প্রকাশ ঋষি
প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ১২:১০ পিএম
ঢাকি প্রকাশ ঋষি
আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা ঋষিপাড়ায়। ফলে বাদ্যের সঙ্গে সখ্য শৈশব থেকেই। আমাদের এই পাড়ায় গড়ে উঠেছে অজস্র বাদ্যবাদক। সাত বছর বয়সেই বাদনে আমার আত্মপ্রকাশ ঘটে। শুরুটা হয় বাবার হাত ধরে। ধীরে ধীরে বাদনে নিজে হয়েছি পরিণত। তবলা, ঢোল কিংবা ঢাক- সবকিছুতে অনায়াসে বোল উঠে হাতে।
দুর্গাপূজার মৌসুমেই আমাদের যা একটু ডাক পড়ে চারদিক থেকে। এছাড়া সারা বছর তেমন কোনো বায়না পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে অন্য কাজ করে জীবন নির্বাহ করতে হয়। একসময় বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠানে নিয়মিত তবলা বাজিয়েছি। টেলিভিশন অনুষ্ঠানও করেছি অল্প-বিস্তর।
অনেক কষ্টে সিলেট শহরের হুমায়ূন রশীদ চত্বরে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলাম। নিজ হাতে তৈরি করতাম ঢাক- ঢোল, তবলা, মৃদঙ্গ। ব্যবসা জমেও উঠেছিল। কিন্তু করোনা মহামারিতে সব বন্ধ হয়ে যায়। ভাটা পড়ে ব্যবসায়। বাধ্য হয়েই বন্ধ করে দিতে হয় দোকানটি। প্রিয় প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে আসি ঋষিপাড়ায়। এখনও অনেকেই শখের বাদ্যযন্ত্রটি মেরামত করতে আমার পুরোনো দোকানটিতে এসে খোঁজ করেন। করোনা মহামারি অনেকের অনেক কিছু বদলে দিয়েছে, থামিয়ে দিয়েছে। এই মহামারি আমার বাদ্যের তাল থামিয়ে দিয়েছে, বদলে দিয়েছে জীবনের সুর।
এখনও ঢাক-ঢোল আর বাদ্যযন্ত্র নিয়েই সময় কাটে দিনের অধিকাংশ সময়। কিন্তু স্ত্রী আর পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে বড় সংসার চালানো বেশ কষ্টকর হয়ে উঠছে দিনকে দিন। ছেলেমেয়েরা সবাই লেখাপড়া করছেন। সাত সদস্যের জীবন চলে ঢাক-ঢোল উপজীব্য করেই।
কাঁধে ঢাক নিয়ে দীর্ঘ সময় বাজানো বেশ পরিশ্রমের। কিন্তু অন্যদের আনন্দ দেওয়ার মধ্যেই নিজের আনন্দ খুঁজে পাই।