অদ্রীকা ইসলাম
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৩৯ পিএম
পোশাক ও ছবি : বিশ্বরঙ
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। শত বছরের পরাধীনতার শেকল ভেঙে আমরা পাই স্বাধীনতা, পাই একটি মানচিত্র, লাল সবুজে আঁকা পতাকা। তাইতো বিজয়ের মাসে শত রঙের ঝরনাধারার মাঝেও প্রতিটি বাঙালির প্রাণে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে লাল-সবুজ রঙ
স্বাধীন বাংলাদেশের
৫২তম বছরে এসে পেছন ফিরে তাকালে চোখে পড়বে দেশের সংস্কৃতিতে এসেছে অনেক পরিবর্তন। বিশেষ
করে ফ্যাশনে। গত দুই দশকে দেশের ফ্যাশনের একটি বড় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে দিবসভিত্তিক সাজপোশাকের
বিষয়টি। পহেলা বৈশাখ থেকে শুরু করে বিজয় দিবসÑসব জাতীয় দিবস কেন্দ্র করে দেশি ফ্যাশন
ব্র্যান্ডগুলো সেজে ওঠে রঙিনভাবে। বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের পোশাকে দেখা মেলে জাতীয়
পতাকার লাল-সবুজ রঙ। সব বয়সি নারী-পুরুষ চেতনার ছোঁয়ায় এ রঙের পোশাক পরে রাঙিয়ে তোলেন
নিজেদের।
দেশে এবং দেশের বাইরে ইতিবাচক বাংলাদেশ তুলে ধরতে চাওয়ার প্রত্যাশায় গড়া আমাদের সব ব্র্যান্ডের অধীনে তৈরি করা হয়েছে বিজয় দিবসের সব পোশাক ও সামগ্রী, এমনটাই জানালেন রঙ বাংলাদেশের কর্ণধার সৌমিক দাস। কেবল বড়দের নয়, প্রতিটি নকশার পোশাকের দেখা মেলে শিশুদের জন্যও।
বিজয় মোটিফে শাড়ি
শাড়ির জমিন জুড়ে সবুজ
রঙ, পাড়ে লালÑবিজয় দিবসে এমন শাড়ি চোখে পড়বে না তা কি হয়? এখন তো শাড়ির ক্যানভাসে দেখা
মেলে নিত্যনতুন নানা মোটিফ। আঁচলজুড়ে থাকে মানচিত্র, দেশের ঐতিহ্য ও পতাকা। ফ্যাশন
হাউজগুলো ঘুরে দেখা গেল লাল-সবুজ মিশেলের শাড়িতে একদম পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তবে এবার
লাল-সবুজের সঙ্গে সাদা, হলুদ, নীল, সবুজের নানা শেড, ধূসর রঙের আধিপত্যের দেখা মিলছে।
প্রতিটি শাড়ির থিমেই রয়েছে দেশের ঐতিহ্য, পতাকা ও দেশপ্রেমের চেতনা। কোনো কোনোটার আঁচলে
দেখা যাচ্ছে স্মৃতিসৌধের জিওমেট্রিক ফর্ম।
এ ছাড়া দেশাত্মবোধক
গান, কবিতা, দেশি নদ-নদীর নাম ও গ্রাম বাংলার ছবি দেখা মিলছে শাড়িতে। কোনো কোনোটায়
শুধু সবুজ জমিন, লাল পাড় ও আঁচল দিয়ে করা হয়েছে পতাকার প্রতিচ্ছবি। এগুলোয় থাকছে হালকা
সুতার এমব্রয়ডারি ওয়ার্ক। আবার লাল-সবুজের বাটিক, ব্লক প্রিন্টও দারুণ চলছে এবার। ফেব্রিক
হিসেবে আছে বেশিরভাগই সুতি; যা পরতে অনেক আরামদায়ক। একদম দেশি তাঁতের কাপড় দিয়ে তৈরি
