আকেল হায়দার
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:০৯ পিএম
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:২০ পিএম
সমুদ্রের কথামালার শব্দ, নীল জলের লাবণ্য, ঢেউয়ের উচ্ছ্বসিত স্লোগান সবার প্রিয়! পৃথিবীর যে প্রান্তের মানুষই হোক সমুদ্র সবাই ভালোবাসে। অনুভবে ভালোলাগার উপযোগ বাড়াতে কিংবা বিষন্ন মনের বিষাদ নিবৃত করতে মানুষের মন সব সময় সমুদ্রের কাছে ছুটে যেতে চায়। সমুদ্রের সান্নিধ্য খুঁজে বেড়ায়। জাদুকরের মতো সমুদ্র ওই মুহূর্তে তার কাছে ছুটে আসা সবার মন ভালো করে দেয়। কিন্তু অনুতাপের বিষয় হলো, যাদের প্রতি সমুদ্র এই বিনয় আর উদারতা দেখায়, তারাই প্রতিদিন তার বুকে ছুড়ে দিচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক আর রাশি রাশি বর্জ্য।
সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ বর্তমান সময়ের অন্যতম বড় এনভায়রনমেন্টাল ইস্যু, যা প্রায় সাতশ প্রকার সামুদ্রিক প্রজাতির অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা যায় সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণের কারণে প্রতি বছর প্রায় ছয় থেকে উনিশ বিলিয়ন সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই আবর্জনা মানুষ ও প্রাণী উভয়ের জন্যই বিপদ ডেকে আনছে।
এ ক্ষতির মূল কারণ হিসেবে ট্যুরিজম, মৎস্য শিকার, কৃষিকাজ ও কিছু দেশে সরকারিভাবে পরিচালিত পরিচ্ছন্ন অভিযানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্লাস্টিক দূষণ কেবল সামুদ্রিক প্রাণীর জীবনে প্রভাব ফেলে না। এটা ফুড চেইন, ওয়াইল্ড লাইফ ও ইকো সিস্টেমের ক্ষতি করছে। স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রতি বছর মিলিয়ন মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয়। প্রাথমিকভাবে বেশিরভাগ বর্জ্য নদীতে এবং পরবর্তী সময়ে তা নদী থেকে স্রোতের সঙ্গে সমুদ্রে পতিত হয়।
এই সমস্যা দূরীকরণের জন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং নদীতে বর্জ্য ফেলা রোধ করতে হবে, এমনকি সমুদ্রে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিটি মানুষকে এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে। সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য সবাইকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করতে হবে।
সমুদ্রের এই নীরব ক্ষরণ ও দূষণ রোধ করতে ডাচ উদ্ভাবক বোয়ান স্ল্যাট ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘দ্য ওশান ক্লিন আপ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। যখন তার বয়স মাত্র আঠার। এটি একটি নন প্রফিট অর্গানাইজেশন। এর সদর দপ্তর নেদারল্যান্ডসে। বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা ও সরকার এই প্রতিষ্ঠানে ডোনেশন করে থাকেন এবং সে অর্থ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ‘দ্য ওশান ক্লিন আপে’ ১২০ জন ইঞ্জিনিয়ার, গবেষক, বিজ্ঞানী ও এক দল নিবেদিত কর্মী এটি পরিচালনার কাজে নিয়োজিত আছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বের মহাসাগরগুলোকে প্লাস্টিক থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন স্কিম নিয়ে তারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ‘দ্য ওশান ক্লিন আপ’-এর লক্ষ্য ২০৪০ সাল নাগাদ সমুদ্রের ৯০ ভাগ প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করা।