× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দীঘিনালা থেকে সুইজারল্যান্ড

আসমাউল হুসনা

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:৩২ এএম

পুরস্কারজয়ী তরুণদের সঙ্গে তুফান চাকমা [বাঁ থেকে চতুর্থ]

পুরস্কারজয়ী তরুণদের সঙ্গে তুফান চাকমা [বাঁ থেকে চতুর্থ]

দীর্ঘদিন ধরে আঁকাআঁকির মাধ্যমে পাহাড়ের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার সমস্যা ও সম্ভাবনার গল্প বলছেন খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার তুফান চাকমা। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় আয়োজিত প্রতিযোগিতায় ফ্রান্স, স্পেন, হংকং, ইরান ও নাইজেরিয়ার পাঁচ তরুণের সঙ্গে পুরস্কৃত হয়েছে তার ছবি।

জাতিসংঘের ‘ইন্টারন্যাশনাল আর্ট কনটেস্ট ফর মাইনরিটি আর্টিস্ট ওয়ার্কিং অন ইন্টারসেকশনালিটি থিমস’ প্রতিযোগিতায় এ বছর ৩৫ দেশের ৮০ জন আর্টিস্ট অংশগ্রহণ করেন। এর থেকে চূড়ান্তভাবে পুরস্কার পান মাত্র ৪ জন, যার মধ্যে বাংলাদেশের তুফান চাকমা অন্যতম। ২ নভেম্বর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় স্বশরীরে উপস্থিত থেকে এ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন তিনি।

তুফান চাকমার শিল্পকর্ম- ফ্লাওয়ার অর ফায়ার

তুফান চাকমা জাবি চারুকলা বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার উদালবাগান গ্রামে তার বেড়ে ওঠা। প্রতিযোগিতায় তুফান চাকমা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার সংস্কৃতি, জীবনযাত্রার সম্মিলনে এক বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরেন নিজের আঁকা ছবি দিয়ে।

তুফান চাকমার শিল্পকর্ম- আনসার্টেনিটি অব এক্সিসটেন্স 

আন্তর্জাতিক রিকগনিশনের অর্জনে অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তুফান চাকমা জানান, ২০১৪ সালে প্রথম ঢাকায় আসেন নানা সংগ্রাম করে। গ্রামের সহজসরল অক্ষরজ্ঞানহীন এক পরিবারের সন্তান হয়ে এ পর্যন্ত আসাটা মোটেও মসৃণ সফর ছিল না। মা-বাবার অপ্রতিরোধ্য স্বপ্ন এবং নিজের ইচ্ছাশক্তি তাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে কাজের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হতে। সুইজারল্যান্ডে যাওয়াটা, তারপর স্বশরীরে এ পদক গ্রহণ এসবই তার কাছে ছিল স্বপ্নের মতো। জাবির চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা তাবাসসুম জানান, তারা তুফানের এ অর্জনে খুবই গৌরবান্বিত এবং তুফান দেশের জন্য আরও অনেক ভালো ভালো কাজ করবে বলেই প্রত্যাশা রাখেন তিনি।