হয়েছে বিজয় মোটিফের শাড়িগুলো। এ ছাড়া আড়ংসহ বেশ কিছু ফ্যাশন হাউস এনেছে লাল-সবুজ জামদানি
শাড়ি; যা রঙ ও ফেব্রিক সব দিক থেকে আমাদের দেশকে উপস্থাপন করবে। সঙ্গে আছে দারুণ সব
ব্লাউজ পিস।
বিশ্বরঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা জানান, বিজয় দিবস ঘিরে তাদের রয়েছে লাল-সবুজের বিশেষ আয়োজন। পোশাকে দেশের পতাকার গ্রাফিক্যাল ফর্মের নান্দনিক উপস্থাপনায় টাইফোগ্রাফি, ক্যালিওগ্রাফির সমন্বয় চোখে পড়বে। শাড়ির আঁচলে সবুজ জমিনের মাঝে টকটকে লাল সূর্যে থাকছে দেশাত্মবোধক গানের টাইফোগ্রাফি। দেশি রঙ এবং দেশি কাপড় দিয়ে এ আয়োজন করেছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিজয় দিবসের কামিজ-কুর্তি
কামিজ-কুর্তি ফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। তরুণী থেকে সব বয়সের নারী স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে পারেন এ পোশাক। কটন আর সিনথেটিক মিলিয়ে দারুণ বিজয় দিবসের সব কামিজ, কুর্তির কালেকশন এনেছেন বলে জানিয়েছেন সারা ফ্যাশন হাউসের ডিজাইনার মেহেরুবা আলম। সবকটিতেই বিজয়ের ছোঁয়া আর এমব্রয়ডারি, কারচুপিসহ নানা ধরনের কাজ। আর সিঙ্গেল কামিজ বা কুর্তিগুলো দেবে ক্যাজুয়াল লুক। কামিজ, ফ্রক বা কাফতান যেকোনো স্টাইলের ওয়ান পিস পরে নিতে পারবেন প্যান্ট বা পালাজ্জোর সঙ্গে। সালোয়ার ও ওড়না, সবুজ এ ধরনের কনট্রাস্ট দেখা গেল বেশিরভাগ ব্র্যান্ডে। এগুলোর কোনোটাতে বুকে আলাদা কাপড় বসিয়ে কাজ করা, লেইস, টারসেলের কাজ তো আছেই। স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লকবাটিকের সালোয়ার-কামিজের মধ্যে থাকছে লাল, সবুজ ও সাদার মিশেল।
ছেলেদের পোশাক
যেকোনো দিনেই ছেলেদের
ফ্যাশনে পাঞ্জাবি থাকে প্রথম পছন্দে। আর দেশি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি তুলে ধরতে পাঞ্জাবির
কোনো বিকল্প হয় না। যেকোনো অনুষ্ঠানেই পাঞ্জাবি দেয় ক্লাসিক লুক। ফ্যাশন হাউসগুলো ঘুরে
দেখ গেল বিজয় দিবসের বাহারি পাঞ্জাবির কালেকশন। এর মধ্যে রয়েছে শর্ট, লং দুই ধরনের
পাঞ্জাবি। সবুজ পাঞ্জাবিতে গলায় ও হাতে হালকা লাল কারুকাজ চোখে পড়ার মতো। সুতি, তসর,
খাদি, হাফসিল্ক সব মেটেরিয়ালের ওপরই আছে এগুলো। আবার একদম সুতি বাটিকের পাঞ্জাবির কদরও
এবার কম না। এবার একেবারে লাল-সবুজ না করে সাদার ওপরে লালের কাজও করেছে বেশ কিছু ফ্যাশন
হাউস। সাদা পাঞ্জাবিতে বুকে লাল কাজ, নানা রঙের হ্যান্ডপেইন্টের কাজগুলো এবার তরুণদের
কাছে খুবই জনপ্রিয়।
আর সব বয়সি ছেলের জন্য টি-শার্ট তো আছেই। যেহেতু সময়টা এখন শীতকাল তাই ছোটবড় সবার জন্য ফুল স্লিভ ও হাফ স্লিভ টি-শার্ট পাওয়া যাচ্ছে। সবুজ রঙের গেঞ্জিতে বুকে লাল বৃত্ত দিয়ে পতাকা, দেশের নাম, স্মৃতিসৌধ, সংসদ ভবন, আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লাসহ নানান ঐতিহ্যের ছবিসংবলিত টি-শার্টগুলো সারা বছরই আপনাকে পৌঁছে দেবে অন্য মাত্রায়।
দেশি মোটিফে শাল
এখন সময় যেহেতু হালকা শীতের, সকালে ও সন্ধ্যায় শাল পরতে পারেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে ফ্যাশন হাউসগুলোয় বিভিন্ন পোশাকের পাশাপাশি মিলছে শালও। শালগুলো এমনভাবে তৈরি হয়েছে যা মানিয়ে যাবে যেকোনো পোশাকে। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, পাঞ্জাবি সবকিছুর সঙ্গেই পরা যাবে। হাফ লাল ও হাফ সবুজ রঙের শালগুলো কোনো কাজ ছাড়াই লাগছে দারুণ এলিট। এ ছাড়া অফহোয়াইট রঙের ওপর কবিতা, গান ও গ্রাম বাংলার স্ক্রিন প্রিন্টের চাদরগুলো বিজয় দিবসের সৌন্দর্যে নিজেকে ধারণ করতে আরও সাহায্যে করবে। এগুলোর নিচে থাকছে নানা ধরনের টারসেল। তবে এখন নতুন মাত্রা যোগ করেছে প্যাচওয়ার্কের কাজ। কাপড়ের কোলাজ করে দারুণ সব মিনিংফুল চাদর দেখা যাচ্ছে দেশি ফ্যাশন হাউসগুলোয়।
শিশুদের জন্য
বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা
দিবসে বড়দের পাশাপাশি ছোটদের জন্যও থাকে বিশেষ আয়োজন। পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, সালোয়ার-কামিজ
এমনকি শাড়িও পাওয়া যাচ্ছে সবখানে। পরিবারের সবার সঙ্গে মিলিয়ে পরার মতো পোশাকও রয়েছে
বিভিন্ন হাউসে। শিশুদের জন্য তৈরি এসব পোশাকে ব্যবহার করা হয়েছে আরামদায়ক কাপড়।
কোথায় পাবেন, কেমন দাম
দেশি সব ফ্যাশন হাউস
আড়ং, দেশীদশ, বিশ্বরঙ, কে ক্রাফট, রঙ বাংলাদেশসহ নিউমার্কেট, গাউছিয়া, গুলশান পিংক
সিটি, মিরপুর শপিং কমপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্কসহ সব মার্কেটে মিলবে বিজয় দিবসের পোশাক। ফেব্রিকভেদে
শাড়ি কিনতে পারবেন ১ হাজার ৬শ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। এ ছাড়া বিভিন্ন শপিং মল ও
নিউমার্কেটে শাড়ির মূল্য ১ হাজার থেকে শুরু। ফুল সেট সালোয়ার-কামিজ পেয়ে যাবেন ১ হাজার
৮শ থেকে ৪ হাজার টাকার মধ্যে। এ ছাড়া সিঙ্গেল পিস কিনতে গুনতে হবে ৮শ থেকে ১ হাজার
৮ শত টাকা। পাঞ্জাবি পাবেন স্থান ও কোয়ালিটি ভেদে ১ হাজার ২শ টাকা থেকে ৩ হাজার ৬শ
টাকার মধ্যে। টি-শার্ট ৫শ টাকা থেকে শুরু। বিজয় দিবসের শাল কিনতে পারবেন ফেব্রিক ও
কাজ ভেদে ১ হাজার থেকে ২ হাজার ২শ টাকার মধ্যে।