নুসরাত খন্দকার
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:৪১ পিএম
শীতের আমেজ চলছে সবখানে। এসময় কমবেশি সবারই আলাদা যত্নের প্রয়োজন হয়। শিশুরা আবহাওয়ার দ্রুত তারতম্যের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনা অনেক সময়। কেননা শিশুদের শরীর ও ত্বক খুব স্পর্শকাতর। তাই শীতকালে শিশুদের প্রয়োজন একটু বাড়তি যত্ন-
অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকাল শিশুদের জন্য কষ্টকর ও অসহনীয় হয়ে ওঠে। এ সময় জ্বর, পেট খারাপ বা ডায়রিয়া, সর্দি-কাশিসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যাসহ নিউমোনিয়ায় পর্যন্ত ভুগতে দেখা দেয়। এ ছাড়া শীতে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নানা ভাইরাল জ্বরও বেশি হয়। শীতে কীভাবে শিশুর যত্ন নেবেন, রইল তার পরামশ ও কয়েকটি উপায়-
নবজাতবকের যত্ন
শীতকালে
নবজাতকের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। নবজাতকের তাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা খুবই
কম থাকে। তাই অল্প শীতেই দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা। যে বাচ্চা পূর্ণ ৩৭ সপ্তাহ
মাতৃগর্ভে কাটিয়ে জন্ম নিয়েছে তার ক্ষেত্রে জটিলতা কম। কিন্তু সময়ের আগেই জন্ম
নেওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। জন্মের আগে নবজাতক শিশু মায়ের পেটে
উষ্ণ তাপমাত্রায় অবস্থান করে। এছাড়া শিশুর শরীরে তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি হতেও
সময় লাগে। তাই ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুকে উষ্ণ তাপমাত্রায় রাখতে হবে। যদি ঘরের
তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তবে সুতির কাপড় পরিয়ে কাঁথা দিয়ে মুড়ে রাখুন। এ
মাত্রার নিচে হলে সোয়েটার ব্যবহার করতে পারেন।
· শিশুকে দোলনায় বা আলাদা মশারির নিচে না রেখে মায়ের কোলঘেঁষে রাখলে
ভালো। এতে বাচ্চা উষ্ণ থাকবে, মায়ের সঙ্গে আন্তরিকতা বাড়বে। বাচ্চাকে ঘনঘন বুকের
দুধ খাওয়ান। দুধ খেতে হালকা ব্যায়াম হয় বলে শরীর নিজ থেকেই উত্তাপ তৈরি করে। এ
ছাড়া বুকের দুধে রোগ প্রতিরোধ শক্তি থাকে। ফলে শিশু সহজে ঠান্ডা, কাশি ইত্যাদিতে
আক্রান্ত হয় না।
·
এ সময় বাইরের ঠান্ডা বাতাস থেকে বাঁচতে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রেখে
উষ্ণতা নিশ্চিত করতে পারেন। তবে ঘরে কয়লা ও তুষের আগুন রাখবেন না। এতে শিশুর ক্ষতি
হয়।
· শিশুকে শীতকালে ঘরের বাইরে নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। রোদে দিতে হলে
জানালার পাশে বা ঘরের বারান্দা থেকে গায়ে রোদ লাগান।
· যদি পরিবারের কোনো সদস্যের বা কোনো আত্মীয়ের সর্দি, কাশি, ভাইরাল
জ্বর ইত্যাদি থাকে, তবে শিশু ও মাকে তাদের থেকে দূরে রাখতে হবে।
· সপ্তাহে দু-তিন দিন ঈষদুষ্ণ পানি (৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) দিয়ে গোসল
করান। গোসলের আগে ঘরের দরজা-জানালা লাগিয়ে নিন। গোসলের পর শিশুর গায়ে বেবি অয়েল বা
ভ্যাসলিন ব্যবহার করুন।
· নবজাতক শিশুর সামান্য কাশি বা হাঁচিও কিন্তু সন্দেহজনক। তাই কাশি,
শব্দ করে শ্বাস টানা, দুধ টেনে খেতে না পারা, শ্বাস নিতে কষ্ট বা পাঁজর নিশ্বাসের
সঙ্গে দেবে যেতে থাকলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
· শিশুকে রাতের বেলা ডায়াপার পরিয়ে শোয়ান। ডায়াপার ছয় ঘণ্টার বেশি
কোনোভাবেই রাখা যাবে না। ডায়াপার থেকে র্যাশ হতে পারে, তাই আগে থেকে ভেসলিন বা
জিঙ্কসমৃদ্ধ ক্রিম লাগিয়ে দিন।
·
শীতে নবজাতককে অবশ্যই হাতমোজা, পা-মোজা ও কানটুপি পরাতে হবে। উল বা
পশমে অ্যালার্জি হলে এগুলো পরিহার করে ভারী সুতির জামা পরান। সন্ধ্যার পর বাইরে না
বের হলেই ভালো।
দেড় মাস থেকে
এক বছর বয়সি শিশুর যত্ন
·
শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে ভুলবেন না। গোসলের আগে বেবি অয়েল দিয়ে
শরীর ম্যাসাজ করতে পারেন।
·
গোসলের পর ত্বকে লোশন লাগিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে পারেন। শিশুর
জন্য ম্যাসাজ খুব ভালো।
·
তেল ব্যবহারে সতর্ক থাকুন। নারকেলের তেল ব্যবহারে ঠান্ডা লাগতে
পারে। আবার তেল ব্যবহারের ফলে ত্বকে ময়লা আটকানোর আশঙ্কাও বেশি।
·
ডায়াপার ব্যবহারের আগে জিঙ্কসমৃদ্ধ ক্রিম লাগিয়ে নিন।
·
উল বা পশমের কাপড় পরানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। কেননা, এগুলোয় ময়লা
জমে ডেকে আনতে পারে কোল্ড-অ্যালার্জি। ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে পরান।
·
যতটা সম্ভব হাতমোজা, পা-মোজা ও টুপি পরিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন।
·
শিশুকে যতটা সম্ভব বুকের দুধ খাওয়ান।
·
ছয় মাসের বেশি বয়সী বাচ্চাকে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার দিন।
খিচুড়িতে ডিমের সাদা অংশ, লালশাক, পালংশাক অল্প করে দিতে পারেন। মাঝেমধ্যে
কমলালেবুর রস, লেবুর রস ও ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ান। এতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়বে।
·
কোনভাবেই ঠান্ডা খাবার খাওয়াবেন না। সবজি ও চিকেনের স্যুপজাতীয়
গরম, পুষ্টিকর, তরল খাবার দিন।
·
হামাগুড়ি দেয়া শিশুদের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে তারা যেন ঠান্ডা
মেঝেতে হামাগুড়ি না দেয়। তবে কার্পেট ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ কার্পেটের ধুলো
থেকে অ্যালার্জি হয়। তাই মাদুর বা ম্যাট ব্যবহার করা ভালো।
·
বাচ্চাকে নরম কাপড়ের জুতা পরানোর অভ্যাস করুন ও শোয়ানোর সময় মোজা
পরিয়ে নিন।
· মনে রাখবেন, এ বয়সি বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাই সর্দি,
কাশি সহজেই লেগে যায়। বাচ্চাকে খুব জনবহুল স্থানে (মেলা, পিকনিক) না নিয়ে যাওয়াই
ভালো।
এক থেকে ছয়
বছরের বয়সের শিশুর যত্ন
· এ বয়সে শিশুরা অনেক খেলাধুলা ও দৌড়াদৌড়ি করে। তাই খুব বেশি গরম ও
ভারী কাপড় পরার প্রয়োজন হয় না। তবে সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় ও বিকালে খেলতে যাওয়ার
সময় শিশুর উষ্ণতা নিশ্চিত করুন।
·
নিয়মিত উষ্ণ পানিতে গোসল করান। এ বয়সী শিশুরা বেশ চঞ্চল হয়। তাই
তাদের গতিবিধি খেয়াল করুন।
· বাচ্চাকে স্কুলে পাঠালে অন্যদের থেকে শীতকালে কিছু সংক্রমণ রোগ ও
ছোঁয়াচে চর্মরোগ বিস্তার লাভ করতে পারে। তাই শিশুর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি
খেয়াল রাখুন। নিয়মিত লোশন লাগান যেন ত্বক শুষ্ক হয়ে না যায়। বাসি, বাজারের খোলা
খাবার ও ঠান্ডা খাবার পরিহার করে গরম ও ঘরে তৈরি করা খাবার দিন এবং তাজা শাকসবজি,
ফলমূল খাওয়ান।
· শীতকালীন শাকসবজি ও ফল বেশি করে খেতে দিন। করোনার সবচেয়ে বড় শিক্ষা
স্বাস্থ্যবিধি যেমন হাত ধোওয়া ও মাস্ক পরা নিশ্চিত করুন।
· শিশুর ত্বকের যত্নে কী ধরনের পণ্য ব্যবহার করছেন (শ্যাম্পু, বেবি
লোশন, বেবি অয়েল, বডি ওয়াশ, বেবি ফেশিয়াল ক্রিম, লিপ বাম ইত্যাদি) খেয়াল রাখুন।
সেগুলো কী উপাদানে তৈরি, দেখুন। সফট, হালকা, হাইড্রেটিং, সোপ ফ্রি,
অ্যালকোহল-প্যারাবেন ফ্রি, ময়েশ্চারাইজিং পণ্য ব্যবহার করুন।