× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শত দেশের শত গল্প

যে পথ কোথাও নিয়ে যাবে না

রেজাউল বাহার

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:০৮ পিএম

আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:০৮ পিএম

যে পথ কোথাও নিয়ে যাবে না

সাত মহাদেশের শততম দেশ ভ্রমণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন রেজাউল ও শারমীন দম্পতি। শত দেশের শত গল্প প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর পাঠকের জন্য তুলে ধরেছেন রেজাউল বাহার। আজ থাকছে রাশিয়া, আইসল্যান্ড, ফারো আইল্যান্ডস, বেলারুশ, সার্বিয়া, লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সেন্ট মার্টিন, পর্তুগাল, ওমান, মঙ্গোলিয়া ভ্রমণ নিয়ে সপ্তম পর্ব।

রাশিয়া।

পরাক্রমশালী রাশিয়ার মস্কো, রেড স্কোয়ার, ক্রেমলিন... এখানে আমাদের সংক্ষিপ্ত মুহূর্ত।

রাশিয়া।

যখনই আমি এ জায়গাটির কথা ভাবি, তখনই এটি আমার মাথায় আসে- আপনি যখন রাশিয়ায় থাকেন, তখন আর কিছুই যায় আসে না।

ড্যানিশ রাজতন্ত্রের আওতায় ছোট ছোট ১৮টি দ্বীপ নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত একটি দেশ ফারো আইল্যান্ডস। এখানকার আবহাওয়া বেশিরভাগ মানুষের জন্যই বসবাসের বা ভ্রমণের অযোগ্য। ড্যানিশ রাজতন্ত্রের আওতায় স্বায়ত্তশাসিত একটি দেশ।

অচেনা অপরূপ এক সৌন্দর্যের নামই ফারো।

ফারোতে আমাদের ভ্রমণ অল্প কয়েক দিনের। প্লেনে এখানে আসতে হলে ডেনমার্ক, নরওয়ে অথবা আইসল্যান্ড হয়ে আসতে হবে। ইমিগ্রেশনের ব্যাপারে যা করতে হবে তা ঠিক ডেনমার্কের কপি-পেস্ট। অর্থাৎ ডেনমার্কে যাওয়ার অনুমতি থাকলে সেটাই ফারোতে ঢোকার জন্য প্রযোজ্য। এয়ারপোর্ট থেকে নেমেই গাড়ি ভাড়া করে চলে এলাম পাহাড়ের ওপরে তৈরি এক কটেজে। অনেকটা হিলি এরিয়া হেঁটে হেঁটে উঠতে হয়। ছোট কটেজ, সামনে জানালায় তাকালেই অদ্ভুত সমুদ্রের ছোঁয়া, দূরে আরও কিছু আইল্যান্ড কুঁজ উঁচু করে আছে।

ফারো আইল্যান্ড।

আকাশ মেঘে ঢাকা। সূর্যের ছিটেফোঁটা রূপ কখনও কখনও উঁকি দেয়। বেশিরভাগ দ্বীপ পানির নিচে টানেল দিয়ে সংযুক্ত। একটু দূরের দ্বীপগুলোয় যেতে হয় বোট বা হেলিকপ্টারে। শান্তিময়, অচেনা অপরূপ এক সৌন্দর্যের নামই ফারো। এখানে ঘুরতে এসে শারমীন বলেছিলেন, কখনও যদি তাকে একা থাকার সুযোগ করে দেওয়া হয়, সে থাকবে এই ফারো আইল্যান্ডে।

বেলারুশ

নয় দিনে আমরা তিনটি দেশ (বেলারুশ, সার্বিয়া, লিথুয়ানিয়া) ভ্রমণ করেছি। আমরা ১০ বারের বেশি সোভিয়েত রাজ্যে গিয়েছি। পরাক্রমশালী সোভিয়েত বেলারুশের মিনস্কে তার দুর্দান্ত পায়ের ছাপ রেখে গেছে। বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ শহর। চারপাশে শুধু চমৎকার ও বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষ।

