× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

গোবেকলি টেপে

মানুষের তৈরি প্রথম উপাসনালয়

নাসরীন মুস্তাফা

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ১২:৫৯ পিএম

জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লাউস শ্মিডট এখানকার মাটি খুঁড়ে ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার বছর আগেকার নিওলিথিক সভ্যতার স্থাপনা খুঁজে পান।

জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লাউস শ্মিডট এখানকার মাটি খুঁড়ে ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার বছর আগেকার নিওলিথিক সভ্যতার স্থাপনা খুঁজে পান।

তুর্কি শব্দ ‘গোবেকলি টেপে’-এর অর্থ ‘নাভির পাহাড়’। কুর্দি ভাষায় জায়গাটির নাম ‘গিরে মিরাজান’, ‘জিরাব্রেসকে’ও বলা হয়। ১৯৬৩ সালে এই গোবেকলি টেপে হইচই ফেলে দিল বিশ্বময়।জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক ক্লাউস শ্মিডট দলবল নিয়ে এখানকার মাটি খুঁড়ে যিশুখ্রিস্টের জন্মের ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার বছর আগেকার নিওলিথিক সভ্যতার স্থাপনা খুঁজে পান।

২০ একর জমিতে গড়ে তোলা বিশাল পাথরের বৃত্তাকার কাঠামোয় ৫০ ফুট উঁচু পাথরের স্তম্ভ, একে ঘিরে আছে আরও অনেক ছোট আয়তাকার স্থাপনা। ক্লাউস শ্মিডট বলেছিলেন, ‘মানুষের তৈরি প্রথম উপাসনালয় খুঁজে পেয়েছি আমরা।’ বিশ্বের প্রাচীনতম উপাসনালয় না হলেও একে অন্যতম প্রাচীন বলাই যায়। পৃথিবীতে উষ্ণ হিমবাহ যুগ শেষ হয়েছিল সাড়ে ১২ হাজার বছর আগে। 

পরবর্তী কয়েক হাজার বছরে পৃথিবীর তাপমাত্রা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ধীরে ধীরে বেড়েছে বিধায় বাসযোগ্য হয়ে উঠতে থাকে নানা অঞ্চল। গোবেকলি টেপেতে তখন হয়তো শিকারি মানুষ এসেছিল। এরাই চাষাবাদ শুরু করেছিল। এর প্রমাণ যদিও মেলেনি। তবে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার প্রমাণ মিলেছে। আছে জাঁতা, মদ তৈরির সরঞ্জাম, অস্থায়ী বসবাসের ঘর, প্রায় ৬৫০টি খোদাই করা পাথরের থালা ও পাত্র ছাড়াও প্রচুর প্রাণীর হাড় খুঁজে পাওয়া গেছে। 

স্থাপনাটি উপাসনালয় হয়ে ওঠার প্রমাণ কী? এখানে মানুষের কবর পাওয়া যায়নি, পাওয়া গেছে মাথার খুলি, হাড়ের টুকরো। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, প্রাচীন মানুষের উপাসনার প্রয়োজনেই মানুষের মাথার খুলির দরকার পড়েছিল। চারদিকে সাজিয়ে রাখা কিছু খুলিতে অলংকরণ দেখে মনে হয়, এগুলো বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন মানুষের। 

২০১৮ সালে ইউনেস্কো একে ‘মানব-নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপত্যের প্রথম প্রকাশগুলোর একটি’ উল্লেখ করে ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তখনও মানুষ মাটি পুড়িয়ে থালাবাসন বানানোর কায়দা শেখেনি। কৃষিকাজ করতে শিখছে কেবল। সে সময় মানুষের অন্তর্দৃষ্টিতে ধর্মের জন্ম হয়েছিল, এর প্রমাণ এ স্থাপনা। তাহলে কি বলা যায়, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়াতেই ধর্মের উদ্ভব ঘটেছিল? মানুষ কি এ এলাকাতেই প্রথম বসতি স্থাপন করেছিল? এটি কি মানুষের সবচেয়ে পুরোনো সভ্যতা? প্রাগৈতিহাসিক মানুষের মতো এখানেও শিকারি মানুষই এসেছিল। যাযাবর শিকারিরা কেন এখানে বসতি গেড়েছিল? উপত্যকা থেকে ১ হাজার ফুট ওপরে রুক্ষ পাহাড়ের ওপর বসবাসের কষ্ট কেন করেছিল?

অনেক প্রশ্ন, উত্তর মেলেনি। তবে তর্কের ঝড় উঠেছে যখন ক্লাউস শ্মিডট একে মানুষের প্রথম উপাসনালয় বলেছিলেন। কৃষিসভ্যতায় মানুষ উপাসনালয় নির্মাণ করেছিল বলে ধারণা করা হতো। স্টোনহেঞ্জকে বলা হচ্ছিল প্রথম মেগালিথ। এরও ৫ হাজার বছর আগেকার এ স্থাপনা কীভাবে মানুষ বানাল? 

গোবেকলি টেপে তুর্কি শহর উরফা থেকে প্রায় ৬ মাইল দূরে অবস্থিত। স্থাপনার পাথরগুলোর কোনো কোনোটিতে আছে বিমূর্ত নৃতাত্ত্বিক বিবরণ। কোনোটি প্রাগৈতিহাসিক পোশাক দিয়ে সাজানো। বেশিরভাগ পাথরে বন্য প্রাণীর ছবি আঁকা। আছে রহস্যময় আঁকিবুঁকি। 

ইংরেজি ‘টি’ বর্ণমালার মতো বিশাল আকারের স্তম্ভের এক একটির ওজন ৪০ থেকে ৬০ টন। টি আকৃতির স্তম্ভে অদ্ভুত ছবি আঁকা আছে। প্রাণীর শরীরে মানুষের মাথা। খুলিহীন মানুষের ছবিও আছে। ১২ হাজার বছর আগে কোনো এক ধূমকেতু আঘাত হেনেছিল পৃথিবীতে। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের ধারণা, সাগরের পানির উচ্চতা ও তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে মানুষের জীবনযাত্রা সংকটে পড়েছিল। মানসিক অস্থিরতার সঙ্গে শিকার কমে যাওয়ায় নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে শিকার দখলে আনার প্রতিযোগিতা। পাথরের গায়ে খোদাই করে ছবি আঁকা সম্ভব হলো কীভাবে? চকমকি পাথর, ধারাল পাথুরে ব্লেড, তিরের মাথা মিলেছে। এমন ধারণাও প্রকাশ পেয়েছে যে গোবেকলি টেপে উপাসনার জন্যই  বানিয়েছিল মানুষ। 

২০১৪ সাল পর্যন্ত আমৃত্যু গোবেকলি টেপে’র খনন ও গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ক্লাউস শ্মিডট। এরপর ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়, সানলিউরফা জাদুঘর, জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক ইনস্টিটিউট ও তুর্কি প্রত্নতাত্ত্বিক ড. নেকমি কার্ল কাজটি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সানলিউরফা জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে গোবেকলি টেপে থেকে তুলে আনা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ। 

এত দিনে মোট স্থাপনার মাত্র ৫ ভাগ অবমুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। গোবেকলি টেপে’র আশপাশের প্রায় ১০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ২০০টির বেশি ওবেলিস্ক ও আরও ১৫টি উপাসনালয় মাটির নিচে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাজ যত এগোবে ততই নতুন তথ্য মিলবে। কে জানে, মানুষের ইতিহাস একদম নতুন করে লিখতে হয় কি না!

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা