তে হবে। সৈকত দর্শন শেষে সোনারচর লাগোয়া চরমোন্তাজ ইউনিয়নে থাকার জন্য আবাসিক রেস্ট হাউস রয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা শহরে আবাসিক হোটেল এবং জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় থাকা যাবে।
অবকাঠামো উন্নয়ন
চার সমুদ্রসৈকতের একটিতেও নেই হোটেল-মোটেল। তবে সম্প্রতি বেসরকারিভাবে জাহাজমারা সমুদ্রসৈকতে কটেজ নির্মাণাধীন রয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য সোনারচর, জাহাজমারা, তুফানিয়া ও চরহেয়ারে পন্টুন স্থাপন করা জরুরি। একই সঙ্গে হোটেল-মোটেল ও রেস্ট হাউসসহ আধুনিক অবকাঠামো তৈরি করলে পর্যটকদের এসব দ্বীপে আসার আগ্রহ আরও বেড়ে যাবে। প্রশাসনের তথ্য বলছে, রাঙ্গাবালীর চারটি পর্যটন স্পট নিয়ে ট্যুরিস্ট জোন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। যা ইত্যেমধ্যে ঘুরে গিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।