সার্বিয়ার বেলগ্রেড শহর

সার্বিয়ার বেলগ্রেড শহর, জীবন এখানে প্রাণশক্তিতে ভরপুর। সার্বরা গর্বিত মানুষ, তারা সাহসী। তারা যা ভালোবাসে তা-ই করে।

লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসে।

জীবন আপনাকে পেছনে ফেরার পথ দেয় না, তবে ভ্রমণ সেই সুযোগটি করে দেয়। আপনি ইচ্ছে করলে সেই স্থানগুলোয় ফিরে যেতে পারেন যা আপনার মনকে সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করেছে। এতটা ভ্রমণ না করলে কখনোই বুঝতাম না আমি কতটা ভাগ্যবান। আমরা লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসে। ভ্রমণ আশ্চর্যজনক! বিশ্ব বিস্ময়ে ভরা।

এস্তোনিয়া।

বালটিক থেকে ব্ল্যাক সি, গন্তব্য : তালিন, এস্তোনিয়া-রিগা, লাটভিয়া-ওডেসা, ইউক্রেন।

লাটভিয়ায় রেজাউল ও শারমীন।

আটটি রাত, তিনটি দেশ, ছয়টি ফ্লাইট, একটি বাস রাইড, দুটি হোটেল, দুটি এয়ারবিএনবিএস, ১০-এর বেশি উবার রাইড, ১০০ কিমির বেশি হাঁটা, অগণিত রেস্তোরাঁ, নতুন মানুষ দেখা- এ এক দারুণ স্মৃতি।

মঙ্গোলিয়ার ঐতিহ্যবাহী পোশাকে রেজাউল ও শারমীন। 

আপনি যখন মঙ্গোলিয়ায় থাকবেন, তখন ছুটে যাওয়া ছাড়া আর কোনো গন্তব্য নেই। পৃথিবীর সর্ব উচ্চতায় এক মরুভূমি, মঙ্গোলিয়ার গোবি। এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য শূন্যতায় ঘুরে বেড়ানো। এ গোবিতেই ঘর বাঁধে কিছু যাযাবর। বলতে গেলে কিছুই নেই গবাদি পশু বাদে। তাঁবুতে বসবাস। সেখানে দু-চারটা আসবাবপত্র। শুধু বেঁচে থাকা, দিন কেটে যায় শীতল মরুভূমিতে।

মঙ্গোলিয়ার গোবীতে। 

এক যাযাবর পরিবারের সঙ্গে কিছু সময় কাটে। ছোট একটা মেয়ে, কী খুশি আমাদের পেয়ে। ছোটাছুটি চারদিকে। শূন্যতায় এই বাচ্চা মেয়েটি দেখিয়ে দিল কত আনন্দময় জীবন তার। জীবনে আনন্দের জন্য একটা তাঁবু আর সীমানাহীন খোলা প্রান্তর ছাড়া আর কী চাই?

যেন মনে হচ্ছে সৈকত ছুঁয়ে ল্যান্ড করবে বিমান! দ্বীপ রাষ্ট্র সেন্ট মার্টিন (Sint Maarten)

দিনে ১৪ বার দুই দেশ ভ্রমণ। প্রথম দেশ সেন্ট মার্টিন (Sint Maarten), দ্বিতীয় দেশও সেন্ট মার্টিন (Saint Martin)। নাম এক হলেও বানানে কিছুটা তফাত। প্রথমটি ডাচ্‌ উপনিবেশ, দ্বিতীয়টি ফ্রেঞ্চদের। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে মাত্র ৮৭ বর্গকিলোমিটারের এ দ্বীপই দুই দেশ। ভিন্ন পতাকা, ভিন্ন গভর্নমেন্ট, শুধু রাস্তার এপাশ-ওপাশে দুই দেশের দুই পতাকা ছাড়া এর আর কোনো বর্ডার বলে কিছু নেই।

সেন্ট মার্টিনে (Sint Maarten) এয়ারক্রাফট ল্যান্ডিং হয় বিচ ঘেঁষে, ছবি তলায় ব্যস্ত শারমীন।

২০১৯ সালে আমাদের প্রথম ট্রিপ ছিল এ দ্বীপ, এক ঢিলে দুই পাখি। সেন্ট মার্টিনে এয়ারক্রাফট ল্যান্ডিং হয় বিচ ঘেঁষে। আর সেটার জন্যই ছবি তোলায় ব্যস্ত থাকে সবাই। আমরাও করলাম, কোনোমতে একটু ফাঁকা জায়গা বের করে ছবি তো একটা তুলতে হবে।

সমুদ্রের সঙ্গে আকাশের মিতালী, সেন্ট মার্টিন (Saint Martin)। 

ক্যারিবিয়ানের বেশিরভাগ দেশই ট্যুরিজমনির্ভর। বেশিরভাগ ট্যুরিস্টই নর্থ আমেরিকান, কিছু ইউরোপিয়ান। ক্যারিবিয়ানের বেশ কটি আইল্যান্ডে ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় সেন্ট মার্টিনের খরচ বেশ বেশি। হোটেল রুম ১০০ থেকে সহজেই ১ হাজার ডলার প্রতি রাত। আমরা ২০০ ডলার প্রতি রাত মোটামুটি টাইপ একটা হোটেলে ছিলাম। সবচেয়ে ভালো গাড়ি রেন্ট করে ঘুরে বেড়ানো, দিনে ১৪ বার দুই দেশ এভাবেই ভ্রমণ।

পর্তুগাল। 

পর্তুগালের মূল ভূখণ্ডে আমাদের এখনও যাওয়া হয়নি। আমরা গেলাম পর্তুগালের মূল ভূখণ্ড থেকে ৮৫০ মাইল দূরে আটলান্টিক মহাসাগরে নয়টি আগ্নেয়গিরির দ্বীপ নিয়ে গঠিত এজোরেসে। মানুষ যখন এ দ্বীপপুঞ্জে আসে, সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল পাপ। তাদের সেই পাপ ভুতুড়ে রূপ নিয়ে বের হয়ে এসেছিল পাহাড়ের মুখ থেকে। সেটাই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাত। সে হয়তো বহু আগের কথা। এ দ্বীপপুঞ্জ মূলত স্বর্গেরই অনুলিপি। আমরা স্বর্গ থেকে আসিনি, আমরা স্বর্গেই আছি। নরকে যাওয়ারও প্রয়োজন নেই, নরকও এখানে। এ দুই-ই মানুষের তৈরি, এ দুইয়ে আমাদের বসবাস।

ওমান।

আইসল্যান্ডে মুগ্ধ লেখক।

ইউরোপে গেলে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে বা আগে আইসল্যান্ড যাওয়ার প্ল্যান করুন। এত ল্যান্ডস্কেপের ভেরিয়েশন এত অল্প জায়গায় আর বোধ হয় কোথাও পাওয়া যাবে না। অনেক রিভিউ পড়ার পর সবাই যখন সাজেস্ট করেছিল সাত থেকে দশ দিন দরকার আইসল্যান্ড দেখার জন্য, আমি প্ল্যান করলাম চার দিনে পুরা আইসল্যান্ড রোড ট্রিপ করব।

স্বর্গীয় রূপ যেন ধরা দেয় আইসল্যান্ডে।

তিন দিনে পুরো আইসল্যান্ডের রিং রোড ও গোল্ডেন সার্কেল শেষ করলাম। আইসল্যান্ড আপনাকে কখনোই হতাশ করবেনা। খোলা প্রান্তরে দিগন্ত বিস্তৃত পথ চলতে চলতে হারিয়ে যাবেন আপনি। কিন্তু এই পথ আপনাকে কোথাও নিয়ে যাবেনা।

আইসল্যান্ডের পথের যেন কোন গন্তব্য নেই, দিগন্ত বিস্তৃত খোলা প্রান্তরে মুগ্ধতার শেষ নেই।

ছবি : লেখকের সংগ্রহ থেকে


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা