ডা. শেফা খন্দকার
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:২৪ পিএম
ওটস পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ একটি শস্য। এতে প্রচুর ফাইবার ও অ্যাভিন্যানথ্রামাইড থাকে, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশ কার্যকর। জেনে নিন ওটসের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে-
বর্তমান বিশ্বের জনপ্রিয় ব্রেকফাস্ট ওটস। প্রায় চার হাজার বছর ধরে এটি চাষ হয়ে আসছে। আগে গবাদিপশু ও ঘোড়ার খাবার হিসেবে ইউরোপ-আমেরিকায় ব্যাপক ব্যবহৃত হতো। ওটস চাষে এখন রাশিয়া, কানাডা ও পোল্যান্ড এগিয়ে আছে। বেশ কয়েক রকমের ওট পাওয়া যায়Ñ ওটস গ্রোটস একদম প্রথম পর্যায়ের ওট, যা রান্না হতে অনেক সময় লাগে। এজন্য মানুষ স্টিল কাট, রোলড, কুইক বা ইনস্ট্যান্ট ওট বেশি খায়।
পুষ্টি উপাদান : ওটের পুষ্টির গঠন বেশ সুষম। এটি কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবারের খুব ভালো একটি উৎস। অন্যান্য খাদ্যশস্যের তুলনায় এতে আছে অনেক বেশি প্রোটিন ও ফ্যাট। আধা কাপ (৭৮ গ্রাম) ওটসে আছে দৈনন্দিন চাহিদার ১৯১ শতাংশ ম্যাংগানিজ, ৪১ শতাংশ ফসফরাস, ৩৪ শতাংশ ম্যাগনেশিয়াম, ২৪ শতাংশ কপার, ২০ শতাংশ আয়রন, ২০ শতাংশ জিঙ্ক, ১১ শতাংশ ফোলেট, ৩৯ শতাংশ ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন), ১০ শতাংশ ভিটামিন বি-৫ (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড)। এ ছাড়া আছে ৫১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১৩ গ্রাম প্রোটিন, ৫ গ্রাম ফ্যাট, ৮ গ্রাম ফাইবার এবং সামান্য কিছু ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি-৬ (পিরিডক্সিন), ভিটামিন বি-৩ (নায়াসিন)। এত কিছুর পরও ক্যালরি মাত্র ৩০৩।
ওটসের স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনে নিন-
ওজন কমাতে সহায়ক : ওটস খেলে দীর্ঘসময় পেট ভরা থাকে। ফলে চট করে খিদে পায় না। এর কারণ হলো এতে থাকা গ্লুকোন ও পেপটাইডের বন্ধন। এই দুই উপাদান হলো ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে : ওটসে রয়েছে বেটা-গ্লুকোন নামক বিশেষ ধরনের ফাইবার। যা শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন তিন গ্রাম ওটস খেলে তা প্রায় আট থেকে দশ শতাংশ পর্যন্ত কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক।
হার্ট ভালো রাখে : ওটসে রয়েছে বিশেষ একধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান; যা শরীরের ভালো কোলেস্টেরল অর্থাৎ এলডিএলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে : নিয়মিত ওটস খেলে অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার কারণে হাইপার টেনশনের ঝুঁকি কমে যায়।
ইমিউনিটি বাড়ায় : ওটসের বেটা-গ্লুকোন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেমকে বৃদ্ধি করে। শরীরে ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন প্রতিরোধেও সাহায্য করে ওটস।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে : ডায়াবেটিস রোগীরাও তাদের খাদ্যতালিকায় শামিল করতে পারেন ওটস। লো ক্যালোরি ও সুগার ফ্রি হওয়ায় ডায়াবেটিসের রোগীরা অনায়াসেই এটি ব্রেকফাস্টে রাখতে পারেন।
হজমে সাহায্যকারী : হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ওটস। যারা কোষ্ঠকাঠিন্য বা হজমের সমস্যায় ভুগছে, তাদের জন্য ওটস দারুণ উপকারী। কেননা এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তা ছাড়া লিভারের জন্যও ওটস উপকারী।
ব্রেস্ট ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে : ওটের বিদ্যমান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট ব্রেস্ট ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারী প্রতিদিন এক বাটি ওট খায়, তাদের ভেতর ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি ৪১ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়। আর এটি পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। এসব অঙ্গ সুস্থ থাকলে কোলন ক্যানসার হওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকে না।