আবু বকর রায়হান
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:১১ পিএম
কুকুরকে খাবার দেন পশুপ্রেমিক ফাতেমা খান।
রাস্তায় পড়ে ছিল অসুস্থ একটি কুকুর। দেখলে মনে হবে হয়তো চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একজন কুকুরটি দেখে থমকে দাঁড়ায়, আফসোস করে চলেও যায়। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসে না। একটু পর এক তরুণী এগিয়ে আসেন কুকুরটির কাছে। শুরু করেন রাস্তায় মৃত্যুর অপেক্ষায় পড়ে থাকা কুকুরটির চিকিৎসা। আহত কুকুরটির শরীরে একে একে পুশ করেন ইনজেকশন ও স্যালাইন।
তরুণীর নাম ফাতেমা খান। তিনি ঢাকার মাটিকাটা এলাকার বাসিন্দা। গত পাঁচ বছর ধরে রাস্তার অবহেলিত কুকুরদের সেবায় নিয়েজিত রেখেছেন নিজেকে। তিনি জানান, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে মাটিকাটা ব্রিজের নিচে অসুস্থ এ কুকুরটির চিকিৎসা করছেন। বর্তমানে প্রাণীটি সুস্থ হওয়ার পথে। মৃতপ্রায় প্রাণীটি শিগগিরই উঠে দাঁড়াতে পারবে বলে আশা করছেন তিনি।
এ সড়কের পাশ দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন এমন একজন জানান, তিনি অসুস্থ কুকুরটির চিকিৎসার জন্য কয়েক জায়গায় যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু সাড়া পাননি। শেষ পর্যন্ত ফাতেমা খান কুকুরটির চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ায় মনে শান্তি পেয়েছেন। কুকুর কিংবা বিড়ালের চিকিৎসার জন্য সব সময় ফাতেমা খানের কাছে থাকে ফার্স্ট এইড বক্স। এলাকার অসুস্থ সব প্রাণী যেন নিরাপদ বোধ করে, আশ্রয় পায় এই মানুষটার কাছে।
শুরুতে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে ফাতেমাকে। তবে সব প্রতিকূল পরিবেশে তার স্বামী সব সময় ছায়া হয়ে পাশে ছিলেন। ‘মানুষের কথার ভয়ে অনেক সময় রাতে কুকুরদের খাবার দিতে যেতাম। তবে পরিবার থেকে সব সময় সহায়তা পেয়েছি। নয়তো অনেক আগে আমাকে থেমে যেতে হতো’, বলছিলেন ফাতেমা খান।
প্রতিদিন বিকালে রাস্তার কুকুরদের খাবার দিতে বের হন ফাতেমা। তাকে দেখামাত্র চারদিক থেকে ছুটে এসে জড়ো হয় প্রাণীগুলো। রাস্তার কুকুর-বিড়ালের সেবার জন্য স্থানীয়ভাবে গড়ে তুলেছেন এভরিথিং ফর অ্যানিমেল নামে সামাজিক সংগঠন। সংগঠনের সদস্যরা কোনো অসুস্থ প্রাণীর তথ্য পাওয়ামাত্রই ছুটে যান সেখানে। প্রাণীটির চিকিৎসা, থাকার ব্যবস্থা, খাবার সবই দেওয়া হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। বর্তমানে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকেও সংগঠনটির কাজ চলছে।
মাটিকাটার তরুণ সমাজকর্মী রুমেল কায়েস জেনি। অসুস্থ-অসহায় মানুষ নিয়ে কাজ করেন। ফাতেমা খানের এভরিথিং ফর অ্যানিমেলে যুক্ত হয়েছেন এই তরুণও। তিনি বলেন, ‘একটা সময় ফাতেমা আপু একাই প্রাণীদের নিয়ে কাজ করতেন। এখন সংগঠনের মাধ্যমে তিনি আমাদের নেতৃত্ব দিয়ে অবহেলিত প্রাণীদের জন্য কিছু করার সুযোগ করে দিয়েছেন।’
ফাতেমা খান বলেন, ‘আমরা যখন দোকানে খেতে যাই, প্রাণীটিও আমাদের কাছে এসে খাবার চায়। কিন্তু আমরা ওদের ভাষা বুঝতে পারি না। খারাপ ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিই। ওদের চোখে ক্ষুধার বার্তা থাকে। আমরা তা দেখি না।’ সমাজের মানুষ যেন এসব প্রাণীকে অত্যাচার না করে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসে, এমনটাই প্রত্যাশা ফাতেমা খানের।