লেখাপড়ার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং
হাসান সিকদার,টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ১২:৪১ পিএম
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:১৮ পিএম
অদম্য সামি লেখাপড়া করে হতে চার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার
প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম নেওয়া মানেই পরিবারের বোঝা- প্রচলিত এ ধারণা পাল্টে দিয়েছেন টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার আশরাফুল আলম সামি। আঠারো বছর বয়সের সামি গোপালপুর সরকারি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সাজ্জাদ হোসেন ও কাকলী পারভীন দম্পতির প্রথম সন্তান সামির বাড়ি উপজেলার কাজিবাড়ী গ্রামে।
সামির হাত-পা স্বাভাবিক নয়। মুখ বাঁকা, স্পষ্ট কথা বলতে পারেন না। কিছুটা শ্রবণশক্তিহীন। জন্ম ২০০৬ সালে। দাঁড়াতে পারেন না তাই হাতের ওপর ভর করে বসে এগিয়ে চলেন। সামির বাবা পেশায় গাড়িচালক। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনিও কাজকর্ম করতে পারেন না। কাকলী পারভীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসিতে সামি পেয়েছেন জিপিএ-৫। তিন ট্যালেন্টপুলসহ বৃত্তি পেয়েছেন সাতটি। ছোট সাইকেল চালানো, ক্রিকেট, ক্যারম, কম্পিউটার চালানো ও গাছে ওঠায় পারদর্শিতা আছে সামির। এসবের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করে গত তিন মাসে আয় করেছেন ৮০ হাজার টাকারও বেশি।
সামি স্পষ্ট কথা বলতে পারেন না। তাই খাতায় লিখে জানান, ‘আমি আমেরিকান ওয়েবসাইট ফ্রিক্যাশ, সার্ভেজুনকিসহ অন্যান্য সাইটে সার্ভের কাজ করি। ফ্রিল্যান্সিংয়ের টাকায় ল্যাপটপ, দুটি স্মার্টফোন ও বাসার আইপিএস কিনেছি। স্নাতকোত্তর শেষ করে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।’
সামির মা কাকলী পারভীন বলেন, ‘আমার ছেলের শারীরিক সমস্যা অনেক। মানুষ নানা কথা বলত, এমন ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে কী হবে? আমি কারও কথায় দমে যাইনি। ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। কোলে করে স্কুলে দিয়ে আসতাম। ছুটি হলে স্কুল থেকে নিয়ে আসতাম। শুরু থেকেই সাধারণ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করিয়েছি। ছেলের মেধা স্কুলের সহপাঠী ও শিক্ষকদের মুগ্ধ করত। আমার ছেলেকে নিয়ে এখন সবাই গর্ব করে। প্রতিবন্ধীরাও যে কিছু করতে পারে সেটা সে দেখিয়ে দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করাতে চাই। সরকার যদি সামির প্রতি নজর দেয় আইসিটি ডিপার্টমেন্ট বা কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরির ব্যবস্থা করে দেয় তবেই আমার কষ্ট সার্থক হবে।’
সামির বাবা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘যদি সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হয় তাহলে সে আরও এগিয়ে যেতে পারবে। একটা চাকরি যেন হয় তার, সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন।’
সামির সহপাঠীরা জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও সামি অনেক মেধাবী ছাত্র। হাতের লেখাও সুন্দর। পড়ালেখায় আমরা সামির বিভিন্ন সহযোগিতা পাই। সামি যে প্রতিবন্ধী কেউ কোনো খারাপ মন্তব্য করে না। সহপাঠীরা সবাই সামিকে ভালো চোখেই দেখে, সহযোগিতাও করে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এখলাছ মিয়া বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে ভবিষ্যতে যদি নতুন কোনো সুযোগসুবিধার পথ খোলা হয়, তবে আবেদন করলে তাকে অবশ্যই আমরা সহযোগিতা করব।’