ডে ট্রিপ
ফৌজিয়া হক
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:১৬ পিএম
নবাব ফয়জুন্নেছার বাড়ি।
সেদিন সন্ধ্যায় শচীনদেব বর্মণের বাড়ির বারান্দায় বসে বলছিলাম, নস্টালজিক হওয়ার মতো শহর কুমিল্লা। সকালটা শুরু হয়েছিল নবাব ফয়জুন্নেছার স্মৃতির দিকে তাকিয়ে। ১৮৩৫ সালে জন্ম নেওয়া মানুষটা দেখিয়ে গেছেন কীভাবে এদেশের নারীদের শিক্ষা লাভ করতে হয়! যিনি তার প্রায় পুরো জীবন দিয়ে গেছেন মানুষের ভালোর জন্য।
আসলে এই শহরে এত বেশি দর্শনীয় জায়গা আছে, যার সবগুলো দেখে শেষ করার জন্য চার-পাঁচ দিন সময় যথেষ্ট নয়। তবে পরিকল্পনা করে ভ্রমণ করলে একদিনেও কুমিল্লার অনেক দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসা সম্ভব। আখতার হামিদ খানের ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা বার্ড, সপ্তম শতাব্দীর শেষ সময়ে শ্রীভবদের নির্মাণ করা শালবন বিহার, ১৪৫৮ সালে ধর্ম মাণিক্যর খনন করা ধর্মসাগর জলধারা, শৈশবের সিনেমা দিপু নাম্বার টু-এর সেই পানির ট্যাংকি, ১৯৫৯ সালে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক নামে প্রতিষ্ঠিত আজকের পূবালী ব্যাংক আর ঠিক তার নিচে ১৯৩৯ সালের অভয়াশ্রম ঔষধালয়, নব শালবনে বৌদ্ধমূর্তি।
লিবার্টি সিনেমা হলের লোনাধরা দেয়ালের গায়ে কী লেখা ছিল কে জানে! তবে পুরোপুরি মুছে যাওয়ার প্রতীক্ষায় নীরবে কাঁদছিল সেটা স্পষ্ট। শহরের আরেক প্রান্তে ভিক্টোরিয়া কলেজের রঙিন দেয়াল আর গোমতী নদীর হাত দিয়ে রশি টেনে পার করা নৌকার মাঝি খালার কথা মনে থাকবে অনেক দিন।
সকাল ৭টার মধ্যে ঢাকা থেকে বের হয়ে এক দিনে কুমিল্লা ভ্রমণ সম্ভব। সকাল ৯টার মধ্যে কুমিল্লা বিশ্বরোড নেমে সিএনজিতে সোজা চলে যাবেন শালবন বিহার, জাদুঘর, ভার্সিটি। বেলা ১১টার মধ্যে এগুলো শেষ করে চলে যাবেন বার্ডে। দুপুর ১টা পর্যন্ত বার্ডে ঘুরে দুপুরের খাবার খাবেন ক্যান্ট বোর্ড মার্কেটে। দুপুরের খাবার সেরে যাবেন ইটাখোলা, রূপবান মোড়া। দুপুর ২টার মধ্যে শেষ করবেন। আবার কোটবাড়ী বিশ্বরোড আসবেন। মাইক্রো, লেগুনা করে যাবেন ক্যান্টনমেন্ট, সেখান থেকে অটো করে ইংরেজ কবরস্থান। ইংরেজ কবরস্থান শেষ করে সোজা চলে যাবেন রানীর প্রাসাদ। সেখানে বিকালটা কাটিয়ে ক্যান্টনমেন্ট থেকে ফিরতে পারেন ঢাকা। আর যারা ধর্মসাগর পাড়ে একটা সুন্দর সন্ধ্যা কাটাতে চান তারা লেগুনা করে চলে যাবেন শহরের শাসনগাছা সেখান থেকে অটো করে কান্দিরপাড় ধর্মসাগর পাড়। বোনাস হিসেবে এখানে একটা গির্জা আছে। আর মাতৃভান্ডারের রসমালাই কিনতে চাইলে রিকশা করে চলে যান মনোহরপুর। সেখান থেকে পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড সিএনজিতে যাবেন, সেখান থেকে ঢাকা। এ ছাড়া যেতে পারেন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আর বৌদ্ধসভ্যতার ঐতিহাসিক স্থাপনা-সমৃদ্ধ কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় প্রায় আড়াই একর পাহাড়ি ভূমিতে প্রতিষ্ঠা করা নব শালবন বৌদ্ধ বিহারে।
একনজরে কিছু দর্শনীয় স্থান
বায়তুল আজগর জামে মসজিদ গুনাইঘর (উত্তর) ইউনিয়ন, দেবিদ্বার, কুমিল্লা। গুনাইঘর বায়তুল আজগর সাত গম্বুজ জামে মসজিদটি কুমিল্লা জেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিম কোণে দেবিদ্বার পৌর এলাকায় এবং দেবিদ্বার সদর থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণে গুনাইঘর গ্রামে অবস্থিত। দেবিদ্বার বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশা বা সিএনজিতে যাওয়া যায়। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড) কুমিল্লা শহর থেকে আট কিলোমিটার পশ্চিমে সদর দক্ষিণ উপজেলার কুমিল্লা কোটবাড়ী এলাকায় অবস্থিত। কুমিল্লা শহর থেকে সিএনজিতে যাওয়া যায়। বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ে অবস্থিত। রিকশায় যাওয়া যায়।
ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বুড়িচং উপজেলার কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অবস্থিত। কুমিল্লা শহর থেকে বাস, অটোরিকশা ও সিএনজিতে যাওয়া যায়।শালবন বৌদ্ধ বিহার কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পশ্চিমে সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ী এলাকায় অবস্থিত। কুমিল্লা শহর থেকে সিএনজিতে যাওয়া যায়। কুমিল্লা সেনানিবাস বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি, রিকশায় যাওয়া যায়। শাহ সুজা মসজিদ কুমিল্লা শহরের মোগলটুলী এলাকায় (আদর্শ সদর উপজেলা)। রিকশায় যাওয়া যায়।