সুইজারল্যান্ডে তুফান চাকমা

তুফান চাকমা প্রতিযোগিতার পেছনের গল্প জানাতে গিয়ে বলেন, ‘আমার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড এবং নিজের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় সুইজারল্যান্ডের মতো স্বপ্নিল ও ব্যয়বহুল জায়গায় পা রাখতে পারতাম কি না জানি না; তবে ওখানে যাওয়াটা ছিল ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন। আমার নেই মামার জোর, টাকার জোর। তবে আছে কাজ করার প্রত্যয়, দৃঢ় আত্মবিশ্বাস এবং স্বপ্ন দেখার সাহস। এ সাহসের জেরেই আমার পরিচিত একজন যখন এ বছরের এপ্রিলের শেষের দিকে আমাকে একটা লিঙ্ক পাঠাল একটা ইন্টারন্যাশনাল আর্ট কনটেস্টের জন্য, তখন আমি বিষয়টাকে ভালোমতো পড়ে অ্যাপ্লাই করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি সচরাচর যদিও আর্ট কনটেস্টগুলোয় কাজ দিই না তবে এ কনটেস্টের থিম INTERSECTIONALITY সম্পর্কে জেনে কাজ সাবমিট করার সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। যেহেতু আমার এ থিমের ওপর প্রচুর কাজ করা হয়ে গেছে ইতোমধ্যে, তাই কোন কাজগুলো বাছাই করব এ কনটেস্টের জন্য, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেলাম। পরে যে কাজগুলো সবচেয়ে যোগ্য মনে করলাম সেগুলো সাবমিট করলাম। এরপর মাসের পর মাস যায়। জুলাইয়ের মাঝামাঝি এসে হঠাৎ একটা মেইল পেলাম আর্ট সিলেকশন কমিটি থেকে। তারা আমার কাজ ভীষণ পছন্দ করেছে এবং খুব শিগগিরই ফাইনাল রেজাল্ট জানাবে। তারপর ৩১ জুলাই OHCHR থেকে আমাকে মেইল পাঠানো হয়।

তুফান চাকমার শিল্পকর্ম-  নেভার ফরগেট ইওর রুটস

আমার কাজ নিয়ে অনলাইনে ছোটখাটো একটা প্রেজেন্টেশন দিতে হবে। সবই ঠিকঠাকমতো করলাম এবং আরও বেশ কয়েকটি ধাপ পার করার পর তারা আমাকে জানাল, আমার কাজ ফাইনালি সিলেক্টেড ফর দ্য অ্যাওয়ার্ড এবং এ অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানটা ভার্চুয়ালি ২ নভেম্বর, ২০২৩-এ অনুষ্ঠিত হবে। সবকিছু মিলিয়ে তখনও এতটা উত্তেজনায় ছিলাম না এবং এটা সম্পর্কে আমার কাছের দুয়েক জন বাদে কেউ জানত না। নিজের পড়ালেখা, জীবনজীবিকা নির্বাহ করা নিয়ে আমি খুবই সংকটাপন্ন সময় পার করছিলাম। পড়ালেখা করলে টাকা থাকে না, টাকা ইনকামের জন্য কাজ করলে পড়ালেখা হয় না। ওই সময় পেজে অনিয়মিত হয়ে গিয়েছিলাম। এরকম এক মুহূর্তে ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩-এ আমার কাছে আরেকটি মেইল আসে। ২ নভেম্বর অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সশরীরে উপস্থিত থাকার জন্য আমাকে নিমন্ত্রণ জানিয়ে এবং সবচেয়ে বড় কথা আমার যাবতীয় খরচ তারা বহন করবে। ওই মুহূর্তে আমি এতটা Thrilled ছিলাম যে, নিজেকে কোনোরকম সামলে মেইলের রিপ্লাই দিলাম। তারপর শুরু হলো আসল যুদ্ধ। এত এত ধাপ, এত এত অভিজ্ঞতা, এত এত নিয়মনীতি সেই সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ শুরু করে সুইজারল্যান্ড গিয়ে ওখান থেকে বাংলাদেশে ফেরত আসা পর্যন্ত জীবনের সবচেয়ে নাটকীয়, ঘটনাবহুল ও শিক্ষণীয় এক সময় কাটালাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার জীবনে কোনো দিন ফ্লাইটে চড়ার অভিজ্ঞতা ছিল না। কত জল্পনাকল্পনা ছিল ছোটবেলা থেকে প্লেনে চড়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে, যেই আমার সারা জীবন স্বপ্ন ছিল ইন্টারন্যাশনাল কোনো মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি বক্তব্য দেব, আমার মায়ের কথা বলব, সেই আমি যখন আমার স্বপ্নে বাস করার সুযোগ পেলাম তাও স্বপ্নের মতো এক জায়গায়, এত এত সম্মান আর ভালোবাসা নিয়ে, পুরোটাই এখনও এক ঘোরমাখা স্বপ্নের মতোই অবিশ্বাস্য লাগে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা