× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দেশের প্রথম থ্রিডি ওয়েব সিরিজ

আশিকুর রহমান

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:৫৪ পিএম

রুহান-রাতুল ও তাদের তৈরি অ্যানিমেশন ক্যারেক্টার

রুহান-রাতুল ও তাদের তৈরি অ্যানিমেশন ক্যারেক্টার

দুই বছর ধরে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো একটি থ্রিডি ওয়েব সিরিজ নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন দুই শিক্ষার্থী রুহান ও রাতুল। নির্মাণ শেষে এ ডিসেম্বরেই মুক্তির অপেক্ষায় ‘এক্সডি ব্রস’ নামের এ অ্যানিমেটেড সিরিজটি। তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন আশিকুর রহমান-

আরটিবি রুহান ও রাতুল বিশ্বাস একসঙ্গে ত্রিমাত্রিক ডিজাইন স্টুডিও নামে একটি অ্যানিমেশন স্টুডিওতে কাজ করতেন। দুজনেরই অ্যানিমেটেড ফিল্ম এবং গেম খুব পছন্দের একটি বিষয় ছিল। এসব নিয়ে তাদের কাজের অভিজ্ঞতাও দীর্ঘ সময়ের। টেন মিনিট স্কুলের কিছু এডুকেশনাল কনটেন্ট সিরিজের ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে কাজ করেছেন বিভিন্ন কমার্শিয়াল প্রজেক্টে। জাপানের একটি সায়েন্স ফিকশন ঘরানার অ্যানিমেটেড শর্টফিল্মে কাজ করেছেন, যা জাপান ও বিভিন্ন মুভি ফেস্টিভ্যালে বেস্ট সিজি অ্যানিমেটেড অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিল। বাংলাদেশেও এমন থ্রিডি অ্যানিমেটেড ফিল্ম নির্মাণের স্বপ্ন দেখতেন তারা।

যেভাবে শুরু

শুরুটা হয় ২০২১ সালের শেষের দিকে। সে সময় তারা নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেন। শুরুতেই তারা প্রজেক্টের শুরু থেকে শেষ এবং টার্গেট অডিয়েন্স নিয়ে স্টাডি করেন। স্টোরি ও কোয়ালিটি ফাইনাল করা হয় তখনই। এরপর শুরু হয় একজন স্টোরি রাইটারের খোঁজ। বইমেলায় বই দেখে প্রাথমিকভাবে যোগাযোগ করা হয় ‘লামিয়া হান্নান’ নামে তরুণ এক লেখকের সঙ্গে। প্রজেক্ট ভালো লাগে লামিয়ার। তারপর এ প্রজেক্টে যুক্ত হন তিনি। শুরু হয় গল্প ও গল্পের চরিত্র ডিজাইনের কাজ। এরপর বিভিন্ন লোকেশনে গিয়ে সেসব জায়গার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এর সেট ডিজাইন করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হন দেশের বাইরে থেকেও কয়েকজন শিল্পী।

যেভাবে হয়েছে নির্মাণ

বাইরের দেশের এমন প্রজেক্টগুলোয় এক টিম আরেক টিমের কাজ সম্পর্কে অবগত থাকে না। তারা শুধু নিজেদের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। এর ফলে নিজেদের টিম বন্ডিং এবং নিজেকে প্রডাকটিভ রাখা অনেক সহজ হয়। সময়ও কম অপচয় হয়। আমরা এ নিয়মগুলো অনুসরণ করেছি এবং এটি আমাদের কাজ আরও অনেক সহজ করে দিয়েছে। রুহান জানান, প্রথম দিকে এলোমেলো হলেও সময়ের সঙ্গে আমরা সবকিছু একটি শৃঙ্খলায় নিয়ে আসি। সম্পূর্ণ প্রজেক্ট বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ফেলি এবং প্রতি ক্যাটাগরি নিয়ে টিম তৈরি করি। আমরা এ প্রজেক্ট করার সময় বুঝতে পেরেছি একটি পরিকল্পনা অনুসরণ করে কাজ করলে কাজটি কতটা সুন্দরভাবে এগোয়।

ব্যবহার হয়েছে যেসব সফটওয়্যার বা টুলস

এ প্রজেক্টে ব্যবহৃত প্রধান সফটওয়্যার ছিল ব্লেন্ডার ও হুডিনি। ব্লেন্ডার মূলত একটি থ্রিডি গ্রাফিক্স টুল যার মাধ্যমে থ্রিডির কাজ করা হয়। এর মধ্যে ক্যারেক্টার অ্যানিমেশন থেকে ভিএফএক্স সবই করা যায়। ব্লেন্ডারের মাধ্যমে কার্টুন শহর ও এর ভেতর ক্যারেক্টার অ্যানিমেশন করা হয়েছে। আর হুডিনির সাহায্যে ক্যারেক্টারের ফেসিয়ালের কাজ করা হয়েছে। এ ক্যারেক্টারগুলো নির্মাণের জন্য জি ব্রাশ ব্যবহার করা হয়েছে। জি ব্রাশে মাটি দিয়ে পুতুল বানানোর মতো করে ক্যারেক্টার বানানোর সুবিধা রয়েছে। এডোবি সিসি ছিল খুব কমন একটি টুল। ভিডিও এডিটিংয়ে প্রিমিয়ার প্রো এবং আফটার এফেক্টসের ব্যবহার ছিল অনেক। ছবির বেলায় ব্যবহার করা হয়েছে ফটোশপ। সিরিজের ফটো থেকে ভিডিওÑ সব অংশে এডোবি সফটওয়্যার কালেকশনটি অনেক ব্যবহৃত হয়েছে।

প্রতিকূলতা মোকাবিলা

এ সিরিজ নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে নির্মাতাদের। পরিকল্পনা করতে গিয়ে দেখা গেল এ প্রজেক্ট করতে গিয়ে বছরখানেক লেগে যাবে, জবের পাশাপাশি যা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশের অ্যানিমেশনের ইন্ডাস্ট্রি খুব ছোট হওয়ায় আর্টিস্টদের নিয়ে টিম গঠন করতে গিয়েও বেগ পোহাতে হয়েছে নির্মাতাদের। রুহান জানান, আমাদের এ ফিল্ডে কাজ জানে এমন মানুষ পাওয়া খুব কঠিন ছিল। অভিজ্ঞতা নেই এমন মানুষ নিয়ে প্রজেক্ট এগোনোটাও সমস্যা ছিল, সৌভাগ্যবশত আমরা বাইরের দেশের অনেকের সাহায্য পেয়েছি; যার কারণে প্রজেক্টটি শেষ করা সম্ভব হয়েছে। 

যা রয়েছে সিরিজটিতে

এটি মূলত একটি সিটকম ধারাবাহিক। বাংলাদেশে সিটকমের খুব একটা চল নেই। সিরিজটির মূল টার্গেট অডিয়েন্স ১৫ থেকে ২০ উঠতি বয়সিদের নিয়ে। আমাদের সিরিজটি মূলত তিন বন্ধুর দৈনন্দিন জীবন কেন্দ্র করে। এখানে প্রধান চরিত্রে রয়েছে রাতুল, রুহান ও এ্যানি। তারা তিনজন অনেক দিনের বন্ধু। এর মধ্যে সবচেয়ে চালাক এ্যানি। সে ভালো স্টুডেন্ট। খুব বই পড়ে। রাতুল হচ্ছে সবচেয়ে দুষ্টু। সে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন উদ্ভট কাজ করতে গিয়ে ফেঁসে যায়। রাতুলের এ উদ্ভটকাণ্ডের গিনিপিগ হচ্ছে রুহান। রুহানকে বোকা পেয়ে সে সব সময়ই এর সুযোগ নেয়। রুহান অনেক বোকা একটি চরিত্র হলেও টেকনোলজি নিয়ে তার রয়েছে অনেক কৌতূহল। ওদের মধ্যকার এ ঘটনাগুলো নিয়েই এক্সডি ব্রসের প্রথম সিজন সাজানো হয়েছে।

রুহান জানান, নাল স্টেশন নামে আমাদের একটি ছোট স্টুডিও ছিল আগে থেকেই। আমরা এ স্টুডিও থেকে প্রজেক্টটি পাবলিশ করার সিদ্ধান্ত নিই এবং সেভাবে সবকিছু সাজাই। এ সম্পূর্ণ প্রজেক্ট শেষ করতে আমাদের দুই বছরের মতো লেগে গেছে। এখনও কিছু কাজ চলমান কিন্তু খুব শিগগিরই আমাদের এ কনটেন্ট পাবলিশ শুরু করব। তিনি আরও জানান, একই নামে আমরা একটি গেমও লঞ্চ করতে যাচ্ছি; যার কাজও ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

এমন নির্মাণের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চান তারা। ভবিষ্যতে নির্মাণ করতে চান আরও উন্নত কনটেন্ট। নিজেদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে রুহান জানান, আমরা চাই আমাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে এমন কিছু তৈরি করতে; যা দর্শকের জন্য অনুপ্রেরণার কারণ হতে পারে। বাংলাদেশের এ অ্যানিমেশন ও গেম ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে নিতে কাজ করে যেতে চাই। রুহান আর রাতুল দুজনই রিংলিং কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ডিজাইনে পড়ছেন। ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন লামিয়া হান্নান স্নেহা।